ক্যামেরা গিলে খাই
ক্যামেরা গিলে খাই
এক সময় ক্যামেরা দেখতে ছিলো একটা ডাউস বাক্সের মতো। স্ট্যান্ডের উপরে দাঁড় করানো এইসব ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে সামনের লেন্সের মুখের ঢাকনা খুলে ছবি তুলতে হতো। তারপর ছোট হতে হতে ক্যামেরা চলে এলো একদম হাতের তালুতে। এখন তো ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা ব্যাগে করে বয়ে নিয়ে যাবারও প্রয়োজন হয় না। হাতের স্মার্টফোন দিয়েই সেই কাজ করে ফেলা যায়। এর চেয়েও ছোট ক্যামেরার হাল হকিকত জানতে হলে আমাদের যেতে হবে শরীর বিজ্ঞানের জগতে।
প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখন আর কারও মন ভরে না। ডিজিটাল যুগে সবাই চায় চিকিৎসা পদ্ধতি এমন হোক, যাতে রোগীকে দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে না হয়। তাই অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসা না করে চিকিৎসকরাও চান চিকিৎসা শুরু করার আগেই রোগের কারণ, উৎপত্তিস্থল, কি ধরনের রোগ ইত্যাদি সবকিছু ঠিকঠাক জেনে নিতে। শরীরের বাইরে কোনও অংশে অসুখ-বিসুখ হলে তা বোঝা সহজ। কিন্তু শরীরের ভেতরে রোগের উৎপত্তিস্থল হলে তা বোঝার জন্য যন্ত্রের অর্থাৎ প্রযুক্তির সাহায্যের প্রয়োজন হয়।
পেটের ভেতরে কোনও অসুখ হলে মূলত অ্যান্ডোস্কোপ-এর সাহায্যে তা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রচলিত এই পদ্ধতিতে আমাদের শরীরে অবস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রের সম্পূর্ণ ছবি তোলা সম্ভব নয়। মুখ ও গলার ভেতর দিয়ে অপটিক ফাইবার নলের সাহায্যে অ্যান্ডোস্কোপ করলে ক্ষুদ্রান্তের সাড়ে চার ফুট ভেতর পর্যন্ত, আর মলদ্বার দিয়ে কোলোনোস্কোপি করলে ক্ষুদ্রান্তের ছয় ফুট অভ্যন্তর পর্যন্ত খবরাখবর পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ক্ষুদ্রান্তের মাঝখানের প্যাঁচানো বাকি সাড়ে দশ ফুটের কোথাও কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে কি করে বোঝা যাবে? চিকিৎসা জগতে এই অসুবিধা দূর করতে বাজারে এলো এক ধরনের ক্যামেরা। যা পেটের ভেতর গিয়ে একুশ ফুট লম্বা ক্ষুদ্রযন্ত্রের কোথায় কি গন্ডগোল হয়েছে তার বিস্তারিত ছবি তুলে বাইরে রাখা টিভির পর্দায় ঝকঝকে ফুটিয়ে তুলতে পারে।
এই ক্যামেরা দেখতে একটা ছোট ক্যাপসুলের মতো। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর নাম ‘পিল ক্যাম ক্যাপসুল অ্যান্ডোস্কোপ’। ক্যাপসুল আকারের এই ছোট ক্যামেরাটির ভেতরে আটটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলো অপটিক্যাল ডোম, লেন্স সোল্ডার, লেন্স, লাইট অ্যামিটেটিং ডায়োড সংক্ষেপে এলইডি, সিএমওএস ইমেজার (পরিপূরক মেটাল অক্সাইড সেমি কন্ডাক্টর), ব্যাটারি দু’টি, এএসআইসি (এটা একটা সার্কিট ট্রান্সমিটার) ওয়াইফাই এবং অ্যান্টেনা। ওয়াইফাইয়ের সাহায্যে এই অ্যান্টেনা ক্ষুদ্রযন্ত্রের ছবির সঙ্কেত বাইরে পাঠিয়ে দেয়। বাইরে রাখা আর একটি ট্রান্সমিটার যা গ্রহণ করে মনিটর টিভির পর্দায় সেই ছবি ফুটিয়ে তোলে। মাত্র ২৫ মিলিমিটার লম্বা সাধারণ অন্য ওষুধ ক্যাপসুলের মতই এই ক্যাপসুল পানির সঙ্গে সহজেই গিলে খাওয়া যায়।
খাদ্যনালীতে প্রবেশ করার পর থেকেই এটা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ছবির সংকেত পাঠাতে শুরু করে। গিলে ফেলা ক্যাপসুল যে সব অঞ্চল দিয়ে চলাচল করতে থাকে বাইরে রাখা টিভির পর্দায় সেই সব অঞ্চলের ছবি ডেসে উঠতে থাকে। এইভাবে একের পর এক ক্ষুদ্রান্ত্রের বিভিন্ন অংশের ছবি টিভির পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে। সেই ছবি দেখে শরীর বিজ্ঞানীরা সহজেই বুঝে নিতে পারেন ক্ষুদ্রান্ত্রের কোন অংশ রোগাক্রান্ত হয়েছে? কি ধরনের রোগ হয়েছে? ইত্যাদি। তবে এই পিল ক্যাম ক্যাপসুল অ্যান্ডোস্কোপের মাধ্যমে চিকিৎসা খুব ব্যয় সাপেক্ষ। একটা ক্যাপসুল একবারই ব্যবহার করা যায়। কারণ রোগীর দেহ থেকে মলের সঙ্গে এটা বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই একে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করার কোনও সুযোগ আর থাকে না।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?