সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

পাথরে কি ভাগ্য ফেরে?

শেখ আনোয়ার

২১:৫৪, ১২ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ২২:০৬, ১২ আগস্ট ২০২২

৩৭১৮

পাথরে কি ভাগ্য ফেরে?

পাথরকে বলা হয় পাষাণ-পাথর। পাথর শব্দের সঙ্গে একটি শক্ত শক্ত আকৃতি, অনমনীয় অনুভূতি আমরা মনের চোখে দেখে থাকি। তাই হয়তো যাবতীয় কঠিন বিষয়ের সঙ্গে পাথরের মত পাষাণ উপমা জুড়ে দেওয়া হয়। উপমা দেওয়া হয় নিথর নিস্তব্দ বা ভারি কোনো বস্তুর সঙ্গে। পাথর হলো খুবই শক্ত, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী সামগ্রী। পৃথিবীতে জন্মের পর থেকেই পাথরের সঙ্গে মানুষের সখ্য। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ লাখ বছর আগে মানুষ সত্যিকারভাবে পাথরের ব্যবহার শুরু করে। যাকে আমরা বলি প্রস্তর যুগ। তখন মানুষের দৈনন্দিন আসবাবপত্র, থালা, বাসন, অস্ত্র সবই ছিল পাথরের তৈরি।

বিজ্ঞানীদের মতে, ‘পাথর প্রাকৃতিক উপায়ে গঠিত জটিল রাসায়নিক যৌগবিশেষ। বহুবিদ খনিজ সামগ্রী দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক তাপ, চাপ ইত্যাদির প্রভাবে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জমাটবদ্ধ হয়ে পাথরের উৎপত্তি ঘটায়।’ বিজ্ঞানীরা জানান, ‘বহুবিধ খনিজ পদার্থের জটিল রাসায়নিক যৌগই হলো পাথর।’ ভূতাত্তি¡ক ও রসায়নবিদদের মতে, প্রায় দু’শত খনিজ পদার্থ বিভিন্ন প্রকার পাথর গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘খনিজ উপাদান সমূহের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের উপর পাথরের গঠন, বুনট, বর্ণ, ভঙ্গুরতা, দৃঢ়তা, চুম্বকত্ত¡, আপেক্ষিক গুরুত্ব, ওজন নির্ভর করে।’ শিলা এবং পাথর সচারাচর একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। 

মানুষ আদিকাল থেকেই পাথর ব্যবহার করে আসছে। প্রস্তর যুগের মানুষ পাথরকে আত্মরক্ষা ও পশু শিকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। কালক্রমে এ পাথর নির্মাণ শিল্পের প্রধান উপকরণে পরিণত হয়। পাথর হচ্ছে শিলা হতে সংগৃহীত, দৃঢ়, শক্ত, সমসত্ত¡, অগ্নিরোধী, ক্ষয়রোধী, টেকসই, ওজনে ভারি, আকার-আকৃতি সম্পন্ন। এসব পাথরকেই নির্মাণ পাথর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই থেকে সড়ক, সেতু, ইমারত ইত্যাদি নির্মাণকাজে পাথর ব্যাপক আকারে ব্যবহার করা হয়। 

ডিজিটাল যুগে এসে আজো আমরা পাথরের মাহাত্ব্য ভুলতে পারিনি। বাড়ি বানাতে, রাস্তা তৈরিতে কিংবা ভাস্কর্য শিল্পে পাথরের বিকল্প আজও নেই। পাথর খুবই মজবুত, শক্ত, দীর্ঘস্থায়ী এবং আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া পাথরের তেমন কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে না বলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাটেরিয়ালস-এ নির্মাণসামগ্রী হিসেবে পাথরের গুরুত্ব অপরিসীম। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী সমূহের মধ্যে পাথরের ন্যায় স্থায়িত্বশীল সামগ্রী অন্য আর একটিও নেই বিধায় পাথরকে নির্মাণ উপকরণের রাজা বলা হয়।

পাথরের আবার রকম ফের রয়েছে। মূল্যহীন পাথর যেমন রয়েছে। তেমনি রয়েছে অধিক মূল্যবান পাথরও। যে পাাথর দিয়ে আমরা রাস্তা তৈরি করছি সে পাথর দিয়ে কিন্তু বাড়ি তৈরি হয় না। বাড়ি বানাতে এবং সাজাতে আমরা ব্যবহার করছি শে^ত পাথর বা মর্মর পাথর। আবার গহনা তৈরিতে ব্যবহার হরা হচ্ছে নীলা, চুন্নি, পান্না ইত্যাদি উজ্জল স্ফটিকযুক্ত মূল্যবান পাথর। পাথরের সৌন্দর্য্য একেক স্থানে একেক রকম। যেমন পাথরের পিরামিডের সৌন্দর্য্য এক রকম। আবার তাজমহলের সৌন্দর্য্য অন্যরকম। প্রাচীনকালে নির্মিত দেবদেবীর পাথরের মূর্তিগুলো অন্যরকম। 

কে বলেছে পাথরের জীবন নেই? তাহলে পাথর কেন পানিকে আকর্ষণ করে? পানিকে কেন্দ্র করে রহস্যময় কিছু পাথর বৃদ্ধিও পায়। গবেষকরা বলেন, ‘এমন পাথর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে। এ পাথরকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘জীবন্ত পাথর’। জানা যায়, ইউরোপের বলকান অঞ্চলের দেশে থাকা এ পাথরগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকারে বৃদ্ধি পায়। এসব পাথরের উপর নিয়মিত পানি কিংবা অতিবৃষ্টি হলে সেগুলো দ্রæতই বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোমানিয়ার স্থানীয়রা এসব পাথরকে পৃথিবীর একমাত্র জীবন্ত পাথর বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, পাথরগুলোর পানির প্রতি একটা আকর্ষণ রয়েছে। প্রশ্ন হলো, নির্জীব বস্তুর কেন পানির প্রতি আকর্ষণ? বিজ্ঞানীরা সেসব রহস্যময় পাথর পরীক্ষা করে দেখেছেন। ভেতরে অদ্ভূত শক্ত বালির মতো পদার্থ ছাড়া কিছু নেই। তবে সেসব পাথরের স্তর রয়েছে। যা অন্য সাধারণ পাথরে দেখা যায় না। রহস্যময় পাথরগুলোর বৃদ্ধি অনেকটাই চোখে পড়ার মতো। পুরো পাথরই যে আকারে বাড়ে তাও নয়। এর শরীরের কোনো কোনো স্থান দিয়ে বাড়তি অংশ বৃদ্ধি পায়। স্থানীয়রা এসব পাথরকে ‘ট্রোভেন্টস পাথর’ নামে ডেকে থাকেন। রহস্যময় এ পাথর রোমানিয়ার সব স্থানে পাওয়া যায় না। দেশটির প্রত্যন্ত গ্রাম কোসটেসতিতে মেলে এমন পাথরের সন্ধান।

আবার নান্দনিক রঙিন পাথর মানুষকে আকৃষ্ট করে। এ সূত্র ধরেই সারা পৃথিবীর তথাকথিত ভাগ্য গণণাকারী এ কথাটি প্রতিষ্টিত করেছেন যে, ‘পাথর ভাগ্য বদল করতে পারে এবং সব মুশকিল আসান করে দেয়।’ প্রযুক্তির এ যুগেও অনেক জ্যোতিষ ভক্ত তাদের আঙ্গুলে মুশকিল আসান পাথরের আংটি ব্যবহার করে থাকেন। এতে লাভবান হয়ে থাকেন তথাকথিত জ্যোতিষীরা। তারা উচ্চ দামে পাথর বিক্রি করেন। 

পাথর আমাদের সভ্যতাকে এগিয়ে দিয়েছে অনেক দূর। একথা কে না জানে যে, আগুন ছাড়া বর্তমান পৃথিবী অচল। এই আগুনের উদ্ভব হয়েছে দু’টো পাথরের ঠোকাঠুকিতেই। পাথর আমাদের অতীতের গল্প বলে। বুড়ো দাদুর মতো সে আমাদের এ পৃথিবীর পূর্ব ইতিহাসকে বলে আসছে। ভূতাত্বিকরা এই পাথরের স্তর দেখেই বলতে পারেন অতীতের পৃথিবী দিনের পর দিন কীভাবে পরিবর্তিত হয়ে আজকের এই সভ্য ডিজিটাল পৃথিবীর রূপ লাভ করেছে। পাথরের মাধ্যমেই পাওয়া যায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের ফসিল। যা থেকে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন আমাদের সভ্যতার অতীত ইতিহাস।

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank