মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মুঘল স্থাপত্যের প্রাচীন কীর্তি গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ

হাসান মাহমুদ রিপন, সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ)

১৪:০০, ৩০ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১৪:১২, ৩০ অক্টোবর ২০২০

১৯০৮

মুঘল স্থাপত্যের প্রাচীন কীর্তি গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ

মুঘল আমলের বারো ভুইঁয়াদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঈসা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। এখানে বারো ভূইঁয়া প্রধান ঈসা খাঁ ও মুসা খাঁ এবং পূর্ববর্তী স্বাধীন সুলতানরা রাজত্ব করতেন। রাজত্বকালে তারা নির্মাণ করেন মনোরম সব ইমারত, মসজিদ, খানকা ও সমাধি। যার প্রত্যেকটিতেই পরিলক্ষিত হয় মুসলিম ঐতিহ্যগত আরবীয় অলংকরণ।

মুঘল বাঙলার রাজধানী সোনারগাঁও এর পুরাকীর্তিগুলো এখন শুধুই ধ্বংসাবশেষ। পানামা, আমিনপুর, গোয়ালদী, মোগরাপাড়া, দমদমা গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংশাবশেষগুলোই যেনো ক্ষীণ স্বরে জানান দিচ্ছে সোনারগাঁওয়ের গৌরবোজ্জল ও রোমাঞ্চকর ইতিহাসের কথা। 

শত স্থাপনার মধ্যে গোয়ালদীতে এখনও দাঁড়িয়ে আছে মুঘলদের গৌরবময় দিনের সাক্ষী হোসেন শাহী মসজিদ। সোনারগাঁওয়ের দ্বিতীয় উল্লেখ্যযোগ্য প্রাচীনকীর্তি এই মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক অনুপম নিদর্শন।

ইতিহাসে পূর্ব বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওকে হোসেন শাহী আমলকে পরিচয় করে দেয়া হয়েছে স্বর্ণযুগ হিসেবে। কারণ, এ সময়কার আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন এক অনন্য সাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন সুলতান। স্থাপত্যের প্রতি ছিল তার প্রগাঢ় অনুরাগ। তিনি নিমার্ণ করে গেছেন অসংখ্য মনোমুগ্ধকর মসজিদ ও মাদ্রাসা। তার বিস্তৃত রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যেসব মসজিদ নির্মিত হয়, তারমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এই মসজিদ। মসজিদটির মনোরম নির্মাণশৈলী অনায়াসেই দর্শনার্থীদের হৃদয় আকৃষ্ট করে। 

রাজধানী ঢাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার পূর্বে সোনারগাঁওয়ের এক পল্লী গ্রাম গোয়ালদীতে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহীর শাসন আমলে নির্মিত হয় এই মসজিদটি। জানা গেছে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে মোল্লা হিজবার আকবর ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১২ আগষ্ট এ মসজিদ নির্মাণ করেন। সোনারগাঁওয়ে গোয়ালদী গ্রামে মসজিদটি নির্মিত হয় বলে এটির নাম দেওয়া হয় গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ।

কারুকার্যময় মসজিদটি নিমার্ণের পর দীর্ঘদিন দর্শনীয় ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার এক পর্যায়ে সংস্কারের অভাব ভগ্নস্তুপে পরিণত হয়। পরে তা আবার নির্মাণ করা হয়। পুনঃনির্মাণের আগে মেহবার ও দেয়ালের কিছু অংশের অস্তিত্ব ছিল। 

মসজিদটি সম্পর্কে জেমস ওয়াইজ এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে এবং স্যার কালিংহাম ১৮৭৯ সালে সার্ভে অফ ইন্ডিয়া রিপোর্টে বর্ণনা করেছেন। সেই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ আগের মত করে মসজিদটিকে নতুনভাবে নির্মাণ করেছেন। গৌঢ়, পান্ডুয়া বাংলার অন্যান্য ইমারতাদির মতো এই মসজিদের ভেতর ও বাহিরের দেয়ালের পাথর ও ইটে আরবীয় অলংকরণ পরিলক্ষিত হয়। ইট ও পাথরের মূল অলংকরণের কিছু নিদর্শন মসজিদের পশ্চিম দেয়ালের, বিশেষত মিহরাবে লক্ষ্য করা যায়।

মসজিদের মেহরাবের গায়ে ফুল, লতাপাতা আঁকা বিভিন্ন নকশা এবং আরবি লিপির অলঙ্করণ। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি আরও চমৎকার। এটি কালো প্রস্তরে নির্মিত ও কারুকার্য খচিত। মসজিদের আয়তন বাইরের দিকে দৈর্ঘ্য প্রস্থ ২৬ ফুট করে। পলেস্তরা ছাড়াই লাল চিকন ইটের তৈরি বর্গাকার এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির ভেতরের প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ ফুট এবং দেয়ালগুলো ছিল প্রায় পাঁচফুট প্রশস্ত।

দেয়ালের উভয় দিকে ছিল সুন্দর পোড়ামাটির চিত্রফলক, মসজিদের চারকোণায় রয়েছে চারটি গোলাকার মিনার। মিনারগুলো মেঝের সমান্তরাল থেকে ভূমির দিকে কয়েকটি স্তরে ক্রমশ মোটা। দীর্ঘদিনের অযত্নে, মেরামতের অভাবে মসজিদটি গম্বুজের বেশিরভাগ ও উত্তরপূর্ব দক্ষিণ দেয়ালের উপরাংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়।  

জানা গেছে, আশির দশকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ শাহী মসজিদটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। সে সময় মসজিদটির ব্যাপক সংস্কারও করা হয়। এতে ফুল, লতা-পাতা নকশা সংবলিত পোড়ামাটির ফলক স্থাপন করা হয়। যে কারণে মসজিদটির প্রকৃত রূপ অনেকটাই বদলে যায়। মসজিদের গায়ে যেসব মূল্যবান কারুকাজ খচিত পাথরের ফলক ছিল সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতাভুক্তির আগেই চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank