সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

গ্রহাণু কি পৃথিবীকে আঘাত হানতে পারে ?

শেখ আনোয়ার

১১:৩৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ২২:৩৪, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

১১৭৯

গ্রহাণু কি পৃথিবীকে আঘাত হানতে পারে ?

আঘাত আসতে পারে কোনো স্থায়ী কক্ষপথ বিশিষ্ট জানা গ্রহাণুর কাছ থেকেও
আঘাত আসতে পারে কোনো স্থায়ী কক্ষপথ বিশিষ্ট জানা গ্রহাণুর কাছ থেকেও

পৃথিবী এক মহাবিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে। জী না। পৃথিবীর বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি ডিজিটাল যন্ত্রের কারণে নয়। আবহাওয়া মন্ডলের বড়ো ধরনের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়ের কথাও বলছি না। বলছি না লাগামহীন গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ার কথা। পৃথিবী বহির্ভূত, কক্ষপথচ্যুত কোনো এক অজানা গ্রহাণুর কথা বলছি। যেটা পৃথিবীকে আঘাত হানবে। নেমে আসবে মহাবিপর্যয়। অতীতে যেমন অতিকায় ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ধুমকেতুর আঘাতে।

গ্রহাণু বা ধূমকেতু যেগুলো ভবিষ্যতে পৃথিবীকে আঘাত হানতে পারে সেগুলোক বলা হয় নেয়ার আর্থ অবজেক্ট বা সংক্ষেপে ‘এনইও’ আরও সংক্ষেপে বলা হয় ‘নিও’। আর এই ‘নিও’ আবিষ্কারে নিয়োজিত রয়েছে একদল মহাকাশ বিজ্ঞানী। এদের  মধ্যে লিনিয়ার নিট ও স্পেস ওয়াচ-এর কথা উল্লেখ করা যায়। এ পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি নিও সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া গেছে যেগুলোর কোনোটির আয়তন ১০ ঘনকিলোমিটারেরও বেশি। এখনো হাজার হাজার নিও অনাবি®কৃত রয়ে গেছে।

মার্কিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ‘সেপসগতি’ গ্রোগাম সার্বক্ষণিকভাবে আশঙ্কামুক্ত নিও পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে। এ পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে আগামী শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীকে নিও আঘাতের তেমন কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে বড়ো ধরনের আঘাত যে আসবে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত। তারা এর পরিণতি নিয়ে আজ শংকিত।

বিজ্ঞানীরা জানান, আজ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ হাজার গ্রহাণুর প্রকৃত কক্ষপথের সন্ধান পেয়েছি, আর শত সহস্রের সঠিক তথ্য আমাদের হাতে নেই। জানা গ্রহাণূগুলোর একটি বড়ো অংশ প্রধান অ্যাস্টারয়েড বেল্টে অবস্থান করে। প্রধান কক্ষপথের মাঝখানে অবস্থিত। গ্রহাণুপুঞ্জের একটি বিশাল ভান্ডার রয়েছে নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে। এখানে ছোটবড়ো মিলিয়ে প্রায় কয়েক বিলিয়ন গ্রহাণু রয়েছে, যেগুলোর কোনো কোনটি প্রায় প্লুটোর সমান। তবে বর্তমান টেলিস্কোপ ব্যবস্থায় এ অঞ্চলের গ্রহাণূ সম্পর্কে পুক্সক্ষাণুপুক্সক্ষ তথ্য নেওয়া প্রায় অসম্ভব।

গবেষকদের মতে, একটা গ্রহাণুর সঠিক গতিপথ নির্ণয় করা খুব সহজ কাজ নয় এমনকি আজকের এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল যন্ত্রপাতির সাহায্যেও নয়। ফলে গ্রহাণুটির ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্বন্ধে একটা অনিশ্চয়তা রয়েই যায়। অবশ্য ব্যাপক গবেষণা ও পরিমাপ অনিশ্চয়তাকে খানিকটা কমিয়ে দেয়। একটা নতুন নিও আবি®কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটি ভবিষ্যৎ গতিপথের খসড়া ধারণা লাভ করি। গ্রহাণুটির কয়েকটি সম্ভাব্য গতিপথের ধারনা পাওয়া যায় মাত্র। ফলে এটি ভবিষ্যতে ঠিক কোন পথ ধরবে, অন্য কোনো গ্রহ বা গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে কীনা, আদৌ কোনো স্থায়ী কক্ষপথ ধরে পরিভ্রমণ করবে কীনা এ বিষয়ে রয়ে যায় ব্যাপক অনিশ্চয়তা। আর এমন একটি সম্ভাব্য ঘটনায় পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কাই রয়েই যায়।

বর্তমান তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যতো গ্রহাণু বা ধূমকেতু নিও তার প্রতি ৫ হাজারের একটির পৃথিবীকে আঘাত করার আশঙ্কা রযেছে। তাই যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এ আশঙ্কাযুক্ত গ্রহাণুগুলোর গতিপথ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারছি, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই গ্রহাণুগুলোর আঘাত থেকে শঙ্কামুক্ত হতে পারছি না।

এতো গেলো নতুন নিও এর আঘাতের আশঙ্কার কথা।

কিন্তু এই আঘাত আসতে পারে কোনো স্থায়ী কক্ষপথ বিশিষ্ট জানা গ্রহাণুর কাছ থেকেও। বিশাল বৃহস্পতির মহাকর্ষবলের প্রভাবে স্থায়ী কক্ষপথবিশিষ্ট গ্রহাণুরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র বস্তু, যেসব প্রায়ই কক্ষচ্যুত হয়ে পড়ে এবং সৌরজগতের কেন্দ্রে চলে আসে, লিপ্ত হয় অন্য কোনো গ্রহানু বা গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষ বা নতুন কোনো কক্ষপথ ধরে সূর্যকে বা বড়ো কোনো গ্রহকে আবর্তন শুরু করে। পৃথিবী এই ধরনের ছিটকে পড়া গ্রহাণুর আঘাতের শঙ্কা থেকে মুক্ত নয়। ট্রোজান গ্রহাণুগুলো স্থায়ী গ্রহাণু। এগুলো বৃহস্পতি থেকে একটি নিরাপদ দূরত্ব থেকে বৃহস্পতির কক্ষপথ ধরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। সৌরজগতের সূচনালগ্ন থেকে ট্রোজানগুলোর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন এ ধরনের গ্রহাণু নিরাপদ। গ্যাসীয় বৃহৎ গ্রহ যেমন বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনকে কেন্দ্র করে আবর্তনরত আরো কিছু গ্রহাণু রয়েছে যেগুলোর কক্ষপথ অস্থায়ী। এগুলোকে বলা হয় সেন্টোরস।

এগুলোর কক্ষপথ বড়ো কোনো গ্রহের মহাকর্ষবলের প্রভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। এগুলোর কোনোটির কক্ষপথ সূর্যকেন্দ্রিক থেকে গ্রহকেন্দ্রিক হয়ে যায়। সুতরাং এমন কোনো সেন্টোরসের হাত থেকেও পৃথিবী মুক্ত নয়।

সৌরজগতের প্রতিটি সদস্য একটি জটিল প্রক্রিয়ায় আবর্তিত হচ্ছে। যার খুব সামান্যই আমাদের জানা রয়েছে। এমনও দিন অপেক্ষা করছে যখন জানা কোনো নিও, ট্রোজান বা সেন্টোরস নেমে সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে পৃথিবীকে আঘাত হানবে। আর তখনই নেমে আসবে মহাবিপর্যয়।

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank