মনের ইচ্ছায় চ্যানেল বদলায়
মনের ইচ্ছায় চ্যানেল বদলায়
ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। জ্বী হ্যাঁ। এই ইচ্ছা বা ইচ্ছাশক্তি দিয়ে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। মানুষ তার এই ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পৃথিবীর অনেক অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে। এবার বিজ্ঞান এই ইচ্ছাশক্তি বা মনের শক্তি দিয়েই যন্ত্র চালানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছে।
কিভাবে?
প্রযুক্তি গবেষকরা বলেন, আমরা যে আমাদের মস্তিষ্কে নানা চিন্তা-ভাবনা করি কিংবা মনে মনে কল্পনা করি, তা অন্য কেউ না বুঝলেও তা নানা ধরনের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের আকারে নির্গত হয়। কিন্তু এ ধরনের তরঙ্গ খুব দুর্বল প্রকৃতির তরঙ্গ বলে তা থেকে তার চিন্তাধারা বের করা খুবই কঠিন কাজ। তবে ব্যক্তি রেগে আছেন কী না, কিংবা তিনি কোনো সুখকর মুহুর্তে কল্পনা করছেন কী না তা কিন্তু এমনিতেই কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়।
এবার মনের ইচ্ছার এই বিষয়টা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলো বিজ্ঞান। আমাদের মস্তিষ্কের এই ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে জাপানের এক বিজ্ঞানী একটি মজার কাণ্ড ঘটিয়েছেন। হিদেনরি অনিসি নামের ওই বিজ্ঞানী একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন। যা মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে নির্ণয় করে তাকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিণত করছে।
যন্ত্রটি মাথায় পরে যন্ত্রটার সঙ্গে যুক্ত সেন্সরের মাধ্যমে কী বোর্ডের সিগন্যাল, টিভি পর্দার চ্যানেল ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা যায়। বিজ্ঞানী অনিসি দাবি করেছেন, তার এই যন্ত্রটিই পৃথিবীর পয়লা নম্বর যন্ত্র। যার সাহায্যে ইচ্ছাশক্তি দিয়ে বিভিন্ন ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। এই যন্ত্রের নাম ‘দ্য ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস’ বা বিসিআই মেশিন। এটি এমন এক হেডসেট, যা মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ পড়তে পারে। ডিজিটাল যুগের অবাক করা এই যন্ত্র এখন যে কোন মানুষ ব্যবহার করতে পারবেন। প্রযুক্তি গবেষকরা জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কের সংকেত ব্যবহারে এর জুড়ি মেলা ভার। কম্পিউটার ইন্টারনেট, স্মার্ট টিভি, হুইল চেয়ারসহ যাবতীয় ওয়াইফাই ডিভাইসের সঙ্গে এটি দারুণ কাজ করে।
এই যন্ত্র পঙ্গু লোকদের জন্য খুব সুবিধা এনে দেবে। যারা শরীরের বিভিন্ন অংশ নড়াচড়া করতে পারেন না, তারা ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নানা ধরনের কাজ করতে পারবেন। বিজ্ঞানীরা বলেন-এ ধরনের যন্ত্র অবশ্য আগেও তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা প্রচন্ড দামি অথবা অবাস্তব কার্যপ্রক্রিয়া করতো। আমেরিকায় এর আগে এ ধরনের যন্ত্র আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে মাথার ভেতরে ঢোকাতে হতো একটি ডিভাইস। কিন্তু এই যন্ত্রতে সেরকম কিছুই করতে হবেনা। যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা সাধারণ অডিও হেডসেটের মতো। ব্যবহারকারীর আগাম কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। হেডসেটের মতো মাথায় পড়ে শুধু মনে মনে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বললেই চলে।
উল্লেখ্য, আমাদের মস্তিষ্কের নার্ভ কোষগুলো যে বিভিন্ন ধরণের তরঙ্গ নিগর্ত করে, তার মধ্যে বিটা তরঙ্গকে চিহ্নিত করে বিসিআই কাজ করে। বিসিআই পরবর্তী সময়ে সেই সিগন্যাল একটি কম্পিউটারে পাঠায় এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এই যন্ত্র আবিষ্কার বর্তমান ডিজিটাল বিশ্বে আশার আলো জ্বালিয়ে দিলো। সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই। যখন কী না পত্রিকার জন্য মনে মনে একটা নিবন্ধ লিখতে চাইলেই তা লেখা হয়ে যাবে। তবে যদি এমন যন্ত্র আবিষ্কার হয়, যা মানুষের মনের গোপন কথা আগাম বুঝে ফেলতে পারে। তখন? তখন কিন্তু অবস্থাটা একটু বিব্রতকর অবস্থাই হবে বৈকি!
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?