শিকলবন্দী জীবন!
শিকলবন্দী জীবন!
বয়সের অর্ধেক সময় শিকলবন্দী মানসিক প্রতিবন্ধি সোহেল। পঁচিশ বছর বয়সের ১৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছে শিকলেবন্দী জীবন। শিকলপরা অবস্থাতেই চলে নাওয়া-খাওয়া। রাতে ঘরের মাচার পাশে একটি খুঁটিতে এবং দিনে বাড়ির সামনে কংক্রিটের খুঁটিতে তাকে বেঁধে রাখা হয়। ৭ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বর হলে সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই তার এই শিকলবন্দী জীবন।
টাকার অভাবে সোহেলের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে না পেরে দুঃশ্চিন্তায় দরিদ্র কৃষক বাবা আবু বকর দেড় বছর আগে মারা গেছেন। এতদিন ধরে তিনিই করেছিলেন সোহেলের সমস্ত দেখভাল। বাবা মারা যাওয়ায় সোহেলের কষ্ট আগের চেয়ে আরও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে পাগলামিও। তার শিকলবন্দী জীবন নিয়ে এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন বিধবা মা জাহানারা বেগম।
সোহেলের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের খায়েরপাড়া গ্রামে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে ছোট। বোন শিবলির বিয়ে হয়ে গেছে। সুদে ঋণ করে সৌদি আরব গেছে বড়ভাই রুবেল। ভাই বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠায় তাতে সুদের দেনা পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। তার ওপর আছে সংসারিক খরচ। সোহেলের চিকিৎসা আর হয়না।
সোহেলের শিকলে বন্দীত্ব নিয়ে মা জাহানারা বেগম বলেন, 'ছিরখল (শিকল) খুইলে দিলেই ও দৌড় মারে। আতাড়ি-বিতাড়ি চইলে যায়! আমি এলখা মানুষ, ওরে কই তনে খুঁইজে আনমু? তার উফ্রে পাড়া-পতিবেশীর দুষ্ট পোলাপানরাও ওরে জ্বালায়। তখন ও ক্ষেইপে যায়। কারো অনিষ্ট যাতে ও না করবের পায়, তারজন্য ওরে ছিরখল পরাই রাখছি। নইলে পোলারে কেউ এমুন কইরে রাহে!'
সোহেলের স্বজনরা জানান, আগে কম থাকলেও টাইফয়েড জ্বর হবার পরেই সোহেলের ভারসাম্যহীনতা বেড়ে যায়। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করে তার টাইফয়েড জ্বর সারলেও কমেনি মানসিক অসুস্থতা। হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসা করাতে বলা হয়েছে। সোহেল দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য নেই। ওর বাবা মারা যাবার পর এখন আর্থিক দীনতায় থেমে গেছে সোহেলের চিকিৎসা।
সোহেলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, উঠোনে কংক্রিটের খুঁটিতে শিকলের সাথে সে তালাবদ্ধ। সেখানে ওভাবেই থাকে সারাদিন। খাবারও খায় শিকল পরা অবস্থাতেই। বেশির ভাগ সময় খেতেও চায় না। রাতেও তাকে রাখা হয় ঘরের মাচার পাশের একটি খুঁটিতে শিকলে বেঁধে। ১৩ বছর ধরে এভাবেই চলছে তার বন্দী জীবনের গল্প।
সোহেলের মা জাহানারা বেগম দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, 'মাও অইয়েও পোলাডারে আমি ছিরখলে বন্দী কইরে রাখছি। পোলাডার ম্যালা কষ্ট। কী করমু? গরিব মানুষ, এত টেহাপয়সে নাই যে ওরে বালা চিকিস্সে করামু! ওর বাপ ম্যালা খরচাপাতি করছে। যহন ওষুধপাতি খাওয়াই, তহন কিছুডা বালা ব্যবহার করে। আমার মুন কয়, পোলাডারে ঠিকমুতো চিকিস্সে করাইলে বালা অয়ে যাইবো। কিন্তু এত টেহা পামু কই?'
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- নর্ড স্ট্রিম ২ কী? কেন এটি নিয়ে এত বিতর্ক? পর্ব ১
- বিশেষ সাক্ষাৎকার
`চিকিৎসা সম্ভব, সমাজে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ বলে কেউ থাকবে না` - চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচায় জীবিত খরগোশ গুনছিলো মৃত্যুর ক্ষণ
- মগবাজারে বিস্ফোরণে অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদক আহত
- যশোরে মিঠা পানিতে নোনা ট্যাংরার বাণিজ্যিক চাষ
- ১৪১ বছরের পুরনো পাগলা গারদে পাগল হওয়ার দশা!
- পাহাড়ি জঙ্গলে এলাচের বন, সবুজ গুটিতে স্বপ্ন ভাসে ওমর শরীফের
- করোনায় দৃশ্যমান স্বেচ্ছাসেবার শক্তি
- মেয়েটি দেখতে ভীষণ সুন্দর ও মেধাবী, তবে ভারতীয়
কৈশোরেই ব্রিটেনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক বাঙালি নারীর গল্প - স্বচ্ছতা, বিশ্বস্ততা সোনালী লাইফকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন উচ্চতায়: রাশেদ আমান