দায়িত্ব থেকে সরছেন ড. ফাউসি, শুরু করবেন ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়
দায়িত্ব থেকে সরছেন ড. ফাউসি, শুরু করবেন ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন ড. অ্যান্থনি ফাউসি। কোভিড-১৯ এর পর যাকে এক নামেই চেনে গোটা বিশ্ব। এই ডিসেম্বরেই তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস এর পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দেবেন।
ফাউসি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি তার ক্যারিয়ারের 'নতুন অধ্যায়' শুরু করতে যাচ্ছেন।
সোমবার সকালে ফাউসিকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
৩৮ বছর ধরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস এর সঙ্গে রয়েছেন এই খ্যাতিমান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ।
৮১ বছরের এই চিকিৎসকের তরফ থেকে আসা নতুন ঘোষণা একেবারেই যে অপ্রত্যাশিত ছিলো তা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তিনি এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, অবসরে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
রোববার সন্ধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে ফাউসি বলেন, বাস্তবিক অর্থে একে অবসরে যাওয়া বলা যাবে না। এখন তিনি নিজেকে নিয়োজিত করবেন লেখালেখি ও ভ্রমণে। আর তার মাধ্যমে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করবেন সরকারি সেবায় সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য।
"এখনো যেহেতু স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ভালো আছি, এখনো আমি যথেষ্ট এনার্জেটিক, আর আমি যথেষ্টই আন্তরিক। সুতরাং আমি কেন্দ্রীয় সরকারের বলয়ের বাইরে গিয়ে কিছু কাজ করতে চাই।"
তিনি আরও বলেন, কর্মজীবনে গণস্বাস্থ্য ও সরকারি সেবাকাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই।
এদিকে সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক বিবৃতিতে ড. ফাউসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, "তিনি ছিলেন এক আত্মনিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা আর বুদ্ধিমত্তা ও অনুধাবনগুলো ব্যবহারের এক দক্ষ হাত।
কোভিড-১৯ এর আগে জিকা ভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়েছিলো তখন সে সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও অ্যান্থনি ফাউসি এক সঙ্গে কাজ করেছেন, সে কথাও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট।
বাইডেন বলেন, ড. ফাউসির অনেক অবদানের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে গণস্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হয়েছে এবং অনেক প্রাণ বাঁচিয়ে রাখা গেছে।
গণস্বাস্থ্য নীতিতে এত দীর্ঘ সময় ধরে অবদান রাখার নজির আর খুব কম চিকিৎসা বিজ্ঞানীর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। ড. অ্যান্থনি ফাউসি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথে যোগ দেন ১৯৬৮ সালে। লিন্ডন জনসন ছিলেন সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৪ সালে তিনি দায়িত্ব পান স্বাস্থ্য দফতরের সংক্রামক রোগ দফতরের পরিচালক হিসেবে। তখন যুক্তরাষ্ট্র লড়াই করছিলো এইচআইভি এইডসের বিরুদ্ধে।
রোনাল্ড রেগান থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাত জন প্রেসিডেন্টকে উপদেশ দিয়ে আসছেন ড. অ্যান্থনি ফাউসি। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে এইচআইভি এইডস প্রতিরোধে বৈশ্বিক কর্মসূচি তৈরি তার অন্যতম কাজ ছিলো। পিইপিএফএআর নামের ওই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের ২১ মিলিয়ন মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। জর্জ ডব্লিউ বুশের বাবা প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কে ড. ফাউসিকে 'অ্যা হিরো' বলে উল্লেখ করেছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি ভূষিত হন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডাল অব ফ্রিডমে।
২০২০ সালে যখন করোনা ভাইরাস অতিমারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে তখন গোটা বিশ্বের কাছেই একটি নাম পরিচিত হয়ে ওঠে- ড. ফাউসি। তখন অবশ্য রাজনীতির নোংরামির শিকার হন এই বিশ্ববরেণ্য চিকিৎসক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও তা ছিলো অসম্ভব কারণ ড. ফাউসির নিয়োগ রাজনৈতিক ছিলো না। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলরা ড. ফাউসিকে লকডাউন আর মাস্ক এই প্রতীকে চিহ্নিত করতে পছন্দ করেন, কারণ তারা বরাবরই ছিলেন এর বিপক্ষে।
সেবার কেনটাকির রিপাবলিকান সেনেটর র্যান্ড পলের সঙ্গে তিক্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেনেটর পল ড. ফাউসিকে এই অপবাদ দিয়েছিলেন, তার ইনস্টিটিউট থেকে চীনে গবেষণার তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে, যে চীন থেকেই শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাস। ড. ফাউসি এই বক্তব্যের পর স্পষ্ট করে সেনেটর পলকেই 'মিথ্যাবাদী' বলে উল্লেখ করেছিলেন। 'যদি কেউ এখানে মিথ্যাচার করে থাকে, সেটা সেনেটর আপনিই" বলেছিলেন ড. ফাউসি।
তখনই অবশ্য ড. ফাউসি একবার বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পর তিনি এই দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। কিন্তু পরে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারেননি। আর তার উপদেষ্টা হিসেবে থেকে যাই। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সুতরাং আমি একটি বছর থেকে গেলাম, এখন ভাবছি চলতি বছরের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। এখন আমি ভাবছি আমার আরও কিছু করার রয়েছে। সেই কাজগুলোতেই হাত দেবো।
অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ ইন্সটিটিউট ছাড়াও ড. ফাউসি একটি ইমিউনোলজি ল্যাবরেটরির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ওই দায়িত্বটিও তিনি ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। ফাউসি বলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তগুলো প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জানিয়েছেন, এবং তিনি সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। এবং খুশি রয়েছেন।
ড. ফাউসি অবশ্য অবসরের কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখের কথা জানাননি। আগামী ২৪ ডিসেম্বর তিনি ৮২ বছরে পা রাখবেন। তিনি বলেন, শরত শেষে শীত যখন এসে যাবে যুক্তরাষ্ট্র করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে একটু স্বস্তির জায়গায় পৌঁছে যাবে, যদিও তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ফাউসি বলেন, এখনো দিনে ৪০০ জন করে মৃত্যুবরণ করছে, এতে খুশি হতে পারছি না। আমাদের আরও ভালো কিছু করা দরকার। সুতরাং কোভিড নিয়ন্ত্রণে আমরা সন্তুষ্ট এমন কথা আমি বলতে পারছি না। তবে আমি আশা করছি, আসছে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটবে।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- করোনাভাইরাস
দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতালগুলো - ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট গুটিবসন্তের মতো সংক্রামক, ছড়াচ্ছে ভ্যাকসিনেটরাও
- পুরোপুরি না সেরেই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প
করোনাকে একদম ভয় পাবেন না! - মসজিদ-মন্দিরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলো সরকার
- করোনা বিশ্ব ব্রিফ: নতুন নতুন সংক্রমণে কারফিউ, লকডাউন
- ভালো চিকিৎসা পেলে বেঁচে যেতাম, মোদিকে ট্যাগ দিয়ে অভিনেতার মৃত্যু
- করোনাভাইরাস
মহামারিগুলো সাধারণত কীভাবে শেষ হয়? - টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন
যারা নিলেন করোনার প্রথম ভ্যাকসিন - ভ্যাকসিন পরীক্ষায় বাংলাদেশের কাছে টাকা চাইছে সিনোভ্যাক
- চিকিৎসকসহ ৮৮৯০ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত