শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ || ১২ পৌষ ১৪৩১ || ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন কুমিল্লা সতের রত্ন মন্দির

কামাল আতাতুর্ক মিসেল, বাসস

১৩:০৮, ১ জুলাই ২০২৩

৫৩২

স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন কুমিল্লা সতের রত্ন মন্দির

কুমিল্লা জগন্নাথ দেবের মন্দির বা সতের রত্ন মন্দির। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খামার কৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত। কারো মতে সতেরটি রত্ন এটিতে স্থান পাওয়ায় নাম দেয়া হয় সতের রত্ন মন্দির। কারো মতে ১৭টি চূড়ার কারণে এর নাম দেয়া হয় সতের রত্ন মন্দির। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি তীর্থ স্থান হিসিবে বিবেচিত। চারশ’ বছরের প্রাচীন মন্দিরটি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছে সেখানে। বর্তমানে মন্দিরটি সংরক্ষণ করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। 

মন্দির সূত্র জানায়, সতের রতœ মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ত্রিপুরার মহারাজ দ্বিতীয় রতœ মানিক্য বাহাদুর। ১৬৮২-১৭১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিনি কুমিল্লায় জগন্নাথ দেবের মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণ মানিক্য বাহাদুর সতের রত্ন মন্দির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এ মন্দিরটি বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে। অষ্টকোণ আকৃতির স্থাপত্য পরিকল্পনার এ মন্দিরটি সতের চূড়া বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে অধিকাংশ চূড়া ধ্বংস হয়ে গেছে। মন্দিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটটি করে ১৬টিসহ চূড়ার সংখ্যা ১৭টি ছিল। মন্দিরটির ব্যাস ৫২.০৫ মিটার। বাইরের দিক থেকে তিনতলা মনে হলেও মন্দিরটির ভিতরের দিক থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত উঠা যায়। প্রথম তলার উচ্চতা প্রায় ৪.০৫ মিটার। ২.১০ মিটার উঁচু চারটি প্রবেশপথ দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করা যায়। প্রবেশ পথের দুই পাশে রয়েছে নকশা। দ্বিতীয় তলায় ছয়টি জানালা রয়েছে। মন্দিরের প্রতিটি ধাপে রয়েছে নকশা। এছাড়াও মন্দিরটিতে ফুল, লতাপাতা, ঘন্টা ও জ্যামিতিক নকশায় অলংকৃত করা হয়েছে। মন্দিরটি বর্তমানে অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।

মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছায়াঘেরা পরিবেশ। গাছে গাছে ডাকছে বিভিন্ন পাখি। মন্দিরে পূজায় ব্যস্ত লোকজন। প্রাচীন মন্দিরটি দেখতে এসেছেন কয়েকজন। প্রাচীন মন্দিরটির পাশে বর্তমানে রয়েছে আরেকটি মন্দির। রয়েছে তুলসীতলা প্রার্থনা বেদী। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) কুমিল্লা শাখার কার্যালয়। এখানে প্রতি বছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হাজারো মানুষের ভিড় জমে।

ইসকন কুমিল্লা শাখার উপদেষ্টা সদাশিব সিংহ দাস ব্রহ্মচারী বাসসকে বলেন, জনশ্রুতি রয়েছে ১৭টি মূল্যবান রত্ন স্থাপন করা হয়েছে মন্দিরটিতে। সেই রত্ন চুরি করতে চোর মন্দিরের চূড়ায় ওঠে। নামার সময় মন্দিরের ভেতরের গর্তে পড়ে যায়। মন্দির থেকে পাশের পুকুরে সেই গর্তের সংযোগ রয়েছে। চোর বাঁচার জন্য সেই গর্তে দিয়ে পুকুর পর্যন্ত চলে আসে। কয়েকদিন পর তার মৃতদেহ পুকুরে ভেসে ওঠে।
 
এদিকে ত্রিপুরার রাজাকে স্বপ্নে জগন্নাথ দেব বলেন, এখানে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ মন্দিরে আর তিনি সেবা পূজা নিতে পারবেন না। তাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। মন্দির নির্মাণের প্রায় দেড়শ’ বছর পরে ওই ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে মন্দিরটি অব্যবহৃত রয়েছে। বর্তমানে মন্দির ও আশপাশের এলাকায় ২৫ একর জমি রয়েছে।

নগরীর রানীর দিঘির পাড়ের বাসিন্দা কালিপদ দেবনাথ বাসসকে বলেন, মন্দিরটির সৌন্দর্য এখনো চোখ জুড়ায়। এটি সংস্কার করে পাশের পুকুরটিসহ পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা যেতে পারে। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বাসসকে বলেন, ১৭টি চূড়ার কারণে এর নামকরণ করা হয় সতের রত্ন মন্দির। মন্দিরটি মধ্যযুগের স্থাপত্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন। এটিকে আরো সংস্কার করে প্রত্ন পর্যটন বিকাশে টিকেটের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।   

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank