সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

যেবার চাঁদের বুকে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটাতে চেয়েছিল আমেরিকা

সাতরং ডেস্ক

১৬:২৬, ৭ নভেম্বর ২০২১

৬১৮

যেবার চাঁদের বুকে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটাতে চেয়েছিল আমেরিকা

আজকের দিনে এসে মহাকাশ গবেষণায় যে পরিমাণ অগ্রগতি হয়েছে, তার পেছনে ভিন্ন একটি ইতিহাস রয়েছে। সেই ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মহাকাশ অভিযান নিয়ে একপ্রকার প্রতিযোগিতাই চলত। সেই প্রতিযোগিতায় মহাকাশের আশ্চর্য সব নতুন নতুন তথ্য জানার যেমন উন্মাদনা ছিল, তেমনিভাবে দু দেশের শক্তি প্রদর্শনের নিদর্শনেরও একটি জায়গা হয়ে উঠেছিল মহাকাশ।

নাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বা চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর কোনো চিন্তাভাবনার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী এক ভিন্নরকম পরিকল্পনা এঁটেছিল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি নিয়ে। তাদের ইচ্ছে ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি নিউক্লিয়ার বোমা ফাটানোর। এতে করে রাশিয়াকে বড় রকমের তাক লাগানো যাবে, এমনটাই ছিল মার্কিনীদের প্রত্যাশা।

১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমবারের মতো তাদের স্পুটনিক স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠায়। শুরু হয় স্পেস রেস। সোভিয়েতদের এ সাফল্যে আমেরিকা মহাকাশ অভিযানের দৌড়ে খানিক পিছিয়ে যায়। এর এক মাস পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের 'দ্য পিটসবার্গ প্রেস' 'লেটেস্ট রেড রুমার: দে উইল বম মুন' শিরোনামের একটি আর্টিকেলে দাবি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবার চাঁদে হাইড্রোজেন বোমা নিক্ষেপ করবে।

আর্টিকেলটির দাবি অনুযায়ী এ মিশনের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের মিসাইল প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বিশ্ববাসীকে প্রদর্শন করবে: 'সোভিয়েতরা চাচ্ছে এমনভাবে বোমাটি পাঠাতে যাতে এটি চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন পিঠে বিস্ফোরিত হয় এবং পৃথিবী থেকে তার ঝলকানি দেখা যায়।'

এ খবরে নড়েচড়ে বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলমান, তাই কম্যুনিস্ট প্রতিপক্ষের কাছে হারার কোনো প্রশ্নই আসে না। সোভিয়েতদের আগে আমেরিকা চাঁদে নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরণের তোড়জোড় শুরু করে। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয় প্রজেক্ট এ১১৯।

দায়িত্ব পড়ে বিমানবাহিনীর ওপর। লেনার্ড রিফিল নামের একজন বিশেষজ্ঞকে এই মিশনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেওয়া হয়। এই প্রজেক্টে আরও যুক্ত হয় পড়েন জেরার্ড কুইপার ও কার্ল সেগানের মতো বিজ্ঞানীরা।

১৯৫৯ সালের জুলাই মাসে রিফিল ও তার দল এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদনের রায় অনুযায়ী চাঁদের বুকে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটালেও তাতে পৃথিবীর মতো কোনো মাশরুমাকৃতির মেঘ তৈরি হবে না বরং কেবল ধূলার একটা মেঘ দেখা যাবে। যার দ্বারা আমেরিকার শক্তিমত্তা মোটেও ঠিকভাবে প্রদর্শিত হবে না। রিপোর্টটিতে আরও বলা হয় যে, চাঁদে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটালে তাতে আখেরে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।

এছাড়া তখনো যেহেতু চাঁদে প্রাণ আছে কি নেই সেই প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি, তাই জীববিজ্ঞানীরা এ মিশনের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ যদিও চাঁদে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থেকে থাকে, তবে নিউক্লিয়ার বোমা সেগুলোকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেবে। মার্কিন জনগণও এই পরিকল্পনাকে বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে বিবেচনা করেনি। অনেকে মনে করতো এতে করে চাঁদ দু’টুকরো হয়ে পড়বে। এসব কারণে অবশেষে প্রজেক্ট এ১১৯ বাতিল করা হয়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank