ঈদে বাড়ি যেতে সতর্ক হোন!
ঈদে বাড়ি যেতে সতর্ক হোন!
ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি যেতে হয়। অনেকের এই যাত্রা হয় দূরে। অনেক দূরের পথ। এই ভ্যাপসা গরমে পথিমধ্যে নানান শারিরীক জটিলতা দেখা দিতে পারে। অসমান, অমসৃণ রাস্তাঘাটে দীর্ঘক্ষণ যানবাহনে বসে থেকে দেখা দেয় নানান শারীরিক বিপত্তি। গাড়ির ঝাঁকি, জ্যাম, অসহ্য গরম, গুমোট পরিবেশ, ধুলোময়লা, ঠেকায় পড়ে নোংরা বাসি খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে শরীর হয়ে পড়ে নাজুক। তখন সাধের ঈদ যাত্রাটাই মাটি হয়ে যায়। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আগে থেকে কিছু সতর্ক ব্যবস্থা রাখুন হাতের কাছে।
গাড়িতে বসে বমি-বমি ভাব হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকেরই হয়ে থাকে। সাধারণত বাসে ভ্রমণকালে কিংবা ট্রেুনে ভ্রমণকালে হতে পারে। এই সমস্যাকে বলে মোশন সিকনেস। অনেকেরই শুধু বমি বমি ভাব হলেও আবার অনেকে বমি করেও ফেলেন। এতে অন্য যাত্রীরা বিব্রত হন। এই বিরক্তিকর সমস্যা কেন হয়? সেকথা অন্য। তবে কীভাবে এ থেকে রক্ষা পাবেন একনজরে জেনে নেয়া যাক।
ঈদ যাত্রা ট্রেনে, লঞ্চে বা বাসে হোক। সম্ভব হলে জানালার কাছে বসবেন। বুক ফুলিয়ে বেশ কয়েকবার লম্বা দম নেবেন এবং ছাড়বেন। এতে বেশ উপকার পাবেন। যারা জানেন, নিশ্চিত বমি হওয়ার অভ্যাস, তারা ঈদ যাত্রার অন্তত: এক ঘণ্টা আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাত্রা অনুযায়ী বমি রোধক ওষুধ খেয়ে নেবেন। সাধারণত স্টিমিটিল, সিনারজিন, ইমিটিল, ভারগন, এভোমিন ইত্যাদি নামে বমি রোধক ওষুধ ট্যাবলেট আকারে ওষুধের দোকানে এমনকি আজকাল বাস স্ট্যান্ড বা স্টেশনের দোকানেও পাওয়া যায়।
দীর্ঘ সময় বাসে বা ট্রেনে ভ্রমণ করলে অনেকেরই একটু-একটু মাথা ব্যথা করতেই পারে। এটা প্রায় সাধারণ একটা সমস্যা। এ নিয়ে দু:শ্চিন্তা করে মাথা ব্যাথা বাড়ানোর দরকার কী। বাড়ি পৌঁছার পর ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুলে বা গোসল করলে এ ধরনের অসুবিধা আর থাকে না। বাড়ি গিয়ে ঘুম দিন। দেখবেন, দু’ঘন্টা পর এমনিতেই মাথা ব্যাথা সেরে যাবে। কারও কারও এতে সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে। প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় অস্থির হলে ভ্রমণের পর খাবার শেষে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একটি ডিসপ্রিন বা প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেয়ে নিলে ভালো বোধ করবেন। তবে এসিডিটি, গ্যাস, থাকলে অবশ্যই ওষুধের সঙ্গে গ্যাসের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল খেতে ভুলবেন না যেনো।
আর হ্যাঁ। এসিডিটি খুব সাধারণ একটি সমস্যা। যা অনেকেরই হতে পারে। এটি দু’টো কারণে হতে পারে। প্রথমত ভ্রমণজনিত ভয় বা টেনশানের কারণে, দ্বিতীয়ত ভ্রমণকালে বাইরের ভাজাপোড়া জিনিস খেলে। এর প্রতিকার খুব সহজ। ভ্রমণের সময় সেকলো জাতীয় ক্যাপসুল সঙ্গে নিয়ে নিবেন। এসিডিটি হলে একটা বের করে পানি দিয়ে গিলে খাবেন। আর বাইরের ভাজাপোড়া খাবার না খেলেই ভালো হয়।
অনেকেই বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে অকারণে জার্নি নিয়ে ভয় বা টেনশনে ভোগেন। যেমন প্লাটফর্মে গিয়ে ট্রেন পাবো কীনা, বাস যদি হয়, তবে একসিডেণ্ট যদি হয়? রাতের গাড়িতে যাচ্ছি যদি ডাকাতে ধরে ইত্যাদি। গবেষকদের মতে, এর ফলে দুর্বলতা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের এ সমস্যা রয়েছে তারা ভ্রমণের আগে ডায়াজিপাম বা সিনারজিন জাতীয় ওষুধ খাবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তাহলে ভালো বোধ করবেন। তবে সাবধান। এ ধরনের ওষুধ খেলে ঘুম চলে আসতে পারে। পাবলিক যানবাহনে কিন্তু জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ ধরনের ওষুধ না খাওয়াই ভালো। চিকিৎসকদের মতে, যাদের সব সময়ই ভ্রমণের সময় এরকম সমস্যা দেখা দেয় তারা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে খুব ভালো হয়।
ঈদ যাত্রায় সঙ্গে ব্যাগের কোনায় খাবার স্যালাইন রাখবেন। কারণ বলা তো যায় না, পরিবারের কার কখন পাতলা পায়খানা শুরু হয়। অনেকের আবার ফুড পয়জনিংও হয়। বাইরের খাবার বা পানি পান করার ফলে এমনটি হয়। তাই ঈদ যাত্রার সময় বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো। একান্তই যদি খেতে হয় তবে ফল খাবেন। আমাদের শরীরের ধর্ম হলো, যা তার জন্য বিষাক্ত, তা সে বমি কিংবা পাতলা পায়খানা আকারে বের করে দেয়। কে না জানেন, পাতলা পায়খানা হলে শরীরের পানি ও লবণ বের হয়ে পানি শুন্যতার সৃষ্টি হয়। তখন খাবার স্যালাইন সে ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে নিস্তেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে। তবে যদি ফুড পয়জনিংয়ের কারণে শুধু বমি হয় কিন্তু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া না হয় তাহলে খাবার স্যালাইন না খেয়ে শুধু পানি পান করুন। সঙ্গে লবণ কিংবা চিনি মিশিয়ে খেলে ভালো করবেন। ঈদ যাত্রায় ভীড়, ঠেলাঠেলির কারণে আমাদের শরীরে আঘাত লাগতে পারে বা কেটে যেতে পারে বা ছড়ে যেতে পারে। এ জন্য সাথে এণ্টিসেপ্টিক বরোলিন ক্রিম, নেবানল পাউডার বা ক্রিম থাকলে ভালো হয়। যদি দেখা যায় ক্ষত খুব গভীর এবং এতে ধুলোবালি লেগে আছে তবে ক্ষতস্থান খুব ভালো করে ধুয়ে (সম্ভব হলে সাবান দিয়ে) পরিষ্কার করে এণ্টিসেপ্টিক লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ বা পট্টি বেঁধে নেবেন। পরবর্তীতে যত দ্রæত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ধনুষ্টংকার রোধক ইনজেকশান নিয়ে নেবেন। তবে যারা ইপিআই সিডিউল অনুযায়ী চারটি ধনুষ্টংকারের টিটি টীকা আগেই নিয়ে নিয়েছেন তাদের আর কোনো ধনুষ্টংকার রোধক ইঞ্জেকশান নেবার দরকার নেই। গ্রামের বাড়িতে মশা বেশি থাকে। তাছাড়া ঈদে বাড়ি গিয়ে অনেকেই পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে যান, যেখানে প্রচুর মশা থাকে। তাই অবশ্যই ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক, মশা প্রতিরোধক ক্রীম অডোমস বা এ জাতীয় অন্য কিছু আগেই মেখে নেবেন বা সঙ্গে নিয়ে নেবেন।
ঈদ যাত্রার আগে একটি বাক্সে কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র যেমন- প্যারাসিটামল, ডিসপ্রিন, স্টিমিটিল, এণ্টাসিড, এণ্টিসেপ্টিক ইত্যাদি পরিষ্কার গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি সঙ্গে নিলে খুবই ভালো হয়। যাত্রা পথে ওগুলো আপনার ফার্স্ট এইড বক্সের মতো বেশ কাজে আসতে পারে। বাড়ি যেতে গাড়ি, লঞ্চ বা ট্রেনে উঠার সময় বিশেষ করে দীর্ঘ ভ্রমণের সময় ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরুন। যাত্রা দীর্ঘ পথের হলে, ভ্রমণজনিত ক্লান্তি দূর করতে সম্ভব হলে মাঝে-মাঝে চোখে-মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন। দেখবেন এই গরমে বেশ আরাম বোধ করছেন।
প্রচন্ড গরম। সূর্য রশ্মির প্রখরতা বেড়েছে। এ রশ্মিতে রয়েছে অতি বেগুনি রশ্মি। অবশ্যই ক্যালামাইন বা সানক্রিন লোশন মেখে নেবেন। প্রখর রোদে ত্বক ঝলসানো থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া ত্বকের ফুসকুড়িতে কিংবা পোকার কামড়েও এটা ব্যবহার করা যায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তারা ঈদে দীর্ঘপথ যাত্রার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদী ওষুধ খাচ্ছেন যিনি, তিনি সেগুলো ভ্রমণের সময় সঙ্গে নিতে ভুলবেন না যেনো। সন্তান সম্ভবা মহিলাদের দূরপথের বাড়িতে না যাওয়াই ভালো। এতে তার নিজের এবং তার গর্ভের সন্তানে দু’য়েরই মঙ্গল। যাত্রাপথে ভ্রমণের ঝাঁকির কারণে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা গর্ভপাত হতে পারে। অতএব সতর্ক থাকুন।
আপনার ঈদ যাত্রা শুভ হোক, আনন্দময় হোক।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?