মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মজুদ রক্ত কতোটা ভালো?

শেখ আনোয়ার

১১:২৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১১:২৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

১৩৮৪

মজুদ রক্ত কতোটা ভালো?

মানুষের শরীরের একটি অতি দরকারি উপাদান হচ্ছে রক্ত। শরীরের রক্ত সাধারণত দু’ধরণের উপাদানে গঠিত। রক্ত কোষ ও রক্তরস। এই রক্তরস বা প্লাজমা ও রক্তকণিকা (লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা) নিয়ে গঠিত যে তরল যোগকলা মানুষ ও প্রাণীরদেহে শ্বাসবায়ু পরিবহন, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখা এসব নানান কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায়, রক্ত এক রকমের তরল যোগকলা। রক্তে কোষীয় উপাদান তুলনামূলক কম থাকে। রক্ত হালকা লবণাক্ত স্বাদ হয়। রক্ত ক্ষার প্রকৃতির হয়। মাছ, উভচর, সরীসৃপ প্রাণীদের রক্ত শীতল এবং পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের রক্ত উষ্ণ হয়। মানুষের রক্তে শতকরা ৫৫ ভাগ রক্ত রস অর্থাৎ প্লাজমা এবং শতকরা ৪৫ ভাগ রক্তকণিকা থাকে। একজন মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৮% রক্ত দেহে থাকে।

রক্তের চাহিদা নানান দুর্যোগের সময় বেড়ে যায়। যেমন, রানা প্লাজা ধস বা ডেঙ্গুর প্রকোপ ইত্যাদি। এছাড়া শরীর বৃত্তীয় নানা কারণেও রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। কোন কোন সময় রোগ বাসা বাঁধে রক্ত স্রোতে। তখন জীবন হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। কখনও বা মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় মানুষের জীবন। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজকাল রক্তের দূষণ রোধে হরেকরকম ওষুধ ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজনে দূষিত রক্ত ফেলে দিয়ে ফ্রেস রক্ত যোগান দেয়ার ব্যবস্থা করা যায়। 

অবশ্য এসব ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রক্তদাতার প্রধান উৎস হলো- রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনার। যেমন, আপনার প্রয়োজনে আপনার আত্মীয়স্বজন এসে রক্ত দিলো। আর স্বেচ্ছায় রক্ত দিলো হয়তো নির্দিষ্ট সময় পর পর। কে রক্ত পাবে? কোথায় যাবে? কী হবে কিছুই সে জানবে না। এই স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার ৩১ ভাগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে প্রকাশ, আমাদের দেশে বছরে আট লাখ ব্যাগ বা ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সাত লাখ ইউনিট সংগ্রহ করা হয়, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। যার ৩১ ভাগ সংগ্রহ করা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে। আর বাকিটা রিপ্লেসমেন্ট ডোনারের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই এখনো বছরে এক লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি রয়েছে। অনেক সময় দুর্ঘটনাজনিত রক্তাল্পতার ঘাটতি পূরণে দরকার হয় সমগোত্রীয় রক্তের। তাই আগাম রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এই সংরক্ষিত বা মজুদকৃত রক্ত সম্পর্কে স¤প্রতি ভয়ঙ্কর তথ্য উপস্থাপন করেছেন একদল মার্কিন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী। তাদের ভাষায়, দীর্ঘদিন মজুতকৃত বাসি রক্ত রোগীর শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে অবস্থিত কোপার ইউনিভার্সিটি হসপিটালের একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং রোগীর শরীরে সরবরাহ-পরবর্তী নানান দিক নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন। এ সময় তারা রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে এমন ৪২২ জন রোগীর ওপর পর্যবেক্ষণ করেন। প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে রচিত নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ানদের এক সম্মেলনে। তাতে উল্লেখ করা হয়, গড়ে ২৬ দিনের পুরনো বা বাসি রক্ত সরবরাহের প্রমাণ তারা পেয়েছেন। ৭০ ভাগ রোগীর দেহে সরবরাহ করা হয় ২১ দিনেরও বেশি পুরনো রক্ত।

মোদ্দাকথা, মোট রোগীর ৫৭ ভাগের মধ্যেই সংক্রমণের আলামত পেয়েছেন গবেষকদল। সংগৃহীত রক্ত তিন থেকে সাড়ে তিনদিনের মধ্যে রোগীর শরীরে সরবরাহ করা সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা। পক্ষান্তরে তাদের অভিমত, ২৮ দিনের বেশি পুরনো রক্ত সরবরাহের ক্ষেত্রে রোগীর দেহে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বেশি পরিমাণ রক্ত সরবরাহ এ ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রক্তদূষণ অথবা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে দ্বিগুণ। গবেষকদের মতে, দুই সপ্তাহের বেশি আগে সংগৃহীত রক্ত মজুত করে রাখলে রক্তের লোহিত কণিকা পরিবর্তন হতে শুরু করে। যার ফলে ‘সাইটোকিন্স’ নামক এক প্রকার রসায়নের উপস্থিতি ঘটে। যার কাজ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। এর মাত্রা আরো বেড়ে গেলে রোগীকে সংক্রমণের জন্য করে তোলে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। সংক্রমণের আশক্সকাও ঠিক তখন থেকেই শুরু হয়ে যায়।

তাই একথা মনে রাখা দরকার, জীবন রক্ষায় যে রক্ত মুখ্য ভ‚মিকা পালন করছে। মরণকে ত্বরান্বিত করতেও সেই রক্ত ভয়ানক ভাবে দায়ী। অবশ্য এক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হচ্ছে, রোগীর শরীরে সরবরাহকৃত রক্ত দূষিত নাকি দূষণমুক্ত? দূষণমুক্ত নির্ভেজাল রক্ত শরীরের জন্য আশীর্বাদ। এই রক্ত রোগ প্রতিরোধের সহায়ক অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। আর দূষিত রক্ত জীবন সংহারী বুমেরাং হিসেবে উল্টো ক্ষতি করে থাকে। 

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank