জাদুর ব্যান্ডেজ
জাদুর ব্যান্ডেজ
সাধারণত যেকোনো আঘাতের ক্ষত, কাটা-ছেঁড়ায় ড্রেসিং গজ, ব্যান্ডেজ, কাপড়, তুলা ইত্যাদি জরুরি সামগ্রী প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে বহুদিন থেকে বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এসব ব্যান্ডেজ ক্ষতস্থানের ত্বককে সবসময় আর্দ্র ও ময়লামুক্ত রাখে। আর যে কোন ওষুধ ক্ষতস্থানের কাছাকাছি ধরে রাখতে দারুণ সাহায্য করে থাকে। এতে ত্বকের যে কোন ধরনের ক্ষত সারাতে, যথাযথভাবে ত্বক জোড়া লাগাতে সপ্তাহ খানেকেরও বেশি সময় লাগে না। কিন্তু না। আরও সময় বাঁচানো দরকার। এবার তাই এসে গেলো সাধারণ ব্যান্ডেজের তুলনায় সতেরগুণ বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন জাদুর ব্যান্ডেজ। এই ব্যান্ডেজ দিয়ে সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয় এবং ত্বক জোড়া লাগাতে লাগে খুবই অল্প সময়।
জ্বী হ্যাঁ। এবার সত্যিই এমন জাদুর ব্যান্ডেজ যে কোন ধরনের কাটা ছেঁড়ার প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে জাদুর মতোই দারুণ কাজে লেগে গেছে। ছোট থেকে বড় যে কোন আঘাত বা ক্ষতে এটা সমান কার্যকরী। মানুষের শরীরের কেঁটে যাওয়া অংশে রক্ত বন্ধ হওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বৈজ্ঞানিক মূলসূত্র হিসেবে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে এই জাদুর ব্যান্ডেজ। মার্কিন বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার রক্তপাত বন্ধের প্রচেষ্ঠায় তিন হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়ার প্রাণ প্রকৌশলীরা গবেষণার পিয়ার রিভিউ হিসেবে এই ব্যান্ডেজের জাদুকরী কর্মকান্ড খোলামেলা বিশ্লেষণ করেন এভাবে- ‘নতুন এই ব্যান্ডেজ শরীরের তাপমাত্রার স্পর্শকাতর বস্তুকণা দিয়ে তৈরি। এই ব্যান্ডেজে রয়েছে মুলত: মানুষের ভ্রুণ থেকে তৈরি বিশেষ ধরণের সিলভার ন্যানো পার্টিকেল। সঙ্গে রয়েছে রক্ত জমাটবদ্ধ করার দু’টো উপাদান। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষ এক ধরনের ফোম, স্প্রে বা সিলিকন জেল। এই ফোম, স্প্রে ও সিলিকন জেল শরীরের ত্বকের নিজস্ব উত্তাপে ব্যান্ডেজের মতো আবরণী তৈরি করে শুকিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থানের দু’পাশের ত্বকের প্রান্ত শক্তভাবে দু’দিক থেকে পরস্পর আঁকড়ে টেনে ধরে রাখে। টেনে ধরে সরাসরি ক্ষতস্থানকে দ্রুত জোড়া লাগানোর কাজ আপন মনে প্রাকৃতিক উপায়ে করে থাকে।’ বিজ্ঞানীরা বলেন, কাটা-ছেঁড়া ও পোড়ার ক্ষতস্থানের ক্ষেত্রে এই ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হলে ফিব্রিনের তন্তুগুলো একে অপরের ওপর আড়াআড়িভাবে পতিত হয় এবং একটা বাঁধের মতো তৈরি করে। এই বাঁধ রক্তের প্রবাহ আটকে দেয়। পরে বাঁধটায় ফিব্রিনের তন্তজালি ঘনীভূত হয়ে শক্ত হয়ে যায়। এরপর ক্ষতস্থানের উপরিস্তরের কোষগুলো মরে গিয়ে মামরি বা খোস তৈরি করে। কাটা জায়গার কোষগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হলে ওই মামরি আপন মনে খসে পড়ে যায়। তখন ত্বক হয়ে ওঠে সজীব ও আগের মতই স্বাভাবিক। এভাবে ম্যাজিকের মতো এই ব্যান্ডেজে খুব দ্রুত সুস্থ বা আরোগ্য হওয়া যায়। শরীরে সৃষ্ট গভীর কোন ক্ষত জোড়া লাগানো এবং রক্তপাত বন্ধের জন্য এই জাদুর ব্যান্ডেজ তথা ম্যাজিক স্প্রে, সিলিকন জেল ও ফোমের জুড়ি মেলা ভার।
সানফ্রানসিস্কোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৌশলী সিরেনা’র মতে, ‘দেখা গেছে অন্য সব ব্যান্ডেজের চেয়ে পাঁচ দিন আগেই এই ব্যান্ডেজের ক্ষত শুকানোর ক্ষমতা রয়েছে।’ এখন মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের চূড়ান্ত অনুমোদন ও বাজারজাত করার আগে এই ব্যান্ডেজের কার্যকারিতা ডায়াবেটিস রোগীর দেহে প্রয়োগ করে ফলাফল দেখার অপেক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, ডায়বেটিস রোগীর শরীরের কোষের বৃদ্ধি হয় ধীর গতিতে। আর রক্ত প্রবাহও থাকে কম। এজন্যে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষত অন্য সাধারণ মানুষের ক্ষতের চেয়ে সারতে একটু বেশি সময় লেগে যায়। জাদুর ব্যান্ডেজটা তুলনামুলক অন্য বিকল্প সব ব্যান্ডেজের চেয়ে দামেও সস্তা। প্রতিটা ব্যান্ডেজের দাম ০.১৪ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১২ টাকা মাত্র।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?