শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আলাদা হয়ে বাড়িতে ফিরলো জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়া

রিজভী জয়, পাবনা

১৩:১৩, ১৬ মার্চ ২০২১

আপডেট: ১৩:২০, ১৬ মার্চ ২০২১

৫৭০

আলাদা হয়ে বাড়িতে ফিরলো জোড়া মাথার রাবেয়া-রোকাইয়া

বাড়িতে ফিরেছে জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়া
বাড়িতে ফিরেছে জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়া

দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে আলাদা হয়ে সোমবার পাবনার বাড়িতে ফিরেছে জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়া। নিজ বাড়িতে তাদের বরণ করে নিয়েছেন স্বজন, গ্রামবাসী। প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় শিশু দুটির চিকিৎসায় সহযোগীতা করায় স্বজনরা কৃতজ্ঞ, আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।

বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরীতে প্রায় চার বছরের দীর্ঘ ও জটিল চিকিৎসা শেষে সোমবার বিকেলে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় রাবেয়া-রোকাইয়া। আনন্দ যেন বাঁধ ভাঙে। আশেপাশের প্রতিবেশী ছাড়াও ইতিহাসের সাক্ষী হতে ছুটে আসেন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারাও।

রাবেয়াকে কোলে নিয়ে বাবা রফিকুল ইসলাম এবং রোকাইয়াকে কোলে নিয়ে মা তাসলিমা খাতুন যখন গাড়ি থেকে নামলেন তখন সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। এলাকাবাসী আর স্বজনদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন তারা। দুইবোনের মধ্যে রোকাইয়া শারীরিকভাবে নিষ্প্রভ থাকলেও, রাবেয়ার মুখে হাসি যেন লেগেই ছিল।

তার মুখের হাসিতেই যেন আনন্দ ছড়িয়েছে সবার প্রাণে। বাবা-মায়ের সাথে হেঁটেই নিজের ঘরে যায় সে। আর দীর্ঘদিন পর স্বজনদের কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন। স্বজনদের আবেগ ছুঁয়ে যায়, উপস্থিত সবাইকে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, রাবেয়া-রোকাইয়ার বাড়ি ফেরা যেন রূপকথার গল্পের এক কাল্পনিক যুদ্ধ জয়ের গল্প। পাবনার চাটমোহর উপজেলার আটলঙ্কা গ্রামের বিরল মাথা জোড়া লাগা যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার বেঁচে থাকা নিয়েই যেখানে ছিলো সংশয়, সেখানে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে সে ভাবনা ছিল স্বপ্নাতীত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় আলাদা হয়ে রাবেয়া-রোকেয়ার ফিরে আসায় পৃথিবী আবারো জেনেছে মানুষের অসাধ্য আসলে কিছুই নয়। আমরা এই শিশুদ্বয় ও তাদের পরিবারের পাশে আছি।

পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ জুন সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় জোড়া মাথার জমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। জন্মের পর থেকে দুশ্চিন্তা ভর করে শিক্ষক দম্পতি বাবা-মা রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনের। কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। সেই খবর পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি দায়িত্ব নেন রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার।

বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরীর চিকিৎসকদের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে ১ থেকে ৩ আগস্ট ঢাকা সিএমএইচে অপারেশন ফ্রিডম নামক ৩৩ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রপচারে তাদের মাথার খুলি ও ব্রেন আলাদা করা হয়। রাবেয়া-রোকাইয়ার বাড়ি ফেরার ঐতিহাসিক এ ঘটনার প্রতিবেদন করতে তাদের সাথেই আটলঙ্কা গ্রামে উপস্থিত হন হাঙ্গেরীর সাংবাদিক রির্চাডস ফুকস। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমি তাদের অনুসরণ ও প্রত্যক্ষ করছি। রাবেয়া-রোকাইয়াকে পৃথক করা ও জীবিত রাখা চ্যালেঞ্জ ছিল হাঙ্গেরীর চিকিৎসকদের জন্যও। এই চ্যালেঞ্জ দু’দেশের মানুষ ও চিকিৎসকদের একসূত্রে গেঁথেছে। পুরো বিশ্বে এমন বিরল শিশুদের চিকিৎসায় তারা উদাহরণ।

রিচার্ড আরো বলেন, রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা-মা তাদের সন্তানের চিকিৎসায় অসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন, তারা প্রতিবন্ধী বাচ্চার পিতা মাতাদের জন্য উদাহরণ। পাশাপাশি, তোমাদের প্রধানমন্ত্রীও এক বিশাল হৃদয়ের মানুষ, যিনি এই ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে খোঁজ খবর রেখেছেন। দীর্ঘ চিকিৎসার রাবেয়া অনেকটা সুস্থ হলেও, কিছুটা জটিলতা রয়েছে রোকাই্য়ার। তবে রোকাইয়াকেও সুস্থ করে তুলতে আত্মবিশ্বাসী তার বাবা মা।

রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, জোড়া মাথার জমজ শিশু জন্মের পর আমাদের মাঝে হতাশা নেমে আসে। অনেকে অনেক রকম কথা বলেছে। কটু কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু এখন সেই শিশুদের জন্য আজ সারাবিশ্বে আমি পরিচিত। রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী, চিকিৎসকসহ গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ জানান রফিকুল ইসলাম।

মা তাসলিমা খাতুন বলেন, এরপরেও যদি দেশে কারো জোড়া মাথার জমজ সন্তান জন্ম হয় তাদের বলবো, আপনাদের ভয় নেই। আমাদের সাথে সরকার আছে, হাঙ্গেরীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম আছে। জোড়া মাথা আলাদা করা আর কঠিন কিছু নয়। আমাদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন, যিনি মায়ের মতো বাংলাদেশের জনগনের সকল দুঃখ কষ্ট মুছিয়ে দিতে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন। আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীসহ চিকিৎসকদের প্রতি।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
বিশেষ সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত