কাজে গা ছেড়ে দিয়েছে যুবারা, ৯৯৬ এ বন্দি জীবন
কাজে গা ছেড়ে দিয়েছে যুবারা, ৯৯৬ এ বন্দি জীবন
লি জিয়াওমিং যখন হাইস্কুলে ছিলো তার স্বপ্ন ছিলো বড় কোনো শহরে যাবে, উন্নত জীবন পাবে। এখন লি ভাবে তার একটু বিশ্রাম দরকার। লি এখন ২৪। গোটা চীনেই লি'র মতো তরুণ-যুবারা যারা অনেকেই আর নাম প্রকাশ করতে চায় নি, কিন্তু তারাও বলেছে একই কথা। তারাও এখন ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কলেজে ছোটাছুটি আর কাজের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে। আর একবার যদি কাজ মিলেও যায় অব্যহত ইঁদুর দৌড়ে পড়ে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে তারা এখন বিধ্বস্ত। এই যে অবস্থা, একে তরুণরা নিজেরাই নাম দিয়েছে ট্যাং পিং। চীন দেশে কথাটা খুব চলে। ইংরেজিতে যা লাইং ফ্ল্যাট। বাংলা করলে বলতে হবে চিৎপটাং। তবে মূলত তাদের গা ছেড়ে দিয়েছে।
শব্দটা প্রথম শোনা যায় চীনা সার্চ জায়ান্ট বাইডু'র একটি অনলাইন ফোরামে দেওয়া পোস্ট থেকে। সেটা এ বছরের গোড়ার দিকে। সিএনএন'র খবরে বলা হয়েছে পোস্টটি এখন মুছে ফেলা হয়েছে। তবে তাতে লেখক বলেছিলেন, এই যে সনাতনি পারিবারিক মূল্যবোধ ছেড়ে আমরা অ্যাপার্টমেন্ট কালচারে জীবন ধারণ করছি, তারচেয়ে বরং একটা সহজ স্বাভাবিক জীবনই ভালো। এই জীবনে এখন গা ছেড়ে দিয়েছে (লাই ফ্ল্যাট)।
এরপর লাইং ফ্ল্যাট শব্দটা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়লো গোটা চীন জুড়ে। তরুণ যুবারা আকর্ষণীয় কাজের প্রতিযোগিতায় এরই মধ্যে জেরবার, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে কিংবা অন্যান্য সাদা কলারের কাজ পেতে তারা রীতিমতো হয়রান। তাদের সাধারণ কাজে সপ্তাহে যত ঘণ্টা কাজ- তার চেয়ে এই সব কাজে প্রায় দ্বিগুন সময় দিতে হয়।
সেই থেকে লাইং ফ্ল্যাট কথাটি সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ছাড়লো। এক পর্যায়ে এই শব্দে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। এ নিয়ে খবর প্রকাশেও আনা হলো বিধি নিষেধ। মিডিয়াগুলো এমন কনটেন্টে জোর দিলো যেনো তরুণ যুবারা কাজের ফিরতে উৎসাহ বোধ করে।
তবে শুধুই কি চীনে? শব্দটির বিস্তার ঘটলো গোটা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। সেসব দেশেও তরুণ যুবারা এখন কাজে কাজের ভারে জেরবার। তাদের কাছে এটাই মনে হয়, কাজ করে পুরষ্কৃত হচ্ছেন কমই। দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণরা বিয়ে কিংবা বাড়ি কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। জাপানে তরুণরা দেশের ভবিষ্যত নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছে এতে তারা নিজের জন্য কিছু অর্জনেও হয়ে পড়েছে অনাগ্রহী।
"তরুণদের যেনো জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে," বলছিলেন লিম উন-তায়েক। দক্ষিণ কোরিয়ার কিমইয়ুং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, "তারা জানে না, কেনো তাদের এত কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।"
এভাবে তরুণরা যত বেশি হতাশ হয়ে পড়ছে ততই তারা বিয়ে করা বাচ্চা নেওয়া এসবেও অনাগ্রহী হচ্ছে।
এসবই লাইং ফ্ল্যাট'র ইশতেহারে রয়েছে। তারা বলছে- আমি বিয়ে করবো না, বাড়ি কিনবো না কিংবা বাচ্চা নেবো না। আমি নতুন নতুন ব্যাগ কিনবো না, ঘড়ি কিনবো না। কাজে ঢিলা দিয়ে চলবো। আর এই কনজুমারিজম বয়কট করবো।
গ্রুপটি এরই মধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া টুইটারের চীনা ভারসন ওইবো-তে এই গ্রুপের হ্যাশট্যাগটিও সেন্সরের আওতায় আনা হয়ছে।
চীনের তরুণ-যুবা মধ্যে কাজের ক্ষেত্র চাপ বাড়ছেই। চলতে বছরেও দেশটিতে প্রায় ৯১ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায় শেষ করে কাজে ঢোকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর কাজ পেয়ে গেলেই যে হলো তা নয়। সেখানে তাদের পড়তে হচ্ছে আরও ঘোরতর চাপের মুখে। সেখানে ৯৯৬ কালচার চলে। অর্থাৎ সকাল ৯টায় ঢোকো রাত ৯ টায় বের হও। আর সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করো। এই ৯৯৬ এ বন্দি হয়ে পড়ছে তারা। বিষয়টি চীনার উচ্চ আদালতেও উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে শুনানিতে আদালত মত দিয়েছে এই দীর্ঘ কর্মঘণ্টা শ্রমনীতির লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন
জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?