দূষণ-অবৈধ ভূমি দখলে দেশের শত শত নদী ক্ষতিগ্রস্ত
দূষণ-অবৈধ ভূমি দখলে দেশের শত শত নদী ক্ষতিগ্রস্ত
দূষণ এবং ভূমির অবৈধ দখল দেশের শত শত নদীকে ধ্বংস করছে যা প্রায় ১৭ কোটি মানুষের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "যদি আপনি গবেষণা করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে বাংলাদেশে কোনো নদীই দূষণমুক্ত বা অবৈধ দখলমুক্ত নয়।"
তিনি বলেন, নদী শুধু শিল্প বর্জ্য দ্বারা দূষিত হচ্ছে তা নয়, সারা দেশের সব পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষ স্যুয়ারেজ লাইন তৈরি করেছে যা নদীতে বর্জ্য নিষ্কাশন করে।
এমনকি রাজধানীর পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) মতো বিভিন্ন পরিষেবা সংস্থা বুড়িগঙ্গাসহ আশেপাশের নদীতে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিষ্কাশন করে।
দক্ষিণ বরগুনা জেলা মাছ ধরার ট্রলার মালিক সমিতির (বিডিএফটিওএ) সভাপাতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক লোভী মানুষ প্রায়ই সমুদ্র ও বড় নদীর সাথে সংযুক্ত উপকূল এবং খালের কাছে মাছ ধরার জন্য এক ধরনের বিষ ব্যবহার করে।
পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ইএসডিও) মার্চে এক বিবৃতিতে বলেছে যে বাংলাদেশ প্রতিদিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন করে এবং তিনটি প্রধান নদী - পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা প্রতিদিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে নিয়ে যায়।
বর্জ্য শুধু নদী ও নৌপথেই নয়, মানুষের স্বাস্থ্য ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাছ ধরার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ জীবিকার জন্য নদীর উপর নির্ভরশীল। নদীগুলি বিশাল চাষযোগ্য জমির জন্য পানির একটি বড় উৎসও বটে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কতগুলো নদীর অস্তিত্ব আছে তা শনাক্ত করা যায়নি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকারী রেকর্ড বলছে বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ টি নদী আছে এবং দেশের নদী কমিশন কর্তৃক সংরক্ষিত তথ্য বলছে নদীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ টি। পানি সম্পদ এবং নদীর উপর কাজ করে এমন কিছু অন্যান্য বেসরকারি উৎস বলছে বাংলাদেশে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার নদী আছে।
আর এই তথ্য ঘাটতির সুবিধা নেয় কিছু মানুষ। যারা সরকারের সাথে সম্পর্ক রেখে নদীর একটি বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে যা সরকারের তালিকায় নেই। এই ধরনের ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, “সরকারের উচিত অবিলম্বে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা এবং সব দখলকৃত নদী উদ্ধারের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে নদীর তালিকা সংশোধন করা।”
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বাংলাদেশ জলবায়ু-পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে একটি । যেখান থেকে বেরিয়ে আসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের কাছে একটি বিপজ্জনক রিপোর্ট আছে যে, বাংলাদেশের ২১ টি উপকূলীয় জেলা ২০৫০ সালের মধ্যে নোনা সমুদ্রের পানির নিচে চলে যাবে, যা দেশের ভূ-খন্ডের এক তৃতীয়াংশ। কীভাবে আমরা সেই দুর্যোগ মোকাবেলা করব এবং কীভাবে আমরা সেই লক্ষ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দেব এবং মিষ্টি পানি ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা করব তা ঠিক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মিঠা পানির ওপর চাপ বাড়বে এবং যদি সীমিত মিষ্টি পানি ক্রমাগত দূষিত হয়, তাহলে আমাদের ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন "যদি নদী দূষণ এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশের মোট বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে, আর ভেঙে যাওয়া বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সাধারণত প্রায় ৮০ বছর সময় লাগে।
নদীর অবৈধ দখল এবং দূষণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব উল্লেখ করে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বিপদগ্রস্ত করবে, জলবায়ু শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়াবে এবং দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে।
আইনের ফাঁকফোকর
বাংলাদেশের জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশনের (এনআরসিসি) চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবির বলেন, “অবৈধ নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান নেই। আমাদের নদীগুলিকে দূষণমুক্ত এবং অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কমিশনের বর্তমান বিধানে আমাদের কোন অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা ও আইনগত কোন অধিকার নেই, আমরা শুধু সুপারিশ করতে পারি”।
তিনি বলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং সিটি কর্পোরেশনের সম্পৃক্ততার সাথে একটি মেগা প্রকল্পের আওতায় সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তিনি মতামত দেন "দেশের নদীগুলিকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে আরও বেশি রসদ এবং জনবল দিয়ে এনআরসিসিকে কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া উচিত।"
তিনি বলেন, সরকার নদীর বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, নদী দূষণের উৎস বন্ধ করা, অবৈধ দখল থেকে নদী পুনরুদ্ধার, দীর্ঘমেয়াদী সৌন্দর্যবর্ধন, অবৈধ স্থাপনা অপসারণসহ নদীগুলিকে রক্ষা করার জন্য ২০ বছরের মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- নর্ড স্ট্রিম ২ কী? কেন এটি নিয়ে এত বিতর্ক? পর্ব ১
- বিশেষ সাক্ষাৎকার
`চিকিৎসা সম্ভব, সমাজে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ বলে কেউ থাকবে না` - চিড়িয়াখানায় অজগরের খাঁচায় জীবিত খরগোশ গুনছিলো মৃত্যুর ক্ষণ
- মগবাজারে বিস্ফোরণে অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক-নির্বাহী সম্পাদক আহত
- যশোরে মিঠা পানিতে নোনা ট্যাংরার বাণিজ্যিক চাষ
- ১৪১ বছরের পুরনো পাগলা গারদে পাগল হওয়ার দশা!
- পাহাড়ি জঙ্গলে এলাচের বন, সবুজ গুটিতে স্বপ্ন ভাসে ওমর শরীফের
- করোনায় দৃশ্যমান স্বেচ্ছাসেবার শক্তি
- মেয়েটি দেখতে ভীষণ সুন্দর ও মেধাবী, তবে ভারতীয়
কৈশোরেই ব্রিটেনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক বাঙালি নারীর গল্প - স্বচ্ছতা, বিশ্বস্ততা সোনালী লাইফকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন উচ্চতায়: রাশেদ আমান