বিড়াল ভয়ংকর!
বিড়াল ভয়ংকর!
সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও জীবজন্তু ছাড়া চলতে পারে না মানুষ। হয়তো জীবজন্তুও তাই। শুরু হয় প্রাণী প্রেম। প্রাণী পোষা। ধারণা করা হয় মানুষ বিড়ালকেই প্রথম পোষ মানিয়েছিল। আজও অনেকে শখ করে কুকুর-বিড়াল পুষে থাকেন।
তবে এই শখের বিড়ালপ্রীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কিছু অপ্রীতিকর বিষয়। বিড়াল থেকে যে রোগটা ছড়ায় তা বিপদজনক। রোগটার নাম টকসোপ্লাজমসিস। যা গর্ভপাত ঘটায়। যেসব রোগ পশু থেকে মানুষের বা মানুষ থেকে পশুতে সংক্রমিত হয় তাকে জুনোসিস ডিজিস বলে। টকসোপ্লাজমসিস অসুখটা এ ধরনের।
টকসোপ্লাজমসিস নামে এক ধরনের এককোষী পরজীবী রয়েছে, যা এ রোগ সৃষ্টির কারণ। টকসোপ্লাজমসিস পরজীবী জীবাণু সুস্থ বা অসুস্থ সব ধরনের বিড়ালের মুখে এবং মলমুত্রে থাকে। বিড়ালের শরীরেও লেগে থাকে এই জীবাণু। খাবার-পানীয়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে। রোগ হলে মহিলাদের বার বার গর্ভপাত হয় বলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু রোগতত্ত্বের গষেক ড. বার্টার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ রোগের কারণে মৃত শিশু জন্ম নিতে পারে। পুরুষদের মাথায় সিস্ট হতে পরে। শিশুরা বিড়ালের সঙ্গে একান্ত হলে তাদের লিম্ফ গ্লান্ডস ফুলে গিয়ে জ্বর হয়। প্লীহা বড় হয়ে যায়।’
বিজ্ঞানীর জানিয়েছেন, রোগটা সরাসরি বিড়াল থেকে না এলেও এরদ্বারা একান্তে থাকা হাঁস, মুরগী, গবাদি পশুর কাঁচা বা আধাসিদ্ধ মাংস থেকেও মানুষের শরীরে আসতে পারে। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা কোন অঙ্গ অন্য কোন শরীরে প্রয়োগ করলে তারও রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ রোগ চিহ্নিত হলে চিকিৎসার পাশাপাশি সতর্কতা ও পরিচ্ছন্ন নিয়মানুবর্তিতাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হয়। যেমন বিড়ালের বিছানা বা খাবার আলাদা রাখতে হবে। মাঝে মাঝে বিড়ালকে পরজীবীনাশক ভ্যাকসিন খাওয়াতে হবে। সবসময় নিজ বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে হবে। অন্যদিকে রক্তের প্রয়োজন হলে গৃহীত রক্তেও এ রোগাটা রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে তবেই দিতে হবে। সুতরাং শখ যদিও আনন্দের তবুও তা যেনো সর্বনাশের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
এদিকে পোষা প্রাণীর হাত ধরে সংসারের মধ্যে অবাঞ্ছিত করোনাভাইরাস প্রবেশ করা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে বিশ্ববাসীর। নিউ ইয়র্কেরই দু’টো আলাদা বাড়ির দু’টো বিড়াল করোনা পজিটিভ বলে জানা যায়। প্রাথমিক ধারণা, মানুষের শরীর থেকে বিড়ালের প্রথম সংক্রমিত হয়েছে। তবে কি পোষা প্রাণীরাও ছড়াতে পারে করোনা সংক্রমণ? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে চীন। গবেষকদের মতে, যদিও এখন পর্যন্ত তেমন ব্যাপক কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে এমনটা যে হবে না, তা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা এক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আপনি আক্রান্ত হলে পোষ্য বিড়াল থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। উল্টোটা হলেও একই বিষয় প্রযোজ্য। আর আপনিই যদি তার একমাত্র মালিক হন, তাহলে তার দেখ-ভালের আগে ও পরে অবশ্যই কুড়ি সেকেন্ড ভালভাবে হাত ধুয়ে নেবেন এবং মাস্ক পরে থাকবেন।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?