মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শিম্পাঞ্জী নিজেই নিজের ডাক্তার

শেখ আনোয়ার

১৬:৫২, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৬:০৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

৭৪৪

শিম্পাঞ্জী নিজেই নিজের ডাক্তার

শিম্পাঞ্জীদের নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছেন নৃ-বিজ্ঞানী রিচার্ড রাঙহ্যাম। ওদের স্বভাব এবং খাদ্যাভাস জানার জন্য তিন তিনটি বছর তিনি আফ্রিকা, তানজানিয়ার গহিন জঙ্গলে কাটান। শিপাঞ্জীদের প্রিয় খাবারের নামগুলো তার ঠোঁটস্থ। প্রতিদিন তিনি লক্ষ্য করেন শিম্পাঞ্জীরা ধারে কাছের গাছ থেকে ফলমূল খায়। একদিন দেখা যায় হঠাৎ অসুস্থ এক শিম্পাঞ্জী কোন রকমে হাঁচড়ে পাঁচড়ে চলে গেলো একটা ঝোঁপের ভেতর। অচেনা এক গাছের পাতা চিবোতে শুরু করলো। রসটুকু ছিবড়ে খেলো। পরদিন বিকেলে ঠিক আগের মতোই সুস্থ দেখালো ওই শিম্পাঞ্জীকে। ব্যাপারটা ভাবনায় নাড়া দিলো তাকে। ফলমুল খাচ্ছে খাক। কিন্তু গাছের পাতা কেন খায়? এমনিতে অন্য কোন সময় ওই পাতাগুলো ছুঁতেও দেখা যায় না ওদের। 

ব্যাপার কী! ধারে কাছে পাতাগুলো না পেলে ওরা প্রায় আধ ঘন্টার মতো হেঁটে গিয়ে অন্য জায়গা থেকে খেয়ে আসে ওই পাতা। তিনি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন, শিম্পাঞ্জী প্রথমে মুখে পুড়ে দেয় আস্ত পাতা। তারপর মনে হয় যেনো জিভে পাতাগুলো খুব কষে দাঁতে ঘষছে। এ সময় নাকটা ভয়ানক কুঁচকে যায়। পাতাগুলো গিলতেও থাকে খুব ধীরে ধীরে। গেলার সময় চোখ দুটো বুঁজে আসে। নৃ-বিজ্ঞানী একবার এই পাতার স্বাদ পরখ করে দেখেন বিচ্ছিরি তেতো। পরে পাতাগুলো রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ওতে রয়েছে এক ধরণের লাল তেল। যা কৃমি জাতীয় পরজীবী ধ্বংসের মোক্ষম ওষুধ। পরে জানা যায়, পেটের গোলমাল সারাতে তানজানিয়ার বনাঞ্চলের স্থানীয় বান্দিারাও ওই পাতার রস খেয়ে রোগ মুক্ত থাকে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, পাতাগুলো না চিবিয়ে ওরা জিহবায় ঘষে কেনো? গবেষণায় জানা যায়, পাতার রসটাকে সরাসরি রক্ত প্রবাহে মিশিয়ে দিতে চায় ওরা। সরাসরি পেটের ভেতর গেলে পাকস্থলীর অ্যাসিডের প্রভাবে নষ্ট হতে পারে ওষুধী গুণাগুণ। মানুষ যেমন কোন কোন ওষুধ সরাসরি গিলে না খেয়ে চুষে খায়। শিম্পাঞ্জীদের কাছে হয়তোবা পাতাগুলো সেরকমই চুষে খাবার ট্যাবলেট। তিনি নিশ্চিত হন, পাকস্থলীর পরজীবীদের সাফ করতেই ওরা খায় এই পাতা। দেখা গেছে ভেজা মৌসুমেই বেশি করে পাতা খায় ওরা। এই সময়ে ওদের পরজীবীর উপদ্রবটা বেশি থাকে। শিম্পাঞ্জী যে জেনে শুনেই পাতাগুলো খায় এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত। 

বনের গাছ-গাছড়া থেকে নিজের ডাক্তারি নিজেই করার এই বিদ্যাটা ওরা শিখে নেয় মা-বাবার কাছ থেকে। কোন অসুখে কোন গাছের পাতা বা ছাল-বাকলা খেতে হবে। শুধু শিম্পাঞ্জীই নয়, কোস্টারিকার মুরিকি এবং হাউলার নামক বানর অসুখে এরকম গাছের পাতা খায়। অবশ্য এই পাতাগুলোয় রাসায়নিক উপাদান ট্যানিনে ভরপুর। আর কে না জানে, ট্যানিন পরজীবী রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে ওস্তাদ। ব্রাজিলের স্থানীয়রা ট্যানিন সমৃদ্ধ গাছ-গাছড়া দিয়ে পরজীবী নাশক ওষুধ তৈরি করে। গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বনের প্রাণী বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে অনেক গাছকেই কাজে লাগায়। সে গাছগুলোর বেশিরভাগই মানুষের অচেনা। যা প্রাণীদের মাধ্যমেই চিনছে মানুষ। এসব গাছের আয়ুবের্দিক গুণ মানুষের বিভিন্ন রোগ বালাই নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। নতুন গাছ আবিষ্কার করে উদ্ভাবন করছেন নতুন নতুন ওষুধ। হয়তো এই প্রাণীরাই একদিন ঘাতকব্যাধি ক্যান্সার, এইডস, এমনকি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথ দেখাবে।

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank