২০২০: দাপট দেখিয়েছে যে শব্দগুলো
২০২০: দাপট দেখিয়েছে যে শব্দগুলো
ভাষা ও শব্দ প্রবহমান নদীর মতো, যার হাজারো বাঁক। বাঁকে বাঁকে পরিবর্তনের ছোঁয়া। কিন্তু এই পরিবর্তন খুব একটা সহজও নয়। অনিয়মতি ব্যবহারে কখনও কখনও চলতি শব্দ হারিয়ে যায় আবার কোনো ঘটনায় নতুন নতুন শব্দ যোগ হয় আমাদের যাপিত জীবনে। ক্রান্তিময় ২০২০ সালে পাল্টে যাওয়া জীবনে তেমনিভাবেই নতুন কিছু শব্দ যোগ হয়েছে। বলা যায় নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমনি কতোগুলো শব্দ নিয়ে আজকের কথকতা।
করোনা
২০১৯ সালের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রাণঘাতি একটি ভাইরাসের সন্ধানের খবর আসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। প্রাথমিক নাম ছিল নভেল করোনাভাইরাস বা এনকোভ বা ২০১৯-এনকোভ। পরবর্তীতে এর নাম হয় কোভিড-১৯। এই নামকরণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন ইন্টারন্যাশনাল ক্ল্যাসিফিকেশন অব ডিজিজেস (আইসিডি)। তবে ভাইরাসটি পরিচিতি পেয়েছে ‘করোনা’ নামে। লাতিন ক্রাউন থেকে করোনা শব্দের উদ্ভব। যার অর্থ সূর্য বা অন্য নক্ষত্রের বাইরের আবরণ। করোনাভাইরাস গোত্রের ভাইরাসগুলো দেখতেও এমন।
ভ্যাকসিন বা টিকা
করোনা শব্দটির পরই আমরা এখন যে শব্দটি বেশিরভাগ সময়েই বলে থাকি বা ভেবে থাকি, সেটি হলো ভ্যাকসিন বা টিকা। করোনা যতো আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে, ততোই ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে মানুষ। কবে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, কার্যকর হবে কী না, কেমন দাম পড়বে, পৃথিবীর কোন দেশে কোন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে, এই সবকিছুতেই বহুল উচ্চারিত একটি শব্দের নাম হলো ভ্যাকসিন।
মাস্ক
মাস্ক, অর্থ মুখোশ। বিদায়ী বছরটির সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলোর একটি ছিল মাস্ক। কখন কোন অবস্থায় মাস্ক পরা হবে, এই বিষয়গুলো নিয়ে শুরুতে তথ্য বিভ্রাট ছিল। পরবর্তীতে জানা যায়, মাস্কই হলো ভাইরাস ঠেকাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার
বছরের আরেক আলোচিত শব্দ স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রেও। হাত ভাইরাস ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম, তাই করোনা শুরুর পর থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার ধুম পড়ে যায়। আর সেইসাথে এই শব্দটিও যুক্ত হয়ে যায় নিয়মিত অন্যান্য শব্দের সাথে।
অতিমারি
প্যানডেমিক, এপিডেমিক বা মহামারি শব্দগুলোর সঙ্গে পৃথিবীবাসীর পরিচয় বহুকাল ধরে। প্লেগ, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগগুলো একসময় মহামারি আকারে দেখা গিয়েছিল। বিশ শতকের বড় মহামারি ছিল স্প্যানিশ ফ্লু। কিন্তু এই করোনায় নতুন আরেকটি শব্দ আমাদের জীবনে জায়গা করে নিয়েছে, সেটি হলো ‘অতিমারি’।
লকডাউন
লকডাউন শব্দের আগের অর্থ হলো কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা বিবেচনায় কোনো কয়েদিকে সব সময় বন্দী রাখা। করোনাকালে লকডাউন শব্দের অর্থ এসেছে নতুন আঙ্গিকে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলাচল নিয়ন্ত্রণ দেশে দেশে লকডাউন দেয়া হয়েছে মাসের পর মাস।
হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন
কোয়ারেন্টাইনের সহজ অর্থ হলো সংক্রামক রোগের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে আলাদা করা। আর সব নিয়ম মেনে কোনো ব্যক্তি যখন নিজেকে নিজের বাড়িতেই আলাদা করে রাখেন, তখন তাকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলে। এছাড়া আইসোলেশন অর্থ আলাদা করা। করোনাক্রান্ত বা উপসর্গ দেখা দেওয়া ব্যক্তির চিকিৎসার এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপই হলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্য সবার থেকে আলাদা হতে হবে। তাই এই তিনটি শব্দই করোনাকালের জীবনে জড়িয়ে গেছে।
স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব
এই শব্দদুটো ছাড়া ভাবাই যায়না। সাবান পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, নিয়মে মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার মানা স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে পড়ে। আর আড্ডাপ্রিয় বাঙালিকে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বারবার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই শব্দদুটোই বছরব্যাপী আলোচনায় ছিল।
সীমিত পরিসর
এই শব্দটি প্রচলিত হয় সরকারি কিছু সিদ্ধান্তের কারণে। করোনার কিছু দিন যাওয়ার পর সাধারণ ছুটি শেষে জনসাধারণের চলাচল, দোকানপাট মার্কেট চালুর রাখার ও সরকারি-বেসরকারি অফিস নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সে সময় বলা হয়, সবকিছু সীমিত পরিসরে চালু রাখা হচ্ছে। সেই থেকে শব্দটি প্রচলিত হয়।
হোম অফিস
করোনাকালে হোম অফিস সারা বিশ্বেই আলোচিত শব্দ। ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে মানুষ ঘরবন্দী হলেও কাজ বন্ধ হয়নি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘরে থেকেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
অনলাইন ক্লাস
শিক্ষার্থীদের জন্য মার্চ থেকেই শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। বছরের আরেক আলোচিত শব্দ। অনলাইনে বাড়িতে বসেই শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ক্লাসরুমে অংশ নেন। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
জুম মিটিং
করোনায ঘরে বসে জুম অ্যাপের মাধ্যমে মিটিং করা হয়েছে, তাই একে জুম মিটিং বলা হয়। বছরের সবচেয়ে ব্যবহৃত একটি অ্যাপ। একবছর আগেও এর খবর বেশি মানুষ জানতো না। কিন্তু এখন জুম মিটিং প্রাতিষ্ঠানিক কাজ এগিয়ে নেওয়ার অনন্য মাধ্যম।
টেলিমেডিসিন
করোনায় ঘরে বসে অনলাইনে চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় এই শব্দটিও জড়িয়ে গেছে জীবনের সঙ্গে। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিভিন্ন জেলায় চিকিৎসকরা টেলিসেবার মাধ্যমে রোগী দেখছেন, কথা বলছেন এবং চিকিৎসা করছেন।
নিউ নরমাল লাইফ
করোনাকালের আগের ও পরে পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের জীবনযাপনের ধরন পাল্টে গেছে। বসবাসে-চলাফেরাসহ সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে। এক অন্য ধরনের সময়ে আমরা চলে এসেছি। এটাই হলো নিউ নরমাল লাইফ।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- নর্ড স্ট্রিম ২ কী? কেন এটি নিয়ে এত বিতর্ক? পর্ব ১
- বিশেষ সাক্ষাৎকার
`চিকিৎসা সম্ভব, সমাজে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ বলে কেউ থাকবে না` - চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচায় জীবিত খরগোশ গুনছিলো মৃত্যুর ক্ষণ
- মগবাজারে বিস্ফোরণে অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদক আহত
- যশোরে মিঠা পানিতে নোনা ট্যাংরার বাণিজ্যিক চাষ
- ১৪১ বছরের পুরনো পাগলা গারদে পাগল হওয়ার দশা!
- পাহাড়ি জঙ্গলে এলাচের বন, সবুজ গুটিতে স্বপ্ন ভাসে ওমর শরীফের
- করোনায় দৃশ্যমান স্বেচ্ছাসেবার শক্তি
- মেয়েটি দেখতে ভীষণ সুন্দর ও মেধাবী, তবে ভারতীয়
কৈশোরেই ব্রিটেনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক বাঙালি নারীর গল্প - স্বচ্ছতা, বিশ্বস্ততা সোনালী লাইফকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন উচ্চতায়: রাশেদ আমান