মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছৈলার চর

রহিম রেজা , ঝালকাঠি

১২:৪৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

আপডেট: ১৪:৪২, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

২৩৯৬

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছৈলার চর

ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে এক যুগেরও আগে ৭০ একর জমি নিয়ে নদীর বুকে জেগে উঠে এক বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর ছৈলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ চরের নামকরণ করা হয়েছে 'ছৈলার চর'। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঘেরা। ছৈলা গাছের ডালে ডালে শালিক, ডাহুক আর বকের ঝাঁক। গাছে গাছে রয়েছে মৌমাছির বাসা ও মৌচাক। তাই পাখির কিচিরমিচির ডাক ও মৌমাছির গুন গুন শব্দ সব সময় শোনা যায়। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে অভয়াশ্রম হিসেবে আশ্রয় নিতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিও। ভ্রমণ পিপাসুদের প্রতিদিনের পদচারণায় এখন মুখরিত ছৈলার চর। 

কাঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে নৌপথে যেতে হয় ছৈলার চরে। ২০১৫ সালে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন ছৈলারচর স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করেছেন, তবে বাস্তবায়ন হয়নি ৬ বছরেও। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও ছৈলার চরে রয়েছে নানা সমস্যা। এখানে সড়ক পথে যাতায়াতে নেই কোন ব্যবস্থা। সিঁড়ি না থাকায় নৌ পথের পর্যটকদের ছৈলার চরে যেতে হচ্ছে হাঁটু সমান পানি ও কাদা ভেঙে। নেই বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। চরের মধ্যে হাঁটার জন্য কোন রাস্তা নেই। বিশ্রামের জন্য কোন বিশ্রামাগার না থাকায় অনেক পর্যটক সেখানে যেতে বিমুখ হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। পর্যটন এলাকাকে ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেস্ট হাউজ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, ছৈলা একটি লবণ সহিষ্ণু বন্য প্রজাতির বৃক্ষ। উপকূলীয় নদী তীরবর্তী চর, জোয়ার ভাটার প্রবহমান খালের চর ও প্লাবনভূমি জুড়ে কোন যত্ন ছাড়াই প্রকৃতিগতভাবে জন্ম নেয় এবং বংশ বৃদ্ধি হয় এ বৃক্ষের। ছৈলা গাছের শেকড় মাটির অনেক গভীর অবধি যায় তাই সহসা ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে কিংবা উপড়ে পড়ে না। ফলে উপকূলীয় এলাকায় প্রকৃতিবান্ধব গাছ হিসেবে ছৈলা বনবিভাগের সংরক্ষিত বৃক্ষ। কেবল কাঠের মূল্য বিবেচনায় নয়; মাটির সুদৃঢ় গঠনে পর্যায়ক্রমিক একটি দরকারি বৃক্ষ প্রজাতি হিসেবে ছৈলা গাছকে বিবেচনা করা হয়। তাই দুর্যোগ প্রবণ উপকূলে প্রকৃতিবান্ধব ছৈলা গাছ কাটা নিষেধ।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বরিশাল বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর এবং কাঠালিয়ার সমাজ কর্মী মো. ফারুক হোসেন খান বলেন, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির দক্ষিণ জনপদ কাঠালিয়ার বিষখালী নদীর তীরে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা নয়াভিরাম ‘ছৈলার চর’ পর্যটন খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সংকট। প্রতিকূল যাতায়াত ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ স্থানে পর্যটকরা চিন্তিত থাকেন। তবু সেই সংকট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম এই ছৈলার চর পর্যটকদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। শুকনো মৌসুম এলেই পর্যটকের ভিড় থাকে ছৈলার চরে। বিভিন্ন সরকারী-বেসকারী প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বপরিবারে পিকনিকে আসে প্রকৃতির সাথে পরিচিত হতে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বিষখালীর তীরে জেগে ওঠা ছৈলার চর।  

শীত এলেই এসব জলাশয়, নদীর তীরের নিরাপদস্থানসহ বিভিন্ন হাওর, বাঁওড়, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানা রং-বেরংয়ের নাম জানা, অজানা পাখির। অথচ বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে এসব পাখি। স্থানীয় ও অতিথি পাখি মিলে আমাদের দেশে পাখি আছে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির। এর মধ্যে ৩৬০ প্রজাতি স্থানীয়। বাকি ৩০০ প্রজাতি অতিথি পাখি। সব অতিথি পাখি শীতের সময় আসে না। ৩০০ প্রজাতির মধ্যে ২৯০টি শীত মৌসুমে আসে ও ১০টি প্রজাতি থেকে যায়। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। এই পাখিগুলো রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।


 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank