বন্যপাখী খাঁচায় পুরে বিক্রি করে তারা!
বন্যপাখী খাঁচায় পুরে বিক্রি করে তারা!
পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও তার তোয়াক্কা করছেন না শিকারিরা। ফাঁদ পেতে বন্যপাখি শিকার করছেন তারা। করছেন খাঁচাবন্দি। তুলছেন হাটে। সেই হাট থেকেই খাঁচাবন্দি পাখিগুলো কিনছেন কেউ কেউ। এরা মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত ক্রেতা।
টিয়া, গাড়োল টিয়া, ঘুঘু, শালিক, বক, পানকৌড়ি ও ওয়াক্কাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এগুলোর মধ্যে প্রতি জোড়া টিয়া পাখি ৮০০ টাকা, ঘুঘু ৪৫০ টাকা, বিভিন্ন প্রজাতির বক জোড়া ৩০০ টাকা। এ ছাড়াও ছোট আকৃতির বিভিন্ন পাখি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা জোড়া দরে।
হাটের নাম লাহিড়ী হাট। ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের এক ঐতিহ্যবাহী হাট এটি। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার বসে। সেখানেই প্রকাশ্য-আমোদে চলে বন্যপাখির বেচা-কেনা।
প্রশাসেনর নজরদারি যে এই হাটে নেই তা নয়। কারণ হাটটি ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আদায় করছে। তবে শুধূ এ হাটেই নয়, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারেই এমন প্রকাশ্যে বন্যপাখি বিক্রি হচ্ছে।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বন্যপাখি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দন্ড। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা, দুই বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে সে আইনে।
আইনকে বৃদ্ধাঙ্গগুলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে হাট-বাজারগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিক্রি করছে পাখি শিকারিরা।
স্থানীয়রা একাধিকবার পাখি বিক্রিতে বাধা দিলেও শিকারিরা কথা শোনেনি, উল্টো পাখি শিকারিদের পক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা স্থানীয় মানুষদের হুমকি দিয়ে আসছেন, এমন অভিযোগও শোনা গেলো।
পাখি নিধন বন্ধ ও হাট-বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পাখিবিক্রি বন্ধে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দরা।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে বন্যপাখি বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এগুলো বন্ধ করার। কিন্তু কেই শোনেনা। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে করে এই পাখি স্বীকার ও বিক্রি যাতে বন্ধ করা হয়।
আবুল কাশেম নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, যেখানে বন্য পশু পাখি বিক্রি করা একবারেই নিষিদ্ধ সেখানে কি করে এসব ব্যবসাযীরা সীমান্ত এলাকা থেকে পাখি ধরে এনে এভাবে খোলা মেলা বাজারে বিক্রি করছে? প্রশাসনের এই বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিত।
বালিয়াডাঙ্গী চাড়োল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার চ্যাটার্জী জানালেন, এরইমধ্যে কয়েকজন পাখি বিক্রেতাকে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মনিটরিং করছি বিষয়গুলো নিয়ে। এরপরেও যদি কেউ পাখি বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পাখিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহী জানান, পাখিরা যাতে আমাদের এখানে নির্ভয়ে থাকতে পারে তার জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বন্য পাখিগুলো এলে এই এলাকার সৌন্দর্য বাড়ে। তাছাড়া এরা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগিতা করে। পাখি ধরে খাঁচায় পুরে বিক্রি করা গর্হিত অপরাধ, বলেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথের সঙ্গেও কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, যখনি শুনি কোথাও পাখি শিকার করা হয়েছে, কিংবা বিক্রি হচ্ছে, তাৎক্ষণিক সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। সেই সাথে পাখি শিকার করা যে অপরাধ সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছি।
প্রশ্ন- তাহলে কী করে চলছে এমন প্রকাশ্য বন্যপাখি বিক্রি?
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?