শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

২০২০: জলবায়ু পরিবর্তনে লক্ষ্যণীয় ৫ বিষয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

১৬:৩৬, ৬ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৭:২৪, ৬ জানুয়ারি ২০২১

৭৯০

২০২০: জলবায়ু পরিবর্তনে লক্ষ্যণীয় ৫ বিষয়

করোনা মহামারিতে ২০২০ সালে বিশ্বের অর্থনীতি থমকে যায়। শিল্পের চাকা ছিলো বেশ খানিকটা সময় ধরে বন্ধ। ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমে। কিন্তু তাতে বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইড বাড়ার হার কমেনি। তাপমাত্রা বেড়ে চলেছেই। ২০২০ সাল ছিল এ গ্রহের দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে শঙ্কার বিষয় সদ্য সমাপ্ত বছরে তাপমাত্রা ছিল প্রত্যাশিত মাত্রারও ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। বরং বছরটিতে জলবায়ু সংক্রান্ত অন্তত ৫টি বিষয় ঘটেছে যার সবকটিই ছিল নতুন ও অপ্রত্যাশিত।

লা-নিনা (এল নিনো) এফেক্ট
কয়েকজন বিজ্ঞানী বলছেন, লা-নিনার প্রভাবে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল শীতল থাকলেও বিশ্বের অন্যান্য অংশে উষ্ণতা বিরাজ করেছে। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। পৃথিবীর বুকে এই নভেম্বরের তাপমাত্রা ছিল বিস্ময় জাগানো।

লা-নিনার সময় প্রশান্ত মহাসাগরের বৃহৎ অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ঠান্ডা বেশি থাকে। আর এল নিনোকালে সেখানে বিপরীত আবহাওয়া (উষ্ণ) বিরাজ করে। মূলত এ গোঁজামিলের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। ২০১৬ সালে তা নতুন রেকর্ড করে।

সাধারণত, ৩/৪ মাস পর অবস্থান পাল্টায় লা নিনা ও এল নিনো। ফলে চলতি বছরের আগে গেল বছর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পুরোপুরি জানা যাবে না। পরিবেশ বিজ্ঞানী স্টেফান রাহমস্টোর্ফ জানান, ২০১৬ সালের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে ২০২০।

পরিবেশ বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস বলেন, এ বছরের জলবায়ুতে আরেকটি বিষয় দেখা গেছে। সেটি হলো গ্রিনহাউস দ্বারা তাপ আটকে গেছে। এতে গ্রহের অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

মেরু অঞ্চলের বরফ গলেছে

দ্রুত আর্কটিকও অ্যান্টার্কর্টিক অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশ্বের গড় উষ্ণতার চেয়ে সেখানে বেশি তাপ বিরাজ করেছে। ফলে দুই অঞ্চলের বরফ দ্রুত গতিতে গলেছে। গেল সেপ্টেম্বরে নাসা জানায়, গ্রহের অন্যান্য অংশের চেয়ে তিন গুণ বেশি উষ্ণ হয় আর্কটিক অঞ্চল। অবশ্য ২০২০ সালে হয় দ্বিগুণ।

গেল জুনে একদল বিজ্ঞানী জানান, অ্যান্টার্কটিকায় উষ্ণতার একই হার লক্ষ্য করা গেছে। তাদের গবেষণা ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়, ১৯৮৯ সালের পর প্রতি দশকে দক্ষিণ মেরুতে গড়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক গড়তাপ মাত্রার চেয়ে যা তিন গুণ বেশি।

মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি বৈশ্বিক জলবায়ু সিস্টেম বাধাগ্রস্ত করে। এতে অতিরিক্ত খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বেড়ে যায়।

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে
মেরু অঞ্চলের বরফ গলায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে। এটি জটিল প্রক্রিয়া। কারণ, একই সময়ে সব জায়গায় সমানভাবে তা বাড়েনা। গেল নভেম্বরে গবেষকদের একটি টিম জানায়, গত এক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

প্রশান্ত মহাসাগরে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা এবং দ্বীপসমূহ প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভূমি ক্ষয়ের ফলে উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেগুলোতে লাখ লাখ লোক বসবাস করেন। বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত হয়।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ বিল সুইট বলেন, পরবর্তী ২০/৩০ বছরে অর্থাৎ ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০০০ সালের তুলনায় ১ ফুট বাড়বে। এতে আমরা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুক্ষীণ হতে যাচ্ছি।

এ পরিস্থিতিতে নিম্নাঞ্চলে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়বে। ফলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হবে। ফসল উৎপাদন ও জীবন জীবিকা ব্যাহত হবে। সুপেয় পানির অভাব দেখা দেবে। শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো ও সান ফ্রান্সিস্কো সম্ভাব্য ঝামেলায় পড়তে পারে।

জলবায়ু বিচার ও বিজ্ঞান সম্পর্ক
সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন উন্নত দেশের বিজ্ঞানীরা। তারা যা বলেন, তাই মেনে নেয় অনুন্নত দেশগুলো। অর্থ, তথ্য-প্রযুক্তির অভাবে সেই কাজ সম্পাদন করতে পারে না উন্নয়নশীল দেশগুলোও।

ইচ্ছা করলে উন্নত দেশগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবে। কিন্তু গরিব দেশগুলো পারবে না। অথচ এজন্য তারা দায়ী নয়।

সবচেয়ে বেশি কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃস্বরণ করে বিশ্বের ধনী দেশ গুলো। সেখানে ভুক্তভোগী হয় দরিদ্র দেশগুলো। তাই জলবায়ু ন্যায্যবিচার এখন সময়ের দাবি। কোন দেশ কি পরিমাণ কার্বন নিঃস্বরণ করে, সেই হিসাবে তাদের ক্ষতিপূরণ গোনা উচিত।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ফ্রেডি অট্টো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভাবাপন্ন প্রভাব নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাব জীবনের আরও ঝুঁকি তৈরি করেছে।বহুলোকের হতাহতের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য আমাদের কি করা দরকার তা জানি না।

এখনই থামাতে হবে
এর মধ্যেও আশার বাণী শুনিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এজন্য এখনই গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন থামাতে বলছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই তা থামালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির চক্র ধ্বংস হবে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলা কমবে। বনে-বাঁদাড়ে দাবানাল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া থামবে।

লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের পরিবেশ বিজ্ঞানী জোয়ে রিরোজেল্জ বলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি, যদি কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন শূন্যের কোটায় আনতে পারি, তাহলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বন্ধ হবে। এতে এক থেকে দুই দশকের মধ্যেই জলবায়ু স্থিতিশীল হবে। আইপিসিসিও তা সমর্থন করে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
বিশেষ সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত