শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ || ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

করোনা: জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে কিশোরীদের, বেড়েছে স্কুল ছাড়ার হার

মাসুম বিল্লাহ

১৩:০৯, ১ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ১৩:২৪, ১ আগস্ট ২০২১

৬১২

করোনা: জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে কিশোরীদের, বেড়েছে স্কুল ছাড়ার হার

ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন কুড়িগ্রামের ১৬ বছর বয়সী উম্মে আয়েশা (ছদ্মনাম)। অংশ নিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টেও। তিন বছর আগে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হিসেবেও মনোনীত হয়েছে আয়েশা।

কিন্তু এখন স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক পাশ কিংবা জাতীয় ফুটবল দলে খেলার স্বপ্ন সবই শেষ হয়েছে এই কিশোরীর। এই বছরের শুরুতেই ১৭ বছর বয়সী এক মোটর মেকানিকের সাথেিআয়েশার বিয়ে দিয়েছেন তার বাবা-মা। 

আয়েশার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে আর ফুটবল খেলতে দেবে না। স্বামী তাকে নিজের কর্মস্থল ঢাকায় নিয়ে যাবেন। 

আয়েশা জানান, “আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা করোনাকালে খুবই খারাপ হয়ে ওঠে। মহামারিতে কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। তাই তারা আমাকে বিয়ে দিয়েছে। 

তার কৃষক বাবা জানান, মহামারির সময় তিনি তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য সংগ্রাম করছিলেন। তিনি বলেন “আমার আরও দুটি ছেলে আছে। আমার মেয়ের বিয়ে আমাকে আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করেছে। ”

আয়েশা যে প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন, সেখানে কমপক্ষে এমন ছয়জন কিশোরীর বিয়ে হয়েছে এবছর যাদের সাথে সে ফুটবল খেলতো। মহামারি চলাকালীন বাল্যবিবাহের এমন ছবি অন্যান্য অংশেও দেখা গেছে। 

বাল্যবিবাহ ব্যাপক বৃদ্ধি

করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অন্যান্য সময়ের তুলনায় দেশে বাল্যবিবাহ ১৩ শতাংশ বেড়েছে, যা ২৫ বছরে সর্বোচ্চ। দেশের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাকের জরিপে এই তথ্য উঠে আসে। 

বিশ্বে বাল্যবিবাহের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ নারীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। ইউনিসেফের তথ্যমতে দেশের বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশের বেশি। 

আরেক এনিজিও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, করোনার মধ্যে দেশের ৪৯৫ প্রশাসনিক অঞ্চলের ৮৪টিতে ১৩ হাজার ৮৮৬ টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। যার অর্ধেকেই কন্যার বয়স ছিল ১০-১৫ বছর।  

বাল্যবিবাহ কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। গত অক্টোবরে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, একবছরে এই অঞ্চলে এক লাখ ৯১ হাজারের বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে। 

বাংলাদেশের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাবিনা ফেরদৌস বলেন, বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির তথ্য তাদের কাছে নেই, কিন্তু কত বিয়ে আটকানো হয়েছে তা তারা নথিভুক্ত করেছেন।

ফেরদৌস বলেন, মহামারী চলাকালীন প্রতিরোধের হার বেড়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে।

ব্র্যাকের তথ্যও ক্রমবর্ধমান প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। এনজিও ২০১৯ সালে ৬৭০ এবং 2020 সালে এক হাজার ৯১টি বাল্যবিবাহ রোধ করেছে।

স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার

করোনায় শুধু বাল্যবিবাহই একমাত্র সমস্যা নয় যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। করোনার আগের বছর মাধ্যমিক স্তরে এসে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৬ শতাংশ। কিন্তু সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) জানিয়েছে, যদি স্কুল খুলে দেয়া হয় তখন দেখা যাবে ঝরে পড়ার হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ শতাংশ। 

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সংকোচ করছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে চলতে থাকলে ঝরে পড়ার প্রবণতা আরও বাড়তে থাকবে। 

সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক। এভাবে চলতে থাকলে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার, শিক্ষা অর্জনের মন মানসিকতা হারাবে। তাদের বাল্যবিবাহ দেয়ার সংখ্যা বাড়বে। যা পুরো প্রজন্মের ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলবে।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ঝরে পড়ার হার দেখার পাশাপাশি বয়সও বিবেচনা করতে হবে। যদি ১৮-১৯ বছর বয়সের কেউ ঝরে পড়ে, সেটা বেশিরভাগ পরিবারের আয়ের জন্য হয়। কিন্তু ১২-১৩ বছর বয়সের কেউ ঝরে পড়লে তাদের নিয়ে চিন্তা বেশি, কারণ তারা তাদের মানবিক মূলধন সমৃদ্ধ হওয়ার আগেই চলে যাচ্ছে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)

আরও পড়ুন

Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank
বিশেষ সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত