মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টিকা নেওয়া এক স্বস্তির সকাল

শিরিন জাহান

১৮:৪১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৯:১১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

৬৫০

টিকা নেওয়া এক স্বস্তির সকাল

সকাল তখন ৯টা। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ঢুকেই ডানে সারি সারি চেয়ার। হলুদ-নীল। আরও একটু ডানে এক সারিতে চারটি স্ট্যান্ডবোর্ড। তাতে সেঁটে দেওয়া হয়েছে, এই সেন্টারে ১৮ ফেব্রুয়ারি যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের নাম। একজন এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন, ‘আজ টিকার তারিখ?’ হুম- বলতেই বোর্ডগুলো দেখিয়ে বললেন, ওখানে আপনার নাম থাকবে, সেটা খুঁজে নম্বর বের করুন।

তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই হাসি মুখে এগিয়ে এলো এক লাল জ্যাকেটে রেড ক্রিসেন্টের তরুণী স্বেচ্ছাসেবী। মিষ্টি কণ্ঠে বললো, ওখান থেকে নিজে খুঁজে নিতে পারবেন। আমরাও খুঁজে দিতে পারবো, তাতে একটু সময় লাগবে। এখানে কিউতে দাঁড়াতে হবে। 

রেড ক্রিসেন্টের অপর কর্মী একটি টেবিলে বসে নাম খুঁজে দিচ্ছেন। তার সামনে ৭/৮ জন কিউতে দাঁড়িয়ে। বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলাম।  হাজার কিছুর মধ্যেও নিজের নামটি (যদি থাকে) কে না খুঁজে পায়! সুতরাং মিনিট তিনেকের মধ্যে নাম চোখে পড়লো। নাম জানতেই কি এই খোঁজা। নিশ্চয়ই না। এই নামের বিপরীতে একটি নম্বর রয়েছে, সেটি খুঁজতেই এই চেষ্টা। 

সে নম্বরটি নিয়ে অপর টেবিলে যিনি বসে আছেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী তার সামনে গেলাম। জনা চারেকের কিউ। তাকে নম্বর বলতেই নিজের কাছে থাকা তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে নিলেন এবং চেয়ে নিলেন সঙ্গে নিয়ে যাওয়া টিকার কার্ডটি। যা আগেই পাওয়া গিয়েছিলো রেজিস্ট্রেশন করে। এতে নম্বরটা লিখে দিয়ে বললেন, এটাই আপনার টিকা দেয়ার নম্বর।

ফর্মে তারিখ লিখে স্বাক্ষর করতে বললেন। ব্যস, আনুসঙ্গিক কাজ একটুকুই। এবার হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতেই গেটে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী। লাল জ্যাকেটের একজন এগিয়ে এসে কার্ড দেখে তিন নম্বর কাউন্টারে যেতে বললেন। সেখানে এগিয়ে যেতেই আরেকজন এগিয়ে এসে কার্ডটা সংগ্রহ করে সামনের একসারি চেয়ারের দিকে নির্দেশ করে বললেন, ওখানটাতে পিছনের দিকে বসুন। 

এখানে তখন ডজন খানেক মানুষ বসে। তারা টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষমান। একেকটি নাম ডাকা হচ্ছে। একেক জন এগিয়ে যাচ্ছেন। টিকা নিচ্ছেন। সময় লাগছে সব মিলিয়ে এক থেকে দেড় মিনিট করে। সুতরাং সামনের সিটগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। আর এক এক করে ভরে যাচ্ছে একটু পিছনে পেতে রাখা আরেক সেট চেয়ার। এখানে সামনে ছোট বোর্ডস্ট্যান্ডে লেখা- টিকা নেওয়ার পর ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিন। 

টিকার পালা এলো। নাম ধরে ডাক। এগিয়ে যেতে স্বেচ্ছাসেবী মেয়েটি নিজেই চেয়ে নিলো ফোন। ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। একজন নার্স নাম ও মায়ের নাম জানতে চেয়ে নিজের সঙ্গে থাকা তালিকা মিলিয়ে নিলেন। অপর নার্স হাতে সিরিঞ্জ নিয়ে এগিয়ে এলেন। বাম বাহুতে একটু চাপ দিয়ে অতি দক্ষতায় সুঁই ফুঁটিয়ে দিলেন। সামান্যই ব্যথা টের পাওয়া গেলো। শরীরে ঢুকে পড়লো করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক। 

গত একটি বছর কী আতঙ্কেই না কেটেছে। তাড়া করে ফিরেছে এক অদৃশ্য ভাইরাসের ভয়। সে ভাইরাস তো একবার পরিবারে ঢুকে পড়লো। ১৫টি দিন অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে ছেড়েছে। সুতরাং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার অনুভূতিতে স্বস্তিটাই সবচেয়ে বড় হয়ে ধরা দিলো। 

লাল জ্যাকেটধারী স্বেচ্ছাসেবী ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো, একটু এগিয়ে গিয়ে পিছনের সারিতে বসুন। ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিন। সেখানে বিশ্রাম চলছে। স্বেচ্ছাসেবীরা ঘুরে যাচ্ছে একটু পর পর দেখছে, কারো কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। না আমাদের সমস্যা হয়নি কোনও। দেখিওনি কারো সমস্যা হতে। এরই মধ্যে এক স্বেচ্ছাসেবী মেয়েটি এসে নাম ডেকে কার্ডটি ফিরিয়ে দিয়ে বললো ১৮ এপ্রিল ফের এসে টিকা দিয়ে যাবেন। 

এর মধ্যে মিনিট ত্রিশেক কেটে গেলো। বেরিয়ে এলাম। বাইরে তখন ঝকঝকে রোদ। এক ভিন্ন পরিবেশ। ২০২০ সালের এই সময়ে মানুষ একটি বোবা আতঙ্ক ধীরে ধীরে ঘিরে ধরছিলো প্রতিটি মানুষকে। ২০২১ সালের সেই সময়টিতে এসে আতঙ্ক কাটছে, টিকা আনছে এক স্বস্তির জীবন। সকলকেই নিতে হবে এই টিকা। টিকা নিয়ে নিন।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank