মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

সঙ্গী পেলো বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হাতি

মুনতাসির সিয়াম

১৮:০৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৫:৩০, ৯ ডিসেম্বর ২০২০

১১৩৭

সঙ্গী পেলো বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ হাতি

হাতিটি আকাশে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ঘাড়ে পড়েছিলো একটি জাম্বো রাশিয়ান কার্গো বিমানের। শুধু হাতি নয়, ট্রাঙ্কে করে তার সঙ্গে বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে ২০০ কিলোগ্রাম খাবারও। এতেও দম ফেলার সুযোগ পায়নি কর্তৃপক্ষ। বিবেচনা করতে হয়েছে অন্যান্য দিকগুলোও। মানে খাবার খাওয়ার পর টয়লেট চাপলে কী হবে! তাই বিমানে বানানো হয়েছিলো একটি বিশেষ টিউব সিস্টেম। যেখানে হাতিটির জন্য রাখা হয় ২০০ লিটার পর্যন্ত প্রস্রাব করার ব্যবস্থা।

মাত্র হাতে গোনা কয়েকবার দেখা গেছে এমন ঘটনা। বিমানে উড়িয়ে হাতির জায়গা বদল করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। বাচ্চা একটি হাতির শক্তির কথাই বা কী বলবো! ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফটানি শুরু হলে যেকোন জায়গায় বাধিয়ে ফেলতে পারে লঙ্কাকাণ্ড। আর বিমানে এমন ঘটলে রক্ষা নেই কারোরই। যদিও সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেই কাজটি করেছে কর্তৃপক্ষ।

লঙ্কাকাণ্ড বলতেই মনে পড়লো। যে হাতিটি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এতো সব আয়োজন, এখনো দেয়া হয়নি তার নাম- ধাম-পরিচয়। ওর নাম “কাভান”, জন্ম শ্রীলঙ্কায়। তবে ১৯৮৫ সালে উপহার হিসেবে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানে। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের বন্ধুত্ব আরো বেশি গাঢ় করতেই এ কাজটি করা হয়। এরপর থেকে পাকিস্তানেই জীবন শুরু কাভানের। খুঁজে পায় "সাহেলি" নামের নতুন এক বন্ধুও। ১৯৯০ সালে কাভানের সঙ্গী হিসেবেই মূলত বাংলাদেশ থেকে সাহেলিকে নিয়ে গিয়েছিলো ওখানকার কর্তৃপক্ষ। এতে বেশ খুশিই ছিলো কাভান। অনেকদিন পর নতুন বন্ধু পেয়ে সময়ও কাটছিলো হেলে-দুলে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে শুরু হয় তার একা বেঁচে থাকার লড়াই। সাহেলির অকাল মৃত্যুতে বড্ড একা হয়ে পড়ে বন্ধু কাভান। একরকম ধুকে ধুকেই জীবন পার করছিলো সে।

কাভানের কষ্ট একে একে চোখে পড়তে শুরু করে সবার। ২০১৬ সালে একদল সক্রিয় কর্মীরা ঝড় তোলে প্রতিবাদের। চিড়িয়াখানার খারাপ অবস্থায় হাতিটি যেন প্রাণ না হারায় অকালে। এমনকি কাভানের মুক্ত জীবনের দাবিতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ছুটে এসেছিলেন ‘পপ দেবী’ নামে খ্যাত বিখ্যাত মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী শের। এক পর্যায়ে মামলা গড়ায় আদালতে। তার জের ধরেই এ বছর মে মাসে রায় শোনান একজন বিচারক। কাভানকে ইসলামাবাদ থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে এমন এক জায়গায়, যেখানে দূর হবে তার বন্ধুহীন জীবন। যে জায়গায় কমতি হবে না আদর-যত্ন ব্যবস্থায়। এরপর থেকেই অপেক্ষায় ছিলো কাভান প্রেমীরা। অক্টোবর মাসে পালা বদল ঘটে সে অপেক্ষার। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়- খুব জলদিই হাতিটিকে পাঠানো হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। সে মতোই নভেম্বর মাস জুড়ে দলবেধে শুরু হয় কঠিন সব তোড়জোড়। এমনকি ইসলামাবাদে আয়োজন করা হয় একটি জমকালো বিদায়ী অনুষ্ঠান। সে আয়োজনেও অংশ নেয় শের।

নভেম্বরের শেষ দিন এসে নতুন জীবনের খোঁজ পায় কাভান। সাত ঘন্টার ফ্লাইট চেপে অবশেষে পৌঁছায় তার নতুন ঠিকানায়। কম্বোডিয়ায় ল্যান্ড করার পর তাকে ঘিরে বাদ যায়নি ভক্তদের ধুমধাম হৈ-হুল্লোড়ও। শেষ বেলায় এ আনন্দই বা কী করে মিস করে চের! তাই আগে থেকেই কাভানের জন্য অপেক্ষা করছিলো সেখানে গিয়ে। এভাবে আট বছর পর হাতিটি খুঁজে পায় নতুন বন্ধু। অল্প সময়ের মাঝেই ভাবও হয়েছে নতুন সঙ্গীর সাথে। তাকে ঘিরেই কাভানের এখন সব ব্যস্ততা। দিন যাচ্ছে হেসেখেলে-আনন্দে। ভাবা যায়- এতো বছর সময় যাবত মেশার সুযোগ পায়নি সে কোন হাতির সঙ্গেই!

সবমিলিয়ে এখনকার খোলামেলা নতুন জীবনে সতেজ হয়ে উঠেছে কাভান। কর্তৃপক্ষের আশা, স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে খুব শিগগির বংশ বিস্তারেও ভূমিকা রাখবে সে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank