সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কন্দকাটা মাইক: মাথা কাটার পরেও দেড় বছর বেঁচেছিল যে মুরগি

সাতরং ডেস্ক

১৮:৫৮, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৯:০১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১

৬৭৯

কন্দকাটা মাইক: মাথা কাটার পরেও দেড় বছর বেঁচেছিল যে মুরগি

মাইক দ্য হেডলেস চিকেন
মাইক দ্য হেডলেস চিকেন

কন্দকাটা ভূতগুলোর মাথা নেই। তাও দিব্যি ঘুরে বেড়ায়, জ্যান্ত মানুষের মাথা খুঁজে ফেরে, পেলে জুড়ে নেবে বলে। ভূতেদের দুনিয়ায় মাথাবিহীন হলেও কারও জন্যে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় কন্দকাটা হয়েও ‘কুছ পরোয়া নেহি’ হয়ে ঘুরে বেড়ানো? ওটা বরং বড্ড বেশি ভুতুড়ে।

১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরকমই এক কন্দকাটা মোরগের জন্ম হয়। তবে সে জন্ম ডিম থেকে হয়নি, কৃষক লয়েড ওলসনের কুঠার থেকে হয়েছিল।

সে বছরের ১০ সেপ্টেম্বর কলোরাডোয় নিজেদের খামারবাড়িতে বসে ওলসন আর তার স্ত্রী ক্লারা মিলে মুরগি কাটছিলেন। সেদিন চল্লিশ কি পঞ্চাশটা মুরগি জবাই করেছিলেন ওলসন, কিন্তু একটা মুরগির মাথা কেটে ফেললেও তাকে জবাই করতে পারেননি তিনি।

সেই অলৌকিক মুরগি পরে মাইক নামে খ্যাতি পেয়েছিল। ওলসনের হাতকুঠারের এক ঘায়ে সেদিন মাইকের মাথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা-তে তার প্রাণবায়ু না বেরিয়ে গিয়ে, বরং জবাইস্থল থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল মাইক স্বয়ং। একটু ভুল হলো, মাইকের ধর দৌড়ে দিয়েছিল, মাথাটা সেখানেই রয়ে গিয়েছিল।

সেদিন রাতের বেলা রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন ওলসন দম্পতি। ভেবেছিলেন যা ঘটেছে তা নিতান্তই অলৌকিক, সকালবেলা দেখবেন মুরগিটা মরে গেছে। কিন্তু তাদের সে ‘আশা’-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরদিনও দিব্যি বেঁচে রইলো ‘মিরাকল মাইক’।

এরপর বেশিকিছু না ভেবে মাইক-কে দিয়ে দুটো পয়সা আয় করার চিন্তা করলেন ওলসন। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় তিনি তার মাথাবিহীন মুরগি নিয়ে ঘুরতে লাগলেন। মানুষের কাছে গিয়ে ওলসন বাজি ধরতেন তার কাছে একটা মাথাবিহীন জীবন্ত মুরগি আছে। সে সব বাজিতে বিয়ার জিততেন তিনি। শোনা যায় তখন অনেক বিশ্বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা নাকি তাদের ল্যাবে মুরগির মাথা কেটে পরীক্ষা করেছিলেন সত্যিই তারা বেঁচে থাকে কিনা।

১৯৪৭ সালে মাইককে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে অ্যারিজোনা’র ফিনিক্সে যান ওলসন। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মাইক।

মাইককে তরল খাবার ও পানি খাওয়াতেন তার মালিক। মাথা না থাকায় তার গলা থেকে শ্লেষ্মাও পরিষ্কার করতে হতো ওলসনকে। ড্রপার দিয়ে খাওয়ানো হতো তাকে। আর গলা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা হতো একটি সিরিঞ্জ। ফিনিক্স-এ সিরিঞ্জ নিতে ভুলে গিয়েছিলেন ওলসন। একরাতে গলায় খাবার আটকে যায় মাইকের। তখন ওলসন টের পান সিরিঞ্জ সাথে নেই। অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় মুরগিটি।

কিন্তু মাথা ছাড়াই ওই মুরগি বাঁচলো কী করে? নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ড. টম স্মলডার্স এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আসলে মানুষের ক্ষেত্রে মাথা কাটা পড়লে (লজ্জায় নয়, কিন্তু তাতেও অনেকে মারা যান বইকি) তার পুরো মস্তিষ্কটাই শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু মুরগির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।

বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে এটা জানা যায় যে, মাইকের চঞ্চু, মুখ, চোখ ও কান কাটা গিয়েছিল। মুরগির মাথার খুলির পেছনে, চোখের পরে মস্তিষ্ক থাকে। কুঠারের কোপে মাইকের মস্তিষ্কের প্রায় ৮০ ভাগ বেঁচে গিয়েছিল। আর এ বেঁচে যাওয়া অংশগুলো দিয়েই হার্ট রেট, নিঃশ্বাস, শরীরের নড়াচড়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো মুরগিটি। আর কাটার পরে কোনোভাবে যথাসময়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেজন্যই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়নি তার।

বিবিসি অবলম্বনে।
 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank