শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

করোনাভাইরাস

মহামারিগুলো সাধারণত কীভাবে শেষ হয়?

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১২:০৫, ২৬ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১২:০৭, ২৬ অক্টোবর ২০২০

৩১১৪

করোনাভাইরাস

মহামারিগুলো সাধারণত কীভাবে শেষ হয়?

করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকেই সবার একই প্রশ্ন। কীভাবে এবং কখন এই মহামারী শেষ হবে। ভাইরাসের প্রভাব কমাতে পৃথিবীব্যাপী নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনেক দেশই সম্পূর্ণ লকডাউনে গেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে এবং মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ দিয়ে ধীরে ধীরে সব প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে বিশ্বজুড়ে আগের চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসে।  

কোনো পদক্ষেপই কাজ না করায় ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেই ধরে নিচ্ছে মানুষ। এদিকে ভ্যাকসিন কবে আসবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমতাবস্থায় দেখে নেয়া যাক অতীতের মহামারিগুলো কীভাবে দূর হয়েছে বা আদৌ কি দূর হয়েছে? আর সে নিয়ম কি করোনায় কাজ করবে? ভ্যাকসিন ছাড়া আর কোনো বিকল্প আছে করোনা প্রতিরোধের?

অন্য মহামারীর সাথে করোনার প্রধান পার্থক্য বিচার করলে দেখা যায় আগের মহামারিগুলো ছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয়। কিন্তু করোনা, ফ্লু এর চেয়ে অনেকাংশেই ভিন্ন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য গবেষণার জাতীয় ইন্সটিটিউটের গবেষক এবং কিংস কলেজের লেকচারার ড. নাথালি ম্যাকডারমট সেই আলাদা বৈশিষ্টগুলোকেই তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, করোনো পুরোপুরি ভিন্ন। কেননা অন্য মহামারির তুলনায় করোনা অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ আক্রান্তও হয় অনেক দ্রুত। মহামারির শুরুর পর্যায়ে ইবোলার ক্ষেত্রে দেখা যেতো একজন মানুষের শরীরে ২১ দিন পর্যন্ত উপসর্গ ধরা পড়তো না। আর উপসর্গ দেখা না দেয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তি থেকে অন্য কেউ আক্রান্ত হতোনা।

অথচ উপসর্গ না থাকলেও আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে করোনা ছড়াতে পারে কিনা সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট ধারনা দিতে পারেননি কোনো গবেষকই।

করোনা শনাক্ত করাই যেহেতু কঠিন তাই অন্য মহামারির সফলতা দিয়ে এটাকে দূর করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ড. জুলিয়ান টাঙ বলেন, বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্টের কারনে করোনা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। কেননা এই রোগের আগে থেকে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা মানব শরীরে নেই। যখন পৃথিবীর সবাই আক্রান্ত হবে তখন করোনা নিজ থেকেই অকার্যকর হবে। তবে তা মারা যাবেনা বরং মানব শরীরে থাকবে।

তিনি উদাহরণস্বরূপ স্পেনিশ ফ্লু দেখান, ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত স্পেনিশ ফ্লুতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৯২০ সালের দিকে ধীরে ধীরে মৃত্যু কমে মহামারী বন্ধ হলেও সেই ফ্লু মানব শরীরে থেকে যায়। ১৯৫৭ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন জাত আসার পর তা দূর হয়। এই বিষয়টি নিয়ে এখনও গবেষণা করা হচ্ছে কীভাবে একটি ভাইরাস অন্যটির স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। তবে মানুষের জন্য সুখবর ছিলো একবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে আর স্পেনিশ ফ্লুর ভয় থাকতোনা।

কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছেনা করোনার ক্ষেত্রে।  কেননা কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও তা দীর্ঘদিন পর আর কার্যকর হয়না। ছয়মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই আবার সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হচ্ছেন।  

এছাড়া কন্টাক ট্রেসিং করে সফল না হওয়ায় সংক্রমণ কমাতে মাস্ক, সেনিটাইজার করার কথা বলা হচ্ছে। স্পেনিশ ফ্লুর ক্ষেত্রেও তখন একই ধরণের নিয়ম করা হয়েছিলো। কিন্তু কীভাবে স্পেনিশ ফ্লু দূর হলো তা নিশ্চিত না হওয়ায় এটাকেই সফলতার কারণ বলছেন না গবেষকরা।

এদিকে কন্টাক ট্রেসিং করে মহামারী দূর করার সফলতা আছে। ১৮ শতকের গুটিবসন্ত দূর করা হয়েছিল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগেই। তা সম্ভব হয়েছিল ট্রেসিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের মতো পদক্ষেপের ফলে। গুটিবসন্তই একমাত্র ভাইরাস যা মানব শরীর থেকে সম্পূর্ণ দূর করা সম্ভব হয়েছে।

তবে করোনার ক্ষেত্রে এমন সফলতাও প্রায় অসম্ভব। কেননা ২০২০ এর জনসংখ্যা গত শতকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ট্রেসিং করাও পুরোপুরি সম্ভব না।

এরও আগে ব্লাক ড্যাথ নামে এক মহামারীতে মাত্র চার বছরে ২০ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিলো। ১৩৪৭ সালের এই মহামারী সারাতেই প্রথম কোয়ারেন্টাইন ধারণা আসে। রোগ থেকে বাঁচতে তখন মানুষজন ৩০ দিনে জন্য নৌকায় চড়ে সমুদ্রে অবস্থান করা শুরু করে। পরবর্তীতে আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়। এরকম দীর্ঘদিন ধরে চলার পর মহামারি দূর হয়। তখন অবশ্য কোয়ারেন্টাইন নাম ছিলনা। এধরণের বিচ্ছিন্নতাকে বলা হতো ট্রেন্টিনো।

কিন্তু করোনা শুধু মানুষের মাঝেই বেঁচে থাকেনা বরং কাপড় থেকে শুরু করে ঘরের দরজাতেও থাকতে পারে। তাহলে প্রশ্ন আসে ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত কি করোনা শেষ হবে? মানুষি কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? নিজে নিজেই করোনার শক্তি খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা কি আছে?

এই প্রশ্নে উত্তরে ড. ম্যাকডারমট বলেছেন, যদি কোনো ভাইরাসের পুনরুৎপাদন সংখ্যা এক এর নিচে নেমে যায় তবে ভাইরাস নিজে নিজেই শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু করোনায় জিন বারবারই পরিবর্তন হয়। এমনকি একই মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন জিনও দেখা যায়। এমন অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে পুনরুৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ করারও সুযোগ নেই।

জানুয়ারীর তুলনায় এখন মানুষ করোনা সম্পর্কে আরও বেশি অবগত হলেও করোনা এখনও রহস্যই হয়ে আছে। তার গতিপ্রকৃতিও অনেকটা অনিশ্চিত। বর্তমানে কেউই জানেনা কখন একটি নির্ভরযোগ্য ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। যদি নিকট ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা না যায় তবে কতদিন এই ভাইরাস স্থায়ী হবে? 
ড. নাথালি ম্যাকডারমট বলেন, অতীতের মহামারি ও ভাইরাস গবেষণা করে দেখা যায় অনেক ভাইরাস এখনও জীবিত আছে। করোনও এমনটা থাকবে। আর নিজ থেকেই তার প্রভাব কমে আসলেও ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে ভাইরাসটি পরবর্তীতেও দেখা দিতে পারে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
স্পটলাইট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত