যেসব সাধারণ অস্ত্র যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো
যেসব সাধারণ অস্ত্র যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো
গ্রিক ফায়ার |
বর্তমান সময়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো হাইপারসনিক মিসাইল তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এসব অস্ত্র যেমন শক্তিশালী, তেমনিভাবে এগুলো তৈরি করতে খরচও হয় প্রচুর। কিন্তু একবার সফলভাবে তৈরি করে ফেলতে পারলে এ অস্ত্রগুলো বিশ্বের ভূরাজনৈতিক আবহ পাল্টে দিতে পারে।
কিন্তু সবসময়েই যে যুগান্তরকারী অস্ত্র মানেই দামী হবে এমন নয়। সামরিক ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে এমন সব অস্ত্র তৈরি করা হয়েছিল যেগুলো পুরো যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অথচ এগুলো ছিল খুবই সাধারণ অস্ত্র, তৈরি করতেও তেমন কোনো খরচ হতো না। আজকে জানা যাক এরকম কিছু অস্ত্র নিয়ে।
ইংলিশ লংবো
প্রায় দুই মিটার দৈর্ঘ্য হতো এই ধনুকের। যত বড় ধনুক, তত শক্তিশালী আঘাত হানার ক্ষমতা। ব্রিটিশরা এই ধনুক ফরাসিদের বিরুদ্ধে আইনকোর্টের যুদ্ধে ব্যবহার করে। ব্রিটিশ সৈন্যসংখ্যা সংখ্যা কম থাকলেও, ধনুকের জোরে ফরাসিদের হটিয়ে দেয় তারা।
এ ধনুক থেকে ছোঁড়া তীর নাইটদের আর্মার ভেদ করতো অনায়াসে। এ ধনুকের রেঞ্জ ছিল ৩০০ মিটারের মতো। তবে ধনুর্বিদ ও তীরের আকৃতির ওপর নির্ভর করতো ঠিক কতদূর পর্যন্ত কার্যকরী শক্তিতে তীর ছোঁড়া যাবে এ ধনুক দিয়ে।
দ্য পাইলাম
এটি মূলত বর্শা। কিন্তু এর তৈরি প্রক্রিয়াকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল যে এটি মোটামুটি সফলতম বর্শা হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে।
সিনেমায় আমরা প্রায় দেখি শত্রুর নিক্ষেপ করা ধাবমান বর্শা তড়িৎবেগে ধরে ফেলে বা মাটি থেকে তুলে নিয়ে তা পুনরায় শত্রুর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে নায়ক। কিন্তু আদতেই বাস্তবে এরকম ঘটনা স্বাভাবিক ছিল। মধ্যযুগের যোদ্ধা যখন বর্শা ছুঁড়তেন, তিনি জানতেন সে বর্শা'র পাল্টা ঘায়ে তারও মৃত্যু হতে পারে।
রোমান সাম্রাজ্য শেষ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান করেছিল। তারা পাইলাম তৈরি করলো। পাইলামের শীর্ষভাগ তুলনামূলক নরম ধাতু দিয়ে তৈরি করা হতো। এর ফলে যখন বর্শাটি লক্ষ্যবস্তুর গায়ে বা মাটিতে আঘাত হানতো, তখন তা আঘাতের ধাক্কায় বাঁকা হয়ে যেত। ফলে সে বর্শা আর পুনরায় নিক্ষেপ করতে পারত না শত্রু।
হলম্যান প্রজেক্টর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আটলান্টিক মহাসাগরে প্রচুর মার্চেন্ট শিপ যাতায়াত করতো, বরং বলা যায় করতে হতো। কারণ ইউরোপে রসদ সরবরাহ করার জন্য আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে হতো। এসব কার্গো জাহাজে কোনো অস্ত্র রাখার ব্যবস্থা ছিল না। কারণ এগুলোতে নাবিক ও রসদের পর আর কোনো ভারী অস্ত্র স্থাপন ও পরিচালনা করার কোনো অবকাশ ছিল না। এদিকে পুরো আটলান্টিক জুড়ে নিয়মিতই জার্মান ইউ বোটের (সাবমেরিন) টর্পেডোর আঘাতে বিস্ফোরিত হতো এ মার্চেন্ট শিপগুলো। এছাড়া আকাশপথে বিমান হামলা তো ছিলই।
এরকম পরিস্থিতিতে হলম্যান নামক একজন নির্মাতা এ প্রজেক্টরটি তৈরি করেন। এটা কাজ করতো মর্টারের মতো, কিন্তু ব্যবহার করতো বাতাস বা বাষ্প। এই প্রজেক্টর দিয়ে আগত বিমানের দিকে গোলা নিক্ষেপ করা হতো। এতে ওই জাহাজগুলো কিছুটা হলেও নিরাপত্তাব্যবস্থা বজায় রাখতে পারতো।
গ্রিক ফায়ার
যারা 'গেইম অব থ্রোনস' দেখেছেন তারা জানেন টিরিয়ন ল্যানিস্টার কীভাবে গ্রিক ফায়ার ব্যবহার করে একাই যুদ্ধজয় করেছিলেন। বাইজেন্টিনরা এটিকে আরও উন্নত অস্ত্র হিসেবে তৈরি করে।
সমুদ্রে নৌযুদ্ধের সময় শত্রু জাহাজের ওপর গ্রিক ফায়ার একবার ছড়াতে পারলেই কেল্লা ফতে, তারপর আর দেখতে হতো না। ওই আগুন নেভানোর কোনো উপায় ছিল না সেসময়। কারণ কথিত আছে গ্রিক ফায়ার পানির ওপরই অনায়াসে জ্বলতে পারতো। তবে গ্রিক ফায়ারের উপাদান, কীভাবে তৈরি করা হতো তার কিছুই ভালোভাবে জানা যায়নি।
ওয়ার হিস্টোরি অনলাইন অবলম্বনে।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?