শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ || ১২ পৌষ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যেসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

২০:৫০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৪৯৯

যেসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করবেন

ডেঙ্গুর জ্বর নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত। এই সময় ডেঙ্গু জ্বর বেড়ে যায়। সাধারণত, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কম নয়। চিকিৎসকরা বলছেন সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারলে এ রোগে মৃত্যু ঝুঁকি খুব একটা থাকে না। কিন্তু রোগটিকে অবহেলা করলে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। কোন শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে, জেনে নিন।

কখন হাসপাতালে যেতে হয়:

ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন তা নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’।

প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।

‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।

‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।


ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জেনে নিন:

১. ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী?

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

২. জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সঙ্গে-সঙ্গেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ।

তিনি বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সঙ্গে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।

৩. বিশ্রামে থাকতে হবে

সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।

৪. কী খাবেন?

প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

৫. যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়

অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

৬. প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা। তিনি বলেন, প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

৭. ডেঙ্গুর জ্বরের সময়কাল

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরও এগিয়ে এসেছে। এখন জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।

৮. এডিস মশা কখন কামড়ায়

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।

৯. পানি জমিয়ে না রাখা

অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলছেন, এডিস মশা 'ভদ্র মশা' হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে। এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।

যেসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করবেন

প্রথম কথা হলো, জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেকোনো জ্বরই যে ডেঙ্গু, তা-ও নয়। ডেঙ্গু হয়েছে ধরে নিয়ে নিজে নিজে পরীক্ষা করাতে গেলে জ্বরের অন্য সাধারণ কারণ, যেমন নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সংক্রমণ, টাইফয়েড, ফ্লু ইত্যাদি অজানা থেকে যায়। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ কথা আরও বেশি প্রযোজ্য। পরীক্ষার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর লক্ষণ, উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত। তাই আগে চিকিৎসককে বুঝতে দিন।

দ্বিতীয়ত, ডেঙ্গু জ্বরে প্রথম দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কাজেই নিজে নিজে পরীক্ষা করালে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে চিকিৎসককে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে ঠিক কবে প্রথম জ্বর এসেছিল, মনে রাখুন। জ্বরের একেবারে প্রথম দিন থেকেই ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ হওয়ার কথা। তবে চতুর্থ বা পঞ্চম দিন থেকে এটি আবার নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই যদি জ্বর চার-পাঁচ দিনের বেশি হয়ে যায়, তাহলে আর এই পরীক্ষা করে লাভ নেই। সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট করা যায়। এ সময় এটি পজিটিভ আসবে। আবার ৯-১০ দিনের মাথায় এটিও নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তখন আইজিজি অ্যান্টিবডি পজিটিভ দেখায়। এই বিষয়গুলো জটিল, তাই কখন কোনটা করতে হবে, সে সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দিন।

তৃতীয়ত, ডেঙ্গু এনএস১ নেগেটিভ হলেই যে ডেঙ্গু হয়নি, তা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা কঠিন। লক্ষণ, উপসর্গ ও অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেকে একদিন একটা ল্যাবে এনএস১ পজিটিভ দেখে হয়তো পরদিন বা দুদিন পর আরেকটা ল্যাবে গিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট পান। এতে আরও বিভ্রান্তিতে পড়েন তাঁরা। মনে রাখতে হবে, এনএস১ পরীক্ষা প্রথমে পজিটিভ এবং দু-এক দিন পর নেগেটিভ হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়।

চতুর্থত, ডেঙ্গুর অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডির সঙ্গে অন্যান্য অনেক পরীক্ষা আছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন শ্বেতরক্তকণিকা, হিমাটোক্রিট, অণুচক্রিকা, রক্তের অ্যালবুমিন, যকৃতের এনজাইম এসজিপিটি ইত্যাদি। শুধু অ্যান্টিজেন টেস্ট করালে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অজানাই থেকে যেতে পারে।


 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank