শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মানুষ মাছ খাচ্ছে বেশি, পুষ্টি পাচ্ছে কম

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

১২:২৯, ১৩ মে ২০২১

আপডেট: ১২:৩৩, ১৩ মে ২০২১

৮৮৩

মানুষ মাছ খাচ্ছে বেশি, পুষ্টি পাচ্ছে কম

বাংলাদেশের মানুষ ২০ বছর আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি মাছ খাচ্ছে তবে সে তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি পাচ্ছে কম। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। দ্য কনভারসেশনে এ বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। 

মাছ বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়। যা প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টিতে সম্বৃদ্ধ৷ বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাছ (ক্যাপচার ফিশারি নামে পরিচিত) সংখ্যা কমে আসছে। অতিরিক্ত মাছ ধরা, দূষণ এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে মাছের প্রজাতি ও সংখ্যার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। 

ফলস্বরূপ, ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ক্যাপচার ফিশারি থেকে প্রাপ্ত মাছের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ কমেছে। পুরো বিশ্বজুড়ে এই প্রবণতা লক্ষনীয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাছ সংগ্রহ বেশি ছিল। তারপর থেকেই তা কমে আসছে।

একই সময় জলজ সম্পদ চাষাবাদ (অ্যাকুয়াকালচার) যা নীল বিপ্লব নামে পরিচিত তা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল খাদ্য উৎপাদন খাত। বছরের মাছ চাষ বাড়ছে ৮ শতাংশ হারে এবং বিশ্বে মাছের চাহিদার অর্ধেক মিটছে চাষ করা মাছ থেকে।

১৯৮০ সালে বাংলাদেশ জলজ সম্পদ চাষাবাদের সঙ্গে পরিচিত হয়। তারপর থেকেই এই চাষাবাদ বেড়েই চলেছে৷ বর্তমানে জলজ সম্পদ চাষাবাদে বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে আছে বাংলাদেশ। 

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া মাছ থেকে চাষাবাদে মাছ উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় গড়ে আগের চেয়ে মাছ সংগ্রহ বেড়েছে। মানুষ আগের চেয়ে মাছ খাচ্ছেও বেশি৷ তবে সে তুলনায় পুষ্টি পাচ্ছে না৷ কেননা গবেষণায় দেখা গেছে প্রকৃতি থেকে পাওয়া মাছের পুষ্টিগুণ বেশি। 

ক্যাপচার ফিশারিতে দেশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়৷ যেখানে বেশিরভাগই ছোট প্রজাতির৷ যেগুলোর মাথা ও হাড় খাওয়া হয়৷ আর এই ছোট প্রজাতির মাছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক ও ভিটামিন-এ এবং উচ্চ পরিমাণে প্রোটিনসমৃদ্ধ৷ 

অন্যদিকে চাষ করা বেশিরভাগ মাছই বড় প্রজাতির। সেগুলোও প্রোটিন সমৃদ্ধ হলেও জিংক, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-এ'র মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় না৷ 

আর মানুষ এখন বেশি পরিমাণ চাষ করা মাছ খাচ্ছে। ফলে মাছ থেকে পাওয়া পুষ্টি কমে যাচ্ছে। যেটাকে দেশের ব্যপক অপুষ্টি সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

বিশ্বের অপুষ্টি সমস্যায় ভোগা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। প্রতি ৫ বছরের তিন শিশুর অন্তত একজন অপুষ্টিতে ভোগে। এছাড়া লাখ লাখ মানুষ জিংক, আয়রন ও ক্যালসিয়াম স্বল্পতা নিয়ে বাঁচে। যা স্বাস্থ্য খাত এবং চিকিৎসা ব্যয় ছাড়াই দেশের উৎপাদনশীলতায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি করছে। 

মাছ এমন এক পুষ্টিকর খাবার যা বৈশ্বিক পুষ্টি সমস্যা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি অপুষ্টির অবসান ঘটিয়ে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তবে জলজ সম্পদ চাষসহ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার লক্ষ্যগুলি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশেই আছে। বিভিন্ন জেলায় এখন একই পুকুরে বড় মাছের পাশাপাশি ছোট প্রজাতির মাছও চাষাবাদ হচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে পলিকালচার। 

সাধারণ বড় মাছগুলো ব্যবসার জন্য বিক্রি করা হচ্ছে এবং ছোট মাছ নিজেদের চাহিদা মিটলে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার পাশাপাশি পুষ্টিতেও সমৃদ্ধি আসছে। তবে এই হার খুব বেশি নয়। 

ভিটামিন-এ’র ঘাটতি দূর করার জন্য মোলা মাছের তেমন বিকল্প নেই। তাই পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনে পলিকালচারকে অত্যাধিক গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। প্রকাশিত গবেষণায় পলিকালচার ব্যাপক আকারে বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, কেবলমাত্র খাদ্য ঘাটতি দূর করাই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নয়, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথা পুরো বিশ্ব বাংলাদেশের মতো অবস্থার মুখোমুখি হবে। যেখানে খাদ্য বেশি হলেও থাকবে অপুষ্টি।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
বিশেষ সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত