সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যেভাবে অর্থ পেয়ে থাকে হামাস

সাতরং

২৩:১০, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

২৭২

যেভাবে অর্থ পেয়ে থাকে হামাস

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধা গোষ্ঠী হামাস বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের বন্ধু দেশগুলোর কাছে থেকে সহায়তা পেয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে তাদের একটি আর্থিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর মধ্যে নগদ অর্থ গাজায় পাঠাতে তারা টানেল ব্যবহার করে। কিছু ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য তারা এটা করে থাকে। বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের বরাতে এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

৭৫ বছরের সংঘাতের মধ্যে গাজায় সবচেয়ে বেশি বোমাবর্ষণ করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ড শাসন করে হামাস। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ওই সব তহবিলের অর্থ পাওয়া তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

রয়টার্স জানায়, সপ্তাহখানেক আগে ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছিল যে তারা বার্কলেস ব্যাংকের একটি হিসাব জব্দ করেছে। যেটি হামাসের অর্থ উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসাবও বন্ধ করেছে, যার মাধ্যমে দানের অর্থ জোগাড় করা হতো। কিন্তু কতগুলো হিসাব কিংবা কী পরিমাণ অর্থ জব্দ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে তারা কিছু বলেনি।

ম্যাথু লেভিট নামে সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, হামাসের ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেটের বড় অংশ আসে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর করারোপ থেকে। বাকি অর্থ আসে ইরান ও কাতারের মতো বিভিন্ন দেশ এবং নানা রকম দাতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে।

গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, হামাস উপসাগরীয় দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এছাড়া, তারা ফিলিস্তিনি নাগরিক, বিভিন্ন দেশে বাস করা লোকজন ও হামাসের প্রতিষ্ঠা করা নিজস্ব দাতব্য সংস্থা থেকে অনুদান পায়।

তবে হামাস অতীতে বলেছে, তাদের দাতাদের ওপর আর্থিক বিধিনিষেধ আরোপ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈধ আন্দোলন নিষ্ক্রিয় করার একটি চেষ্টামাত্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো কিছু দেশ হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি এড়াতে ক্রমবর্ধমানভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি, ক্রেডিট কার্ড বা বানিজ্য চুক্তি ব্যবহার করছে বলে মনে করেন ম্যাথু লেভিট ।

ব্লকচেইন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান টিআরএম ল্যাবস বলছে, যেসব সংঘাতে হামাস জড়িত ছিল, সেসব সংঘাতের পর ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। ২০২১ সালের মে মাসের সংঘাতের পর হামাস–নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ক্রিপ্টো ঠিকানায় চার লাখ ডলারের জোগান দেওয়া হয়েছিল।

তবে টিআরএম বলছে, গত সপ্তাহের সংঘাতের পর থেকে হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত সমর্থকেরা মাত্র কয়েক হাজার ডলার ক্রিপ্টোর মাধ্যমে দিয়েছে।

টিআরএমের মতে, দানের পরিমাণ অল্প হওয়ার একটা কারণ হতে পারে যে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত এগুলো শনাক্ত করছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঠিকানা থেকে ইসরায়েল যেসব ক্রিপ্টোকারেন্সি জব্দ করেছে, তার মূল্য ‘লাখ লাখ ডলার’।

২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ইসরায়েল ১৯০টি ক্রিপ্টো হিসাব জব্দ করেছে। তাদের অভিযোগ, এগুলো হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।

জাহাজ ও ছদ্ম কোম্পানি
ক্রিপ্টো বা যেকোনো মাধ্যমেই হোক, হামাসের মিত্ররা গাজায় অর্থ পাঠানোর পথ জানে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ইরান প্রতিবছর হামাস ও বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে ১০ কোটি ডলার দেয়। যেসব পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে ছদ্ম কোম্পানির ব্যবহার, জাহাজের ভাড়ার জন্য লেনদেন ও মূল্যবান ধাতুর ব্যবহার। এ বিষয়ে ইরান তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তুরস্ক থেকে শুরু করে সৌদি আরব পর্যন্ত এমন কিছু গোপন কোম্পানি হামাস প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা ৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিচালনা করে। গত বছরের মে মাসে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ইরান হামাসকে অস্ত্র সরবরাহ করে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে ইসরায়েল। অপরদিকে তেহরান বলছে, তারা সবসময় সংগঠনটিকে নৈতিক ও আর্থিক সমর্থন দেয়। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইরান। দেশটি নিজেকে মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে মনে করে।

কাতারের অর্থ
এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে গাজায় শত শত কোটি ডলার দিয়েছে কাতার। একসময় কাতার গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা এবং গরিব পরিবার ও হামাস পরিচালিত সরকারের কর্মচারীদের জন্য প্রতি মাসে তিন কোটি ডলার দিত।

কাতারের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, কাতার প্রত্যেক ফিলিস্তিনি পরিবারকে ১০০ ডলার করে দিচ্ছে। এছাড়া দিনের আরও বেশি সময় যেন বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, সে জন্যও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর ‘স্থিতিশীলতা রক্ষা ও তাদের জীবনমান ধরে রাখতে’ কাতার সহায়তা করছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাতারে রয়েছে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে কাতার বেশ জটিল সমীকরণ মেনে কাতার তালেবান ও এ ধরনের গোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়। আবার তারা কোনো ধরনের বিবাদ হলে তা মেটানোর কাজও করে কাতার।

একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজার জন্য কাতারের অর্থায়ন আসলে ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে যায়। কাতার থেকে আর্থিক সহায়তা ইসরায়েলে ইলেকট্রনিকভাবে স্থানান্তরিত হয়। ইসরায়েলি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা নগদ অর্থ সীমান্ত দিয়ে গাজায় নিয়ে যাচ্ছেন।

সরাসরি গাজার দরিদ্র পরিবার এবং সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং প্রতিটি পরিবার বা ব্যক্তিকে তাদের নামের পাশে স্বাক্ষর করতে হবে যে তারা নগদ পেয়েছে। সেই শিটের একটি কপি ইসরায়েলে, একটি জাতিসংঘে এবং একটি কাতারে যায়।

কাতারের কর্মকর্তা বলেন, গাজা ভূখণ্ডে তাদের সহায়তা ইসরায়েল, জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি গাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কাতার জ্বালানি সংগ্রহ করেছে ইসরায়েল থেকে। এ ছাড়া দেশটি মিসর থেকে তেল সংগ্রহ করে হামাসকে দিয়েছে। যাতে এই তেল বিক্রি করে সেই অর্থ বেতন হিসেবে দেওয়া যায়।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের স্টিভেন রেইমারের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে হামাস যে অর্থ পায়, তাতে আরও বিধিনিষেধ দেওয়ার চেষ্টা হলে তা খুব সীমিত সাফল্যের মুখ দেখবে। তাদের আর্থিক কৌশল এসব চেষ্টাকে বোকা বানানোর ক্ষমতা রাখে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank