স্বাধীনতায় উদ্দীপ্ত বঙ্গবন্ধুর চিরন্তন বাণী
স্বাধীনতায় উদ্দীপ্ত বঙ্গবন্ধুর চিরন্তন বাণী
বাঙালি জাতি আজ গর্বিত, বিস্মিত এবং অভিভূত। কারণ আজকের দিনে বাংলাদেশ স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রচেষ্টায় যে দেশটির এখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা বৈকি! স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ হতে ৫০ বছর আগে এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক বাঙালির আবাসভূমি, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, একটি পতাকা এনে দেন। সাত কোটি বাঙালি একরকম খালি হাতেই সেদিন পাক হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কতটুকু সাহস প্রাণে সঞ্চারিত হলে মানুষ মরতেও ভয় পায় না? সেই সাহসের উদ্দীপনার প্রবাহ এসেছে বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে উচ্চারিত ও বিচ্ছুরিত চিরন্তন শব্দ বাণী থেকে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো লাখো জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যে ঢেলে দিয়েছিলেন বাঙালির পুরো অবয়ব-স্বত্তার চিরন্তন উদ্দীপ্ত বাণী।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বা বাণীর শব্দচয়নসমূহ লক্ষ্য করার মতো। বঙ্গবন্ধু ভাষণের প্রতিটি শব্দ নির্বাচন করেছেন অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনের নিরিখে। নিউজউইক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ নিবন্ধে ‘দ্য পয়েট অব পলিটিক্স’ বা রাজনীতির কবি আখ্যায়িত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। তাঁর ভাষণ কেবল একটি ভাষণ নয়, একটি অনন্য কবিতা। কাব্যিক গুণ-শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাসের কারণে যা হয়ে ওঠে গীতিময় ও চতুর্দিকে অনুরণিত। তাই আজও হাজার হাজার শিশু ছেলে-মেয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ হুবহু মুখস্থ বলতে পারে। সম্ভবত পৃথিবীতে আর কোন ভাষণ এতোবার উচ্চারিত হয়নি। কী ছিলো সেই ভাষণে? যা শুনে সাতকোটি নিরস্ত্র বাঙালি নিজের জীবনকে হাতের তালুতে নিয়ে পঙ্গপালের মতো ঝাঁক বেঁধে এগিয়ে যায় নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে? যার প্রতিধ্বনিতে মুখর হয়ে নিমিষে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সামনে? কী ছিলো সেই অবাক করা জাদুমন্ত্রের বাণীতে? যাতে একটি দেশের জন্ম হয়ে গেলো? যে দেশটির নাম বাংলাদেশ।
শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সত্যবচন বা উক্তির নাম বাণী চিরন্তনী। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেক বক্তব্য রেখেছেন। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও সংস্থায় কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো মহান ব্যক্তির উক্তি এসেছে তাঁর জীবনে চলার পথে বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। যেগুলো চিরন্তন সত্যবচন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে বলে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণার বাণী আজ বাঙালির পথ চলাকে সহজ করে দিয়েছে। জাতি হিসেবে বড় হতে হলে- নেতা, জ্ঞানী, শিক্ষক ও অভিজ্ঞদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর বাণী, কথা ও কাজের মাধ্যমে অনুসারী ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে গেছেন অপার শিক্ষা। বিভিন্ন সময়ে তাঁর দেয়া বক্তব্য এবং লেখায় উঠে এসেছে এদেশের প্রতি এবং এদেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রতিফলন। সেগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ জেনেছেন ও পড়েছেন। জাতির পিতার কথাগুলো অমীয় বাণী হিসেবেই বাংলার মানুষের কাছে পরিচিত। স্বাধীনতায় উদীপ্ত বঙ্গবন্ধুর উক্তিসমূহ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়, প্রেরণামূলক ও অনুসরণীয় হওয়ায় এখানে বঙ্গবন্ধুর কিছু চিরন্তন বাণী গ্রন্থিত হলো।
* বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানদের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে। খ্রিস্টান তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না।
* যার মনের মধ্যে আছে সাম্প্রদায়িকতা, সে হলো বন্য জীবের সমতুল্য।
* আমরা দুঃখ ভোগ করিতে পারি কিন্তু মরিব না। টিকিয়া থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করিতে জনগণের দৃঢ়তাই চরম শক্তি। আমাদের লক্ষ্য স্ব-নির্ভরতা। আমাদের পথ হইতেছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ প্রচেষ্টা।
* এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম... জয় বাংলা।
* তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে; মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো; তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
* একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।
* আমলা নয়, মানুষ সৃষ্টি করুন।
* মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন তবে জনসাধারণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে।
* দেশটা তো শুধু মধ্যবিত্তের না, আমার গরিব দুঃখী মানুষের। আসল ত্যাগ তো তারাই স্বীকার করেছে। তাদের অবস্থার পরিবর্তন যদি করতে পারি তবেই অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।
* অযোগ্য নেতৃত্ব নীতিহীন নেতা ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনদিন এক সাথে হয়ে দেশের কাজে নামতে নেই। তাতে দেশ সেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়।
* আমার দেশের মানুষ আমাকে জাতির পিতা বলে, কতজন আমার জন্য রোজা রেখেছে, জান দিয়েছে-আমার দায়িত্ব বড় বেশি।
* আমি আমার জন্মদিনের উৎসব পালন করিনা। এই দুঃখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কি?
* দেশের গণমুখী সংস্কৃতিকে বিকশিত করার উদ্দেশ্যে সাহিত্য-সঙ্গীতে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের জনগণের আশা-আকাঙ্খা, সুখ-দুঃখকে প্রতিফলিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুপ্ত শক্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্খাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি।
* আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাইনা, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই।
* বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্ত শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।
* যিনি যেখানে রয়েছেন, তিনি সেখানে আপন কর্তব্য পালন করলে দেশের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে না।
* যে মানুষ মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত কেউ তাকে মারতে পারে না।
* আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।
* ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।
* বাংলাদেশ বড় কঠিন জায়গা। মনে হয় যেন বাঘের পিঠে চড়ে বসেছি।
* আমি আমার বাংলার মানুষকে ভালোবাসি। আমি বাংলার আকাশকে ভালোবাসি। আমি বাংলার বাতাসকে ভালোবাসি। আমি বাংলার নদ-নদীকে ভালোবাসি। আমি বাংলার প্রত্যেক মানুষকে মনে করি আমার ভাই, মাকে মনে করি আমার মা, ছেলেকে মনে করি আমার ছেলে। এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। একে গড়তে হবে। চাই ত্যাগ ও সাধনা। ত্যাগ এবং সাধনা ছাড়া এ দেশকে গড়া যাবে না।
বঙ্গবন্ধুর জীবনী যেমন চমকপ্রদ তেমনি তার বাণীসমূহও চমকপ্রদ। বঙ্গবন্ধু শুদ্ধাচারি মহামানব ছিলেন। তাঁর উক্তি শুদ্ধাচার প্রভাবিত করে। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশ বিদেশে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদন, পুস্তক, ডকুমেন্টারি, গ্রন্থ ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। চলছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদগণের নিরন্তর গবেষণা-বিশ্লেষণ। আমরা যেমন বলি, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ তেমনই আমরা সবাই কিন্তু এক বাক্যে আজ বলতেই পারি- ‘দল যার যার, বঙ্গবন্ধু সবার’। বঙ্গবন্ধুর বাণী, আদর্শকে বুকে ধারণ করে এদেশের তরুণ প্রজন্ম নিশ্চয় একদিন বিশ্বের বুকে উপহার দেবে আরও উন্নততর সমৃদ্ধ-সুন্দর আগামীর অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?