ঘামের দুর্গন্ধমুক্ত ম্যাজিক কাপড়
ঘামের দুর্গন্ধমুক্ত ম্যাজিক কাপড়
এখন সারাদেশে প্রচন্ড গরম। বিচ্ছিরি অবস্থা। ঘামে-ময়লায় জবজবে হয় পোশাক- কাপড়। নিজের শরীর নিজের কাছেই চিটচিটে আঠালো, নোংরা লাগে। যতো দামি, যতো প্রিয় পোশাকই হোক। ঘামের কারনে পোশাকের মান-ইজ্জত বুঝি আর থাকে না। ঘামের কারনে পড়তে হয় অনেক বিব্রতকর সমস্যায়। অথচ গরমের ঘাম এড়াতে আপনি কি না করছেন? ঠিকই প্রতিদিন গোসল করছেন। সুতির কাপড় পরছেন। প্রতিদিন আলাদা কাপড় ব্যবহার করছেন। কাপড় ভালো করে ধুয়েও নিচ্ছেন। শরীর বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘খাবারের জন্য ঘামের এই দুর্গন্ধ সমস্যাটা হয়ে থাকে। খাবারে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকলে শরীরের দুর্গন্ধ বাড়তে পারে।’ অতি কষ্ট করে তাই আপনি মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলছেন। এতোকিছু করেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। কাপড়ে ঘামের দুর্গন্ধ রয়েই যায়।
আবার যখন প্রিয় পোশাকটা ধুয়ে দিচ্ছেন। তখন ঠিকই ভাবছেন- যাক, এবার বাঁচা গেলো। সুগন্ধিযুক্ত শক্তিশালী ডিটারজেন্টে কাপড় ধোয়ার কারনে কাপড়ের ঘামের কোন দুর্গন্ধ আর রইলো না। এরপর পোশাকটা ইস্ত্রি করলেন। তারপর এক সেকেন্ডের জন্য গায়ে ট্রায়াল দিয়েছেন, তো হয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে শুঁকে দেখবেন, আবার ফিরে এসেছে ঘামের সেই দুর্গন্ধটা। তাই তো! দুর্গন্ধটা আবার কোত্থেকে এলো? এতোবার করে কাপড় ধোয়ার পরও আবার কেনো কাপড়ে ঘামের দুর্গন্ধ? বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘এসবের জন্য দায়ী ‘বুটাইরিক এসিড’। কাপড়ে অদৃশ্য হয়ে থাকলেও করোনাভাইরাসের মতো কঠিন এর ক্ষমতা। সবসময় এর ঘন ক্ষুদ্র উপাদানগুলো আপন মনে তৈরি হয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকি এই দুর্গন্ধটা কাপড়ের আলমারি ওয়্যারড্রবেও গমগমে ছড়িয়ে যায়। অনেকক্ষণ ধরে কাপড়টা গরম ইস্ত্রিতে ইস্ত্রি করার পরও ঘামের গন্ধটা বিনাশ হয় না। ঘামের গন্ধটা রয়েই যায়।
বিজ্ঞানীরা জানান, ‘সবারই কম বেশি ঘাম হয়ে থাকে, এটাই স্বাভাবিক। এটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটা প্রজনন চক্রে প্রবেশের সময় থেকেই শুরু হয়ে- চলে আজীবন। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে ঘাম হওয়াটা শরীরের স্বাভাবিক কার্যপদ্ধতি।’ প্রাকৃতিকভাবেই ঘাম গন্ধহীন। তবে অত্যাধিক ঘামের ফলে অনেকের শরীর দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠার কারন সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘ঘামের দুর্গন্ধ তখনই হয়, যখন ত্বকে থাকা ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে ঘাম যুক্ত হয়।’ মূলত এই দুর্গন্ধের জন্য ব্যাকটেরিয়া দায়ী। যা ঘাম থেকে সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এই ঘাম থেকে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রোগের। তাই শরীরের দুর্গন্ধ দুর করতে মানুষের কাছে সাধারণ জনপ্রিয় দু’টো পণ্য হলো ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টি-পার্সপাইরেন্ট। তবে এসব কেমিক্যাল একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করে। তারপর আবার যেই সেই। প্রকট হয়ে উঠে ঘামের সেই দুর্গন্ধ। তবে কি ঘামের এই দুর্গন্ধ দূর করার কোন উপায় নেই?
জী হ্যাঁ। অবশেষে বেরিয়েছে ভালো থাকার উপায়। এবার এসে গেলো ঘামের দূর্গন্ধ দূর করতে নতুন ম্যাজিক কাপড়। সত্যিই, এখন আর ঘামের বিচ্ছিরি দূর্গন্ধ নিয়ে কোন চিন্তা নেই। ঘামের দুর্গন্ধের বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সম্প্রতি অফিস-আদালতের পোশাকের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে এন হ্যালামিন মিশ্রিত ম্যাজিক কাপড়ের পোষাক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এন হ্যালামিনযুক্ত কাপড়ের পোশাক আসলে বিশেষ তুলো দিয়ে তৈরি। এই তুলোর সঙ্গে মাখানো রয়েছে গাছের খাঁটি নির্যাস। যা ব্যাকটেরিয়াজনিত ঘামের দুর্গন্ধ বিনাশ করে। সেকেন্ডের মধ্যেই সংক্রামক জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। কাপড়ে ঘামের গন্ধের যম ‘বুটাইরিক এসিড’ দূর হয়ে যায়। ফলে কাপড়ে আর ঘামের দুর্গন্ধ হয় না। কাপড়ের এন হ্যালামিন ঘামের দুর্গন্ধ বিনাশ করে।
বায়োসিডাল কটন দিয়ে তৈরি এই কাপড় আপাতত বেশি বেশি ব্যবহৃত হবে সরকারী অফিস-আদালতে। শরীরের দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম নিয়ে এখন আর বিব্রত হবার ভয় থাকবে না। ঘামের দূর্গন্ধমুক্ত এই কাপড় প্রস্তুতকারক কোম্পানির নাম হ্যালো সোর্স। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ড. জেফরি উইলিয়াম জানান, ‘ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা গাছের ছালে এক ধরনের যৌগিক উপাদান পেয়েছেন। যার নাম এন হ্যালামিন। সাধারণত সুতি জাতীয় কাপড়েই এই এন হ্যালামিন বেশি কার্যকর থাকে।’ কোম্পানির ভাষ্য মতে- ‘এন হ্যালামিনে রয়েছে ক্লোরিনের অণু। যা ব্যাপক আকারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ধ্বংস করতে সক্ষম।’
নতুন আবিষ্কৃত এই ম্যাজিক কাপড় দিয়ে খেলোয়াড়দের পোশাক ছাড়াও বানানো হবে করোনা হাসপাতালের বিছানাপত্র, ডাক্তার ও নার্সদের ইউনিফর্ম। এছাড়াও বানানো হবে হোটেলের বিছানাপত্র, রুমাল, তোয়ালে ইত্যাদি। এই কাপড়ে দরকারি পোষাক বানাতে গিয়ে যে ঝুট কাপড় বের হবে সেই ঝুট বা অপ্রয়োজনীয় কাপড়ের টুকরোগুলোও পরিত্যক্ত হবে না। এই ঝুট কাপড়গুলো বাসন-কোসন ধোয়া, মোছার কাজে ব্যবহারের জন্য বিক্রি হবে অতি চড়া দামে। এই ঝুট কাপড় স্থান করে করে নেবে কসাইয়ের মাংস কাটার দোকান আর খাবার টেবিলের পাশে।
ক’দিন বাদে এই এন হ্যালামিন খাদ্যজাত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের কাজেও ব্যাবহৃত হবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। জেফরি উইলিয়াম বলেন- ‘বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য প্র্থমত: এই কাপড় দিয়ে সরকারী পোশাক তৈরি করা হবে। এই কাপড়ের তৈরি পোশাক দুর্গন্ধযুক্ত হবে না তাই বিষাক্ত নিঃশ্বাস থেকে মানুষকে বাঁচাবে।’ ইতোমধ্যে বাজার জয় করেছে কোম্পানির পরীক্ষামূলক উৎপাদিত এন হ্যালামিনযুক্ত রুমাল, টি শার্ট, জুতো, মোজা ইত্যাদি। ঘামের দুর্গন্ধ প্রতিরোধক নতুন এই ম্যাজিক কাপড়ের আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পোশাক আগামী ছ’মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করে ছড়িয়ে যাবে গোটা বিশ্বে।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?