যে রাতে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পৃথিবী
যে রাতে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পৃথিবী
১৯৮৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শেষরাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিউক্লিয়ার ওয়ারফেয়ার বিভাগ আচমকা কতগুলো সিগন্যাল পেতে শুরু করলো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ধেয়ে আসছে নিউক্লিয়ার মিসাইল। সেই রাতের কর্তব্যরত কর্মকর্তা ছিলেন স্ট্যানিস্লাভ পেত্রভ।
সোভিয়েত মিলিটারির প্রটোকল অনুযায়ী এরকম কোনো আক্রমণের ঘটনা ঘটলে নিউক্লিয়ার যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে প্রতি আক্রমণ করতে। পেত্রভের কাজ ছিল সম্ভাব্য আক্রমণের দাপ্তরিক রিপোর্ট তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া।
কিন্তু পেত্রভ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি সেটা করবেন না। বরং তিনি এই মারাত্মক বিপদসংকেতকে ফলস অ্যালার্ম হিসেবে বিবেচনা করলেন।
সেদিন নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এরকম বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই হয়তো পৃথিবীতে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়নি। তার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল। সে তথ্য ওপরের কর্মকর্তাদের পাঠালে পাল্টা নিউক্লিয়ার আক্রমণ করা নিয়ে কেউ ইতস্তত করত না।
বিবিসি রাশিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরনো সেই দিনের কথা বিস্তারিত জানান পেত্রভ। 'সাইরেন বেজে উঠল, আমি সেখানে কয়েক সেকেন্ড ঠায় বসে থাকলাম। চোখের সামনে বড় পর্দাটায় লাল রং-এ লেখা 'লাঞ্চ' শব্দটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ।'
সিস্টেমে দেখানো সব তথ্য অনুযায়ী কোনো সন্দেহ থাকার কথা ছিল না যে আমেরিকা নিউক্লিয়ার হামলা চালিয়েছে। এক মিনিট পরে আবার সাইরেন বেজে উঠল। মানে দ্বিতীয় মিসাইলটি ছোঁড়া হয়েছে। এভাবে পাঁচবার সাইরেন হেঁকে উঠলো।
'আমার যা করতে হতো তা হলো কেবল ফোনটা তুলে নিয়ে শীর্ষ অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করা। কিন্তু আমি নড়তেই পারছিলাম না, মনে হচ্ছিল একটা জ্বলন্ত কড়াইয়ে বসে আছি।'
পেত্রভদের দল ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের আরও একদল স্যাটেলাইট রেডার অপারেটর ছিল যারাও আমেরিকার মিসাইল সিস্টেমের ওপর নজর রাখত। তাদের কাছ থেকে জানা গেল তারা কোনো মার্কিন মিসাইল আক্রমণের ঘটনা জানতে পারেনি। কিন্তু এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ ছিল ডিউটি অফিসার, অর্থাৎ সে রাতে পেত্রভের ওপর।
কিন্তু কেন তিনি তারপরও কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করলেন না?
'সেখানে ২৮ থেকে ২৯টি নিরাপত্তা স্তর ছিল। টার্গেট যখন শনাক্ত করার পর এটাকে এই সবগুলো স্তর অতিক্রম করতে হতো। ওই অবস্থায় আমি নিশ্চিত ছিলাম না এটা সম্ভব কিনা।', জানান পেত্রভ।
তাই সোভিয়েত আর্মির সদরদপ্তরের কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে ফোন করে ঘটনাটিকে সিস্টেমে ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। যদি তার রায় ভুল হতো, তাহলে তার কয়েক মিনিট পরেই সোভিয়েত ইউনিয়নে মার্কিন মিসাইল আঘাত হানত।
আজ এত বছর পরে পুরো ব্যাপারটাকে ৫০-৫০ সম্ভাবনা হিসেবে বর্ণিত করেন পেত্রভ। স্বীকার করেছেন, তিনি কখনো পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না সেটা ফলস অ্যালার্ম ছিল। তবে তার একটিমাত্র সঠিক সিদ্ধান্তের কারণে বেঁচে গিয়েছিল পৃথিবী, নিদেনপক্ষে লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষ।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?