যে দ্বীপে গেলে কেউ ফিরে আসতো না
যে দ্বীপে গেলে কেউ ফিরে আসতো না
রহস্যময় এই দ্বীপের অবস্থান উজবেকিস্তানের বারসা কেলমেসায়। লোকমুখে প্রচলিত, এই দ্বীপে যারাই গেছে, তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি!
ব্যাপারটা অনেকের কাছেই ভৌতিক মনে হলেও এর পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাটলাস অবসকুরা অবশ্য এমনটাই জানাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৪৮ সালে অ্যারাল সাগরের দ্বীপে একটি ছোট গবেষণাগার চালু করে সোভিয়েতরা। এতে বায়োলজিক্যাল অস্ত্র নিয়ে কাজ করা বিশ্বের সুপরিচিত বিজ্ঞানীরা গোপনে গবেষণার কাজ করতেন।
এরপর প্রায় ৪০ বছর দ্বীপের বায়ুতে গুটিবসন্ত, অ্যানথ্রাক্স এবং বুবোনিক প্লেগের মতো মারাত্মক কিছু রোগের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে একের পর এক মানুষ অসুস্থ হতে শুরু করে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় এ অঞ্চল।
এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, মূলত অ্যারাল সমুদ্রের একটি দ্বীপ ছিল বারসা কেলমেস। এটি ১৮৪৮ সালে আবিষ্কৃত হয়। দ্বীপ আবিষ্কারের প্রায় ১০০ বছর পর সেটি গাছপালায় ভরে ওঠে।
বারসা কেলমেস রিজার্ভের পরিচালক জুরেশ এলিমবেতোভা জানান, অ্যারাল শহর থেকে বারসা কেলমেসের দূরত্ব ৩৫০ কিলোমিটার। এই স্থানকে ঘিরে লোকমুখে অনেক ধরনের কুসংস্কার ও কথা প্রচলিত আছে। বলা হয়, এখানে অনেক আগে একটা পরিবার ঘুরতে এসেছিল কিন্তু তারা কেউ এখান থেকে ফিরে যেতে পারেনি।
জুরেশ বলেন, এক সময় ২৪ কিলোমিটার লম্বা এবং ১৩ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এই দ্বীপে এক হাজারটিরও বেশি গ্যাজেল ও সাইগা অ্যান্টোনি অর্থাৎ বিপন্ন প্রজাতির হরিণ ছিল। এ ছাড়া এটি বন্য গাধাদের আবাসস্থল হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৪৮ সালের পর এ অঞ্চল থেকে প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হতে শুরু করে।
তখন এখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করতে এক দল বিজ্ঞানী বারসা কেলমেসে আসেন। এ সময় তারা বিমান চলাচলের জন্য একটি এয়ারড্রোম, আবহাওয়া স্টেশন, ক্লাব ও একটি লাইব্রেরি স্থাপন করেন। তাদের মধ্যে অনেকে আবার নিজেদের বিশ্রামের জন্য আবাসস্থলও নির্মাণ করেন। তবে হঠাৎ করেই অনেকে বলতে শুরু করে যে সমুদ্র খুব দ্রুতই শুকিয়ে যাচ্ছে।
বারসা আরও বলেন, ১৯৬০ সালের দিকে অ্যারাল সমুদ্র ছিল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তর লেক। তবে ষাটের দশকের পর মধ্য এশিয়ায় তুলা চাষের জন্য সেচ দেওয়া শুরুর পর থেকেই সমুদ্র শুকাতে শুরু করে। পরের ৪০ বছরে ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে যায়।
পানি শুকানোর পর থেকে এই অঞ্চল ভিন্ন এক রূপ ধারণ করে। এরপর থেকে বারসা কেলমেসের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানো এমনকি আকাশপথে হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কেননা, পানি নিষ্কাশনের ফলে ওই অঞ্চল লবণাক্ত জলাভূমিতে পরিণত হয়।
বারসা আরও বলেন, ‘এতে বারসা কেলমেস বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে ওঠে এবং আমরা এ অঞ্চল ত্যাগ করি। প্রাণীদেরও বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই জলাভূমি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়। পরে ২০০৩ থেকে মানুষ আবার এই স্থানে আবাসস্থল গড়ে তোলে।’
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?