কোভিড-১৯ পথ দেখিয়েছিলো, আমরা কি পেরেছি সে পথে হাঁটতে?
কোভিড-১৯ পথ দেখিয়েছিলো, আমরা কি পেরেছি সে পথে হাঁটতে?
প্রশ্নটি জলবায়ু সংক্রান্ত। এবং সকলের।
কোভিড-১৯ এসে বিশ্ব অর্থনীততে বড় ধস নামিয়ে ছেড়েছে। এখন তার উত্তরণে বিশ্বের দেশে দেশে সরকারগুলো ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু সেটা একদিকের আলোচনা। বিশ্ব নেতৃত্ব উন্নয়নের নামে অনেক আগেই ধরিত্রিটিকে ফেলে রেখেছে চরম ঝুঁকিতে তার থেকে উত্তরণের চেষ্টা খুবই কম দেখা যাচ্ছে। ফলে এবারও এত এত বরাদ্দের খুব সামান্যই যাচ্ছে জলবায়ু খাতে।
কোভিড-১৯ এসে এঁকে দিয়েছিলো একটি উত্তরণের পথ। সুযোগ তৈরি হয়েছিলো ধরিত্রিকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হওয়ার। একটি ভয় অন্তত ধরিয়ে দিয়েছিলো, এই যে মরণঘাতি করোনার হানা, সে প্রকৃতিরই শিক্ষা, প্রকৃতিই নিচ্ছে তার বদলা, এমনটাই বলছিলেন পরিবেশবিদরা। সুতরাং কোভিড-১৯ ছিলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। বিশ্বনেতাদের এই মর্মে একমত হওয়ারও সুযোগ ছিলো তারা পরিবেশের সুরক্ষার পথে হাঁটবেন, ধরিত্রিকে এক সবুজতর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
কিন্তু হয়েছে কি তেমন কিছু?
না বরং দেখা গেছে বিশ্বের অনেক জিবাশ্ম-জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ এখনো তাদের সাধারণ করদাতাদের অর্থ ঢেলেই চলেছে পরিবেশ দুষণকারী শিল্পসমূহে। কিছু নতুন তথ্য-উপাত্ত দেখাচ্ছে সরকারসমূহের এমন কিছু কিছু সিদ্ধান্ত উল্টো বিশ্বকে জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
”এটি আসলে একটি সুযোগই আমরা পেয়েছিলাম। সরকারগুলোতো বিপুল অংকের টাকাই খরচ করছে। এতো এতো খরচ আগামি ১০-২০ বছরে আর করা হয়তো হবে না। কিন্তু তার সামান্যই যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ খাতে।” সিএনএন এর একটি সংবাদে ঠিক এভাবেই উদ্ধৃত করা হয় অধ্যাপক নিকলাস ওনকে। ওন নিউক্লাইমেট ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার, ক্লাইমেট থিংক ট্যাংক হিসেবে সমধিক পরিচিত এবং দ্য ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার শীর্ষক এক নতুন গবেষণার কো-অথার।
এই গবেষণাই এখন দেখাচ্ছে- শিল্পায়নের আগের বিশ্বের চেয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অপর্যাপ্ত লক্ষ্যমাত্রারও অনেক পিছনে পড়ে আছে বিশ্ব।
করোনা ভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার গোড়ার দিকেই দেখা যাচ্ছিলো গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃস্বরণ কমে এসেছে। এতে আশান্বিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু এই সামন্য নিম্নগতি দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনে বড় কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই দেখাচ্ছে ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকারের গবেষণা।
আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহে কার্বন নিঃস্বরণ যতটুকু মাত্রায় কমিয়ে আনতে বিশ্ব নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার চেয়ে অনেক কমই অর্জন করতে পেরেছেন তারা। জলবায়ু বিপর্যয়ের হাত থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য যতটুকু মাত্রায় এই নিঃস্বরণ সীমিত রাখা প্রয়োজন তার চেয়ে মাত্রা অনেক বেশি বলেও দেখাচ্ছে এই গবেষণা।
জাতিসংঘ পই পই করে বলে আসছে জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বিশ্বকে জিবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে এর থেকে মুক্তি ক্রমেই কঠিনতর হয়ে পড়ছে। গোটা বিশ্বেই এখনো বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, জীবন জীবিকার জন্য এই জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা দেখা যায়। আর সরকারগুলো তাদের ভোট আর করটাকেই বড় করে দেখছে।
পোল্যান্ডে করোনা মহামারি আঘাতের বিপর্যস্ত একটি কয়লা শিল্পে সরকার ৩৫ মিলিয়ন ডলার ঢালছে। কানাডায় আলবার্টা প্রদেশে তেলের নতুন পাইপ লাইন বসাতে ১.১ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে অর্থনীতি পুনরোদ্ধারের জন্যই তা প্রয়োজন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলাতে একটি নতুন কয়লা খনি এক্সপ্লোর করা হচ্ছে। আর ভারতে কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট সঙ্কট সামাল দিতে ব্যক্তিখাতে ছাড়া হচ্ছে কয়েক ডজন কয়লা খনি।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- নর্ড স্ট্রিম ২ কী? কেন এটি নিয়ে এত বিতর্ক? পর্ব ১
- বিশেষ সাক্ষাৎকার
`চিকিৎসা সম্ভব, সমাজে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ বলে কেউ থাকবে না` - চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচায় জীবিত খরগোশ গুনছিলো মৃত্যুর ক্ষণ
- মগবাজারে বিস্ফোরণে অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদক আহত
- যশোরে মিঠা পানিতে নোনা ট্যাংরার বাণিজ্যিক চাষ
- ১৪১ বছরের পুরনো পাগলা গারদে পাগল হওয়ার দশা!
- পাহাড়ি জঙ্গলে এলাচের বন, সবুজ গুটিতে স্বপ্ন ভাসে ওমর শরীফের
- করোনায় দৃশ্যমান স্বেচ্ছাসেবার শক্তি
- মেয়েটি দেখতে ভীষণ সুন্দর ও মেধাবী, তবে ভারতীয়
কৈশোরেই ব্রিটেনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক বাঙালি নারীর গল্প - স্বচ্ছতা, বিশ্বস্ততা সোনালী লাইফকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন উচ্চতায়: রাশেদ আমান