মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শূন্যে ভাসমান বিছানা

শেখ আনোয়ার

১২:৪৬, ১৬ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ১৫:৫৬, ১৬ এপ্রিল ২০২১

৯৭২

শূন্যে ভাসমান বিছানা

করোনাভাইরাসের কঠোর লকডাউনে বাইরে বের হওয়া চলে না। বাসায় থাকতে হয়। সারাদিন তো আর বসে থাকা যায় না। ঘুরে ফিরে বাড়ির সেই প্রিয় বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই হয়। আপনি যে রাজপ্রাসাদেই থাকুন অথবা যেখানেই থাকুন না কেনো। নিজের বিছানায় নিজের শরীরটা এলিয়ে দেওয়ার মজাই আলাদা। 

ভরসার ঘুমে দু’ চোখ জুড়াতে একটু সময়ও লাগে না। তাই ঘুমের জন্য বিছানাটা হওয়া চাই মনের মতো। এর সঙ্গে শরীরের আরামকেও বিবেচনায় নিতে হয়। শুধু আবার আরামের কথা ভেবেই নরম কোমল বিছানায় নিজেকে সঁপে দেয়া যায় না। একেবারে নরম বিছানায় ঘুমানো যেমন ঠিক নয়, তেমনি আবার খুব শক্ত বিছানাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

বিছানা শুধু বিছানা নয়। বিছানা শুধু শরীরের আরাম নয়। অনেকেই চোখ ও মনের সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে বিছানা সংগ্রহ করে থাকেন। তা যে বিছানাটা আপনার এতো প্রিয়, সেই বিছানা যদি প্রযুক্তির সবকিছু থাকে? ভাসমান হয়? তাহলে ভারী মজাই হয়। আপনি ঘুমিয়ে রয়েছেন বিছানায়, আর আপনার বিছানাটা ভাসছে শূন্যে। অভাবনীয় ব্যাপার। তাই না? তাছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে সৃজনশীল এবং বিলাসবহুল বিছানায় অবশ্যই একবার ঘুমাতে কার না মন চায়! আর চিন্তা নেই। আপনার জন্য এসে গেলো আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির সুন্দর বিছানা। আপনি দেখবেন সত্যি সত্যি শূন্যে ভেসে রয়েছেন। বিজ্ঞান প্রযুক্তির যাবতীয় সুবিধা রয়েছে বিছানায়। চাই কি, এই করোনায় ভাসমান বিছানায় শুয়েই তাবৎ দুনিয়া দেখতে পাবেন। খুব আরামদায়ক ফ্যান্টাসি এবং সৃজনশীল প্রযুক্তির এক নিখুঁত সংমিশ্রণ এই বিছানা।

জ্বী হ্যাঁ। যদি আপনি ঘুমাতে নাও চান, তবুও বিছানাটা দেখার পরে ঘুমাতে চাইবেন। আপনি হয়তো বলবেন, এমন দৃশ্য মানুষ কেবল স্বপ্নেই দেখতে পারে। একভার ভাবুন তো, মানুষের এই স্বপ্ন যদি বাস্তবে রূপ নেয় তবে কেমন মজা হয়? অবশেষে স্বপ্ন চারীদের এই আশা পূরণের পথ দেখালেন এক তরুণ ডাচ আর্কিটেক্ট জ্যানজাপ রুজসেনারস। মসৃণ কালো রঙের প্লাটফর্ম সদৃশ এই বিছানাটা তৈরিতে তার সময় লেগেছে ছয় বছর। এটাকে দু’ভাজ করে ডাইনিং টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। জ্যানজাপ জানান, ম্যাগনেটিক ফোর্সের সাহায্যে শূন্যে ভেসে থাকে এই বিছানা। মেঝে ও বিছানায় এমনভাবে ম্যাগনেট বা চুম্বক স্থাপন করা হয়েছে, যাতে এটা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিছানাটাকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখে। আর ছাদ থেকে নেমে আসা স্টিলের তার বিছানাটাকে ধরে রেখেছে মাত্র। যেনো বিছানাটা সেটা এদিক ওদিক ভেসে যেতে না পারে।

এই বিছানা তৈরিতে জ্যানজাপের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিক আর সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি. ক্লার্কের উনিশ’শ ষাট সালের সেই বিখ্যাত ফিল্ম ‘দুই হাজার এক: অ্যা স্পেস ওডেসি।’ উনিশ’শ আটষট্টি সালের ওই ফিল্মের কাহিনীকে তখন অনেকেই আজগুবি বলে উড়িয়ে দিলেও ভিজ্যুয়াল অ্যাফেক্টের জন্য ওটা অস্কার পর্যন্ত পেয়েছিলো। সেই অনুপ্রেরণা থেকে তৈরি বিছানাটার ছবি প্রকাশ করেছেন জ্যানজাপ। এই বিছানা এতোটাই সুন্দর যে, বিছানায় শুইলেই চোখ বুজে আসে। প্রতিটা মুহুর্ত আপনি বড্ড বেশি বেঁচে থাকবেন। আপনার বিছানা হয়ে উঠবে সত্যিই স্বপ্ন দেখার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরাও বলেন, এ রকম বিছানায় ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ঘরের সৌন্দর্যে বিছানার আলাদা মাত্রা যোগ করতে শূন্যে ভাসমান বিছানার জুড়ি মেলা ভার। তবে শূন্যে ভাসমান এই বিছানার দাম পড়বে মাত্র পনের থেকে চল্লিশ হাজার ডলার মাত্র। বাজার দরের কারণে জনপ্রিয়তা পাক বা না পাক, এই ভাসমান ফ্যান্টাসি বিছানা মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবে, একথা নিশ্চিত করে বলা যায়।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank