ভালো থাকবো ভালো রাখবো, প্রত্যয়ে
মাস্ক বিতরণ ও একটি সুন্দর সকালের গল্প
ভালো থাকবো ভালো রাখবো, প্রত্যয়ে
মাস্ক বিতরণ ও একটি সুন্দর সকালের গল্প
একজন অন্ধ যাত্রী ঢুকছিলেন তার মুখে মাস্ক ছিলো না। মায়ের হাত ধরে শিশুটি ঢুকছিলো তার মাস্ক ছিলো না। মায়ের মুখের মাস্কটিও সাধারণ, দীর্ঘ ব্যবহারে নোংরা। একটু পরেই ছেড়ে যাবে একতা এক্সপ্রেস। যাত্রীরা উঠবেন সে ট্রেনে। সেখানে অনেক যাত্রীর ধাক্কাধাক্কি ঠেলাঠেলি। তার মাঝে তারা উঠে পড়লে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতো। কিন্তু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঢোকার পথেই তাদের সে ঝুকিমুক্ত করলো স্পিক আউট।
শুক্রবার (১১ সেপ্টম্বর) সকালে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছিলো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশদ্বারে। যে যাত্রীদের মুখে মাস্ক ছিলো না তাদের যেমন দেওয়া হচ্ছিলো, যাদের আছে কিন্তু বহু ব্যবহারে পুরোনো তারাও পাচ্ছিলেন। যাদের ছিলো তারাও কেউ কেউ নিয়ে গেছেন একটি করে। কারণ এগুলো ছিলো সার্জিক্যাল মাস্ক। অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও ব্যবহারোপযোগী।
স্পিকআউটের স্বেচ্ছাসেবীরা অনেক যাত্রীর ভীরেও প্রতিটি মানুষের হাতে মাস্ক তুলে দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ শিশুদের পরিয়ে দিচ্ছিলেন, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কর্মসূচির নাম- করোনা মুক্তির জনসচেতনতায় মাস্ক বিতরণ। তবে একটি বিষয় স্বেচ্ছাসেবীদেরও মুগ্ধ করেছে, তা হচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শুক্রবার সকালে যে যাত্রীরা ঢুকছিলেন, তাদের ৯৫ শতাংশেরই মুখে মাস্ক ছিলো। সাধারণের সেই সচেতনতায় সকলেই মুগ্ধ।
গেট থেকে একটু দূরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন। তাদের মধ্যমনি হয়ে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ মোর্শেদ। মুগ্ধচোখে এর কারণ তাকেই জিজ্ঞাসা করলেন পাশে দাঁড়ানো চিকিতসক, সঙ্গীত শিল্পী ঝুমু খান। সচিব বললেন, রেলওয়েতে সেই শুরু থেকেই ক্যাম্পেইন চলছে, মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক ছাড়া যাত্রী ট্রেনে উঠবে না। সে কারণে সচেতনতা কিছুটা বেড়েছে। তার পরেও স্পিক আউটের এমন কর্মসূচির আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানালেন, বললেন, সচেতনতা তৈরিতে ও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
অতিরিক্ত সচিবের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলালেন রেলের উপসচিব মীর আলমগীর হোসেনও। তিনি বললেন, রেল শুরু থেকেই বিষয়টিতে সতর্ক রয়েছে। তবে স্পিক আউটের এই কর্মসূচি তাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। রেলকে সম্পৃক্ত করে স্পিক আউট আরো এ ধরনের যে সব কর্মসূচি নেবে তাতে মন্ত্রণালয়ের ও রেল বিভাগের সহায়তা থাকবে, বলেন তিনি।
এতে খুশি সুপন রায়। এক সময়ের নামকরা রিপোর্টার। এখন স্পিক আউটের কর্ণধার। তিনি বলছিলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য জনসচেতনতা তৈরি। একটি কর্মসূচিতে স্পিক আউট আর ক’টিই বা মাস্ক বিতরণ করতে পারে। মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা জলের মতো। কিন্তু এতে যতজন মাস্ক পাবে, তার চেয়ে দেখবে অনেক বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে।
ঝুমু খানও এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের একজন। তিনি শেয়ার করছিলেন স্পিক আউটের আগের কর্মসূচিগুলোর অভিজ্ঞতার কথা। এর আগে তারা মাস্ক বিতরণের দুটি কর্মসূচি করেছেন। সে দুটিতেই সাড়া পেয়েছেন সহাস্রাধিক করে মানুষের মুখে মাস্ক তুলে দিতে পেরেছেন। তবে অন্য দুটি, যার একটি হয়েছিলো মানিক মিয়া এভিনিউতে, অপরটি সদরঘাটে, কর্মসূচিতে মানুষকে এতবেশি মাস্ক পরতে দেখেননি, যতটা রেলের যাত্রীরা পরেছিলেন।
দিনটি ছিলো সাপ্তাহিক ছুটির। তার মাঝেও প্রায় অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবী ও অতিথি যোগ দিয়েছিলেন এই মাস্ক বিতরণ কর্মসূচিতে। রেলের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার, স্টেশন ম্যানেজারসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের আন্তরিকতায় কর্মসূচিটি সুচারুভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
উপস্থিত হয়েছিলেন আককাস মাহমুদ, ফেরদৌসি নার্গিস ঝুমা, সুমাইয়া সামসুদদোহা ও উজজল কান্তি বিশ্বাস যারা আগের কর্মসূচিগুলোতেও অংশ নেন এবারেও ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় টেলিভিশন উপসহাপক আনজাম মাসুদ, অপরাজেয় বাংলা’র সম্পাদক মাহমুদ মেনন, এয়ার ইনডিয়ার বাংলাদেশ ম্যানেজার নারায়ন সাহা মনি, বিআইএফএফএল এর সাবেক সিইও ফরমানুল ইসলাম, মিডল্যানড ব্যাংকের ইভিপি মো. ইকবাল, মানবজমিনের বার্তা সম্পাদক কাজল ঘোষ।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এই ভেনুতেও স্বেচ্ছাসেবীরা সহস্রাধিক মাস্ক বিতরণ করলেন। কেবল গেট দিয়ে যারা ঢুকেছেন তাদের, আগেভাগে যারা ঢুকে পড়ে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন তাদের মধ্যেও ঘুরে ঘুরে মাস্ক বিতরণ করলেন তারা। শিশুদের পরম মমতায় মাস্ক পরিয়ে দিলেন, আর বড়দের বিনয়ের সাথে সচেতন করলেন মাস্ক পড়তে হবে।
ভালো থাকবো, ভালো রাখবো-এই ধারনায় বিশ্বাসী এতগুলো মানুষের এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টায় একটি পালক যুক্ত করবে। আর ধন্যবাদ বন্ধু সাংবাদিক সুপন রায়কে, আমাকে এই কর্মসূচিতে ডাকার জন্য এবং অন্য অনেকের সঙ্গে আমাকেও এমন একটি সুন্দর সকাল উপহার দেওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?