মাদককে বৈধতা দেয়ার পর কি ঘটেছে পর্তুগালে?
মাদককে বৈধতা দেয়ার পর কি ঘটেছে পর্তুগালে?
![]() |
গ্রাফিক্স: গার্ডিয়ান-এর সৌজন্যে |
বিংশ শতাব্দির ৯০ এর দশকেও পর্তগালের অবস্থা ছিলো ভয়াবহ। অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যু এবং মাদকসেবীদের মাঝে এইডস ছড়ানোর দিক দিয়ে সবার উপরে ছিল দেশটির নাম।
এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ১৯৯৭ সালে তৎতালীন পর্তুগীজ সরকার দেশব্যাপী মাদক নির্মুলের কৌশল নির্ধারণে একদল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে। এক বছর আলোচনার পর মাদককে বৈধতা দেযার পরামর্শ দেয় বিশেষজ্ঞ কমিটি।
সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ডা. জোও গৌলাও। সম্প্রতি বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরো পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন এই চিকিৎসক। তার পুরো বক্তব্যটিই তুলে ধরা হলো।
১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত অ্যানতোনিয় স্লাজার নামক এক স্বৈরশাসক পর্তুগাল রাজত্ব করেন। সে সময় স্লাজার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেন। মানুষজনকে অনুগত রাখতে স্কুল ছাড়ার বয়সও কমিয়ে আনেন এই শাসক। তখন দেশটি পুরো বিশ্ব থেকেই একরকম আলাদা ছিল। তাই ১৯৬০ এর দশকে যে বৈশ্বিক পরিবর্তন আসে তার সাথে পরিচিত হতে পারেনি পর্তুগাল। ১৯৭৪ সালে এক সামরিক ক্যু’তে এই স্লাজারের পতনের আগে নিষিদ্ধ ছিল কোকা-কোলা, এমনকি সিগারেট লাইটার বহন করতে প্রয়োজন হতো লাইসেন্স। এই সময়েই দেশটিতে মারিজুয়ানা ও হেরোইনের মতো মাদক বন্যার স্রোতের মতো দেশটিতে ঢুকতে শুরু করে।
গৌলাও জানান, ‘দশ বছরের মাঝেই এত বাজে অবস্থা হয় যে, মাদকের সংশ্লেষ নেই এমন একটি পরিবারও খুঁজে পাওয়া দায় হতো। যদি রাস্তায় কোনো অভিভাবককে জিজ্ঞেস করা হতো আপনার সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তা কি তখন সবার একই উত্তর ছিল, মাদক। স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় দেশে কনোলিয়াল যুদ্ধ চলছিল। চরম দুঃখ-দুর্দশার সময় মাদকের ব্যবহারকে খুব হালকা ভাবে নেয়া হতো।
৯০ এর দশেকে ভয়াবহ অবস্থায় সরকার মাদক সমস্যা সমাধানে কিছু কৌশল নির্ধারণ করে। প্রথমত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মাদক সাপ্লাই কমিয়ে মাদকসেবীদের চিকিৎসা করা হবে মানসিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এবং আইনেও আনা হবে কিছু পরিবর্তন। ১৯৯৮ সালে আমরা আইনের একটি ধারায় সামান্য পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেই। এই সময় সিদ্ধান্ত হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাদক গ্রহণকে অপরাধ না বলে অপকর্ম বলা হবে এবং মাদকসেবীদের সাথে নমনীয় ব্যবহার করা হবে।
২০০১ সালে সে আইন পাশ হয়। যেখানে বলা হয়, মাদকসেবীদের নাম অপরাধ নথিতে রেকর্ড হিসেবে থাকবেনা এবং তার জন্য কাউকে জেলে যেতে হবেনা। আর এটাই গড়ে দেয় পার্থক্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি মাদকসেবীদের সামাজিক দায়িত্ব ও স্বাস্থ্যের প্রয়োজনিয়তা সম্পর্কে সচেতন করে।
২০০৯ সাল নাগাদ আমরা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করি। এসময় মাদকসেবীদের মাঝে এউডস ছড়িয়ে পড়ার হার কমে আসে এবং অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যুও অনেক কমে যায়। সবদিক দিয়েই অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। আমরা ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি নই। কিন্তু মানবিক দিককে সম্মান দিয়ে যেভাবে আমাদের প্রফেশনালরা কাজ করেছে সেটাই পুরো পার্থক্য গড়ে দেয়।’- বলেন গৌলা।

আরও পড়ুন

জনপ্রিয়
- বিড়াল ভয়ংকর!
- আপনি কি একজন এমবিভার্ট?
- মাটি খাওয়া মানুষ
- বিষাক্ত পাতাবাহার গাছ
- বঙ্গবন্ধুর যেসব অনন্য উক্তি জাগিয়ে তোলে প্রাণশক্তি
- নাগলিঙ্গম ফুলের সৌরভে...
- বিশ্বব্যাপী গাছে গাছে জুতা ঝুলানো হয় কেন?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিকদের শেষ চিহ্ন [ভিডিও স্টোরি]
- টাইটানিক ডোবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেন বিজ্ঞানী!
- পটকা মাছ কেন বিষাক্ত?