সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

নতুন পর্যটন স্পট সুনামগঞ্জের লাল শাপলার বিকি বিল

তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ

০১:৩৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

১৫১৮

নতুন পর্যটন স্পট সুনামগঞ্জের লাল শাপলার বিকি বিল

‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল/ বাতাসের আছে কিছু গন্ধ/ রাত্রির গায়ে জ্বলে জোনাকি/ তটিনীর বুকে মৃদু ছন্দ।’ এই গানের দৃশ্যটিই বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাল শাপলার হাওর বিকি বিলে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ও পর্যটনসমৃদ্ধ নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার বিকি বিল এলাকার ঐশ্বর্যে পরিণত হয়েছে। জেলার উত্তরে বিশাল জৈন্তা-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে সুবিন্যস্ত হাওর, নদী, খাল, জনপদ। ধান, মাছ, বনজ ও খনিজ সম্পদের পরিচিতির সাথে পর্যটন স্পটের পরিচিতি এখন যোগ হয়ে এই জেলার উন্নয়নে নতুন স্বপ্নের ডানা মেলছে।

মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে সম্ভাবনাময় লাল শাপলার বিকি বিল এখন নতুন পর্যটন স্পটে রূপ নিয়েছে। দেশের বৃহত্তম টাঙ্গুয়া হাওর, যাদুকাটা নদী, টেকের ঘাটের বারিক্কা টিলা, নীলাদ্রী শহীদ সিরাজ লেক ও জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানের সৌন্দর্যের কথা এত দিন শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল। এখন এসব স্থানের সৌন্দর্যের সাথে টেক্কা দিচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাল শাপলার বিল। 

পুব আকাশে সূর্যের রক্তিম আলোকছটাকেও হার মানায় বিকি বিলের রক্তিম লাল শাপলা। পানির ওপর ফুলে ফুলে সাজানো লালগালিচা। আর দূরে গাঢ় সবুজ পাহাড়। লাল-সবুজে ভরা এমন প্রকৃতির রূপ যে কাউকে পাগল করে তোলে। এ যেন সবুজ পাহাড়ের সাথে লাল শাপলার মিতালি। বিকি বিল যেকোনো পর্যটককে মায়ার ইন্দ্রজালে জড়িয়ে রাখে। শীতের আগমন না ঘটলেও ষড়ঋতুর বাংলাদেশ সেজেছে লাল শাপলায়। এর সাথে রয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির। মনে হয় যেন প্রকৃতি তার রূপের সাথে নিজে বাদ্যযন্ত্রে সুরের ঝরনাধারা ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই এই হাওরে ফুটছে আকর্ষণীয় লাল শাপলা, যা হাওরের আশপাশের পরিবেশ আর গ্রামগুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। বর্ষাকালে হাওরটি পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আর বাকি ছয় মাস এখানে চাষ হয় এক ফসলি বোরো ধান। মাত্র কয়েক মাসের জন্য এখানে শাপলা ফোটে। সূর্যের উপস্থিতি বাড়ার সাথে সাথে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে।

জানা যায়, বিকি বিল হাওরের ১০০ কিয়ারের অধিক (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি নিয়ে এই শাপলার গালিচা। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাপলার উপস্থিতি দেখা যায় এ হাওরে। এখানে জন্মে লাল শাপলার পাশাপাশি সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও। তবে এর মধ্যে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা মূলত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। কাশতাল, বরোখাড়া ও আমবাড়ি গ্রাম বিকি বিলটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। কোনো রকম চাষাবাদ ছাড়াই ১৫-১৬ বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে এই বিলে লাল শাপলা ফুলের বিপুল সমারোহ ঘটে। বছরের ছয় মাস এই বিলে পানি অর ছয় মাসই লাল শাপলার এই অপরূপ দৃশ্য দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারেন। 

তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনিসুল হক বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই বিকি বিলে জন্মেছে লাল শাপলা। গোটা এলাকাজুড়ে এখন লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে শাপলা জন্মালেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদমাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রঙ-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হয়, কোনো এক সাজানো ফুলবাগানের মধ্যে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এ দৃশ্য চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না।

২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এ বিলটিকে পর্যটন স্পট হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, নয়নাভিরাম নীলাদ্রী ডিসি পার্ক, শহীদ সিরাজ লেক, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন হলহলিয়া জমিদার বাড়ির পাশাপাশি লাল শাপলার বিকি বিলটি পর্যটন সম্ভাবনার নতুন মাত্রা যোগ করবে। ভবিষ্যতে এটি পর্যটন আকর্ষণে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। জেলা প্রশাসন বিকি বিলের উন্নয়নসহ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank