বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ || ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের ঘানা, কতোটা জানা?

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৬:১৯, ১৮ অক্টোবর ২০২০

আপডেট: ১৮:৩১, ১৯ অক্টোবর ২০২০

১৫০৪

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের ঘানা, কতোটা জানা?

আফ্রিকা নামটি শুনলেই অনেকের মনে কেবল নেতিবাচক ধারণা আসে। অথচ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাসের বাইরে আরও অনেক কিছু আছে আফ্রিকায় যা আমাদের অনেকেরই অজানা। 

পর্যটকদের কাছে অবশ্য আফ্রিকান সাফারি বেশ জনপ্রিয়। যেখানে উন্মুক্ত মাঠেই দেখা মেলে বাঘ, সিংহের। সাফারি ছাড়াও আফ্রিকায় আছে বোতসোয়ানার মরুদ্যান ও কিলিমাঞ্জোরো পর্বতের মতো নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানও। এতো হলো আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সৌন্দর্যের গল্প। কিন্তু পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ আছে যার অপার সৌন্দর্য্য কাছে টানছে পর্যটকদের।
 
২০১৯ সালে ঘানায় ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১০ লাখেরও বেশি। অথচ ২০০৪ সালে সে সংখ্যা ছিলো মাত্র চার লাখ। আফ্রিকা মহাদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার পর যে সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ঘানার কেন্দ্রিয় ব্যাংকের তথ্যমতে দেশটির বৈদেশিক আয়ের দিক দিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে পর্যটন শিল্প। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর ঘানার নাগরিকদের আন্তরিক ব্যবহারের কারণে পর্যটকদের কাছে দিন দিন কদর বাড়ছে দেশটির। 

এখন জানা যাক কি আছে ঘানায়।

কেপ কোস্ট ক্যাসল

কেপ কোস্ট ক্যাসল ছিল দেশটির উপকূলরেখায় দাস ব্যবসার জন্য ডাচ, পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের নির্মাণ করা একটি দুর্গ। ১৫৫৫ সালে নির্মিত দুর্গটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের একটি। বিশাল সাদা পাথরের এই বিল্ডিংটি দর্শনার্থীদের কালের সাক্ষী করে নেয়। কিছুদূর এগোলেই একদম নিস্তরঙ্গ অন্ধকার। পা বাড়ালেই সে স্থান যেখানে দাসদের একসময় বেঁধে রাখা হত। একদম শেষদিকে সমুদ্র উপকূলে একটি দরজা। যার নাম ‘ডোর অফ নো রিটার্ন’। দাসদের এই রাস্তা দিয়েই জাহাজে নিয়ে যাওয়া হতো বিক্রির জন্য। তাই দরজাটির এমন নামকরণ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামার পূর্বসূরিরা এই দুর্গ থেকে নেওয়া দাস ছিলেন বলে ধারনা করা হয়। 

দুর্গটির মাঝেই বাওবাব ক্যাফে নামে একটি নিরামিষ রেস্তোঁরাও রয়েছে যা সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং জুস সরবরাহ করে। দর্শনার্থীরা সেখানে অবস্থিত কাকুম জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তরেও যেতে পারেন এবং দুলতে পারেন রেইন ফরেস্টের ওপারে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ক্যানোপি ওয়াকওয়েতে।

 

ঘানার স্থানীয় খাবার 

ঘানায় বাওবাব নামের একজাতীয় গাছ আছে যা সাধারনত ঘানাতেই পাওয়া যায়। এই বাওবাব গাছেই বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ ফল হয়। যে ফল মানুষেল ক্লান্তি দূর করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বব্যাপীই সমাদৃত। 
এছাড়াও আরেকটি গাছ আছে যার নাম মোরিঙ্গা। এই গাছের পাতা থেকে চা ও গুড়া তৈরি করা যায় যাতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ভিটামিন আছে। 
ঘানার শীর্ষস্থানীয় খাবার হিসাবে ভুট্টা থেকে তৈরি কেনকি নামক একটি খাবার আছে । বেশিরভাগ স্থানীয় দোকানেই তা বিক্রি হয়। সব পর্যটকের অবশ্যই তা চেখে দেখা উচিত। এছাড়া সেখানে মসৃণ পেস্টে ফেরেন্টেড কর্ন, কাসাভা ময়দা এবং গরম জল মিশিয়ে রান্না করা বাঁকুও খুব জনপ্রিয়।

উপকূল ভ্রমণ

ঘানায় মোট সমুদ্র উপকূলের পরিমাপ প্রায় ৫৬০ কি.মি.। রাজধানী আকরার আশেপাশেই আছে অসংখ্য বিচ। এখানের বিচগুলো কিছুটা ছোট। 
তবে বড় বিচে যেতেও খুব বেশি সময় লাগেনা। আকরা থেকে পূর্বদিকে দুই ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে সমুদ্র ঘেষা কো-সা বিচ রিসোর্ট। রিসোর্টটি পরিচালনা করেন এক ডাচ দম্পতি। যেখানে সকল স্তরের মানুষের জন্য রুমের ব্যবস্থা আছে। আছে সৈকতমুখী স্যুইটও।  
খুব আরাম করেই সেখানে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।  

স্থানীয় কারিগরদের অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম

ঘানার জাতীয় পোশাকের অন্যতম হলো কেন্তে। যদিও পোশাকটি আগে শুধুমাত্র রাজা রানীরাই গায়ে জড়ানোর অধিকার পেতেন তবে এখন তা সবার জন্যই উন্মুক্ত। স্থানীয় আশান্তি প্রজাতির লোকজন প্রধানত এই পেশার সাথে যুক্ত থাকে। কেন্তের সেলাই এবং ডিজাইন এতটাই চমৎকার যে সব পর্যটকই সংগ্রহে রাখতে চায় এমন একটি কাপড়। 

এছাড়াও আদিংক্রা নামে আরেকটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক আছে যার প্রতিটিই আলাদা প্রতীক বহন করে। কেননা কাপড়টিতে কোনো প্রবাদ বা ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনের নকশা আঁকা থাকে। ঘানার পোশাক এখন বিশ্বব্যাপীও বিক্রি হয়। এএকেএস নামক একটি ব্রান্ড আছে যা বিশ্ব দরবারে তাদের পোশাকের সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছে। 

অলাভজনক লজ বা হোস্টেল

ঘানায়ানরা তাদের অলাভজনক আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে সবসময় গর্ব করে। বেশিরভাগ হোটেল আকরা থেকে দু'ঘন্টা বা কিছু সময় বেশির পথ ভোল্টা অঞ্চলে জিতা এবং জিতা-আবেলোমদির পার্বত্য গ্রামগুলির মধ্যে অবস্থিত।

হোটেলগুলো থেকে উপার্জিত অর্থ কোনো ব্যক্তি ভোগ করেনা। বরং তা তরুণ ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জন্য সেলাই এবং হেয়ারড্রেসিং ট্রেনিংয়ের জন্য খরচ হয়। সর্বপ্রথম এক ডাচ নারী এমন হোটেল চালু করেন। পররর্তীতে এমন অনেক হোটেল ঘানার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠে। 
হোটেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘লজ মিট মি দেয়ার’। যেখানে আটজন থাকতে পারবে এমন ছোট রুম সজ্জিত আছে স্থানীয় শিল্পীদের আঁকা বিশাল ছবি দিয়ে। এছাড়া কাঠের ক্রেট সহ রুমের বাইরে একটি বারান্দাও রয়েছে, সেখানে অতিথিরা খাবার খেতে পারেন।
হোটেলটিতে থাকলে স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগও রয়েছে, যা প্রতি শুক্রবার হয় এবং মমিশি নামে একজন নারী যার নেতৃত্ব দেন। 

মোল ন্যাশনাল পার্কে বন্য হাতি দর্শন

পার্কটি ঘানার বৃহত্তম বন্যজীবদের আশ্রয়স্থল। মোল ন্যাশনাল পার্কে আফ্রিকান হাতি, নোলান ওয়ার্থোগ এবং দাগযুক্ত হায়েনাসহ প্রায় ৯৩  প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাস রয়েছে। পার্কে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো দর্শনার্থীরা কোনো বাধা ছাড়াই খোলা বন্য হাতি দেখার সুযোগ পান।

 

লারাবাঙ্গা মসজিদ

৬০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিলো এই লারাবাঙ্গা মসজিদ। শুধুমাত্র ঘানা নয় বরং পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এটি। এই আকর্ষণীয় কালো এবং সাদা অ্যাডোব বিল্ডিংয়ের ভিত্তি ঐশ্বরিকভাবে নির্মিত বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

দর্শনীয় সব স্থান তো আছেই সাথে স্থানীয়দের উষ্ণ অভ্যর্থনায় যে কেউ ফিরে আসতে চাইবেন বারবার। বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে ঘানার ফ্লাইট থাকায় সহজেই ঘানা ভ্রমণ করতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। পাসপোর্টের একটি পাতা খালি থাকলে ৬০ ডলার দিয়ে ভিসা নিয়ে সহজেই ঘুরে আসতে পারবেন ইতিহাস সমৃদ্ধ দেশ ঘানায়।

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank