মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪ || ১১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ || ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ঘুম কম হলে কি মানুষ বুড়িয়ে যায়?

শেখ আনোয়ার

১৬:৫৪, ২ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১৬:৫৬, ২ জুলাই ২০২১

৬৬৪

ঘুম কম হলে কি মানুষ বুড়িয়ে যায়?

যদি প্রশ্ন করা হয়, বেঁচে থাকার জন্য কি প্রযোজন? উত্তরে সবাই নিশ্চয়ই বলবেন খাবার প্রয়োজন। হা, বেঁচে থাকার জন্যই আমরা খাই। কিন্তু জীবনধারণের জন্য খাওয়ার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ আরও কটা জিনিস অত্যাবশ্যক। আর তার একটি হলো ঘুম আর ঘুম। নিদ্রাহীনতা বা ঘুম কম হওয়ার কুফল সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই জানি। মাত্র এক রাত ঘুম কম হলেই আপনার শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে। যথেষ্ট ঘুম না হলে চোখ লাল হয়, গায়ের চামড়ার রঙ নষ্ট হয়। অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও ঘুম কম হলে খিদে কমে যায়। শরীরের ক্লান্তির ছাপ পড়ে। গ্যাস্টিক আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হরমোন ঠিকমতো ক্ষরণ হয় না। ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় ইত্যাদি। কিন্তু আপনি জানেন কি ঘুম কম হলে আপনি অকালে বুড়িয়ে যেতে পারেন? 

সম্প্রতি আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী সে রকম তথ্যই দিয়েছেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বিজ্ঞানী প্রতিদিন আট ঘন্টা করে ঘুমায় এমন ক’জন তরুণ-তরুণীকে চার ঘন্টা কমিয়ে অর্থাৎ নিয়মিত চার ঘন্টা করে ঘুমাতে দেন। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে দেখা যায়, তাদের দেহ স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছে না। শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে হরমোনের নিঃসরণ ঠিকমতো হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞানীরা ওই সব তরুণ প্রজন্মের দেহে বুড়ো হয়ে যাওয়ার এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণ আবিষ্কার করেন। এ অবস্থায় আবার যখন তারা আগের মতো আটঘন্টা ধরে ঘুমাতে শুরু করে তখন তাদের দেহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানুষ অল্প বয়সে বুড়ো হয়ে যেতে পারে। আর পর্যাপ্ত ঘুম বলতে তারা দৈনিক আট ঘন্টা করে ঘুমকেই বুঝিয়েছেন। 

বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যায় করোনা মহামারীর সময়ে ৪৫-৫০ ভাগ মানুষের ঘুম নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। যা থেকে বিষন্নতাসহ নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখন ঘুমের মহামারি চলছে। এর কারণ করোনার জন্য চাকুরী হারানো, লকডাউনে আয় নিয়ে উদ্বেগ, ডিজিটাল প্রযুক্তির নীল আলোর প্রতিক্রিয়া, পারিবারিক সহিংসতা ও কাজের ক্ষেত্রে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া। তবে ঘুম নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোন গবেষণা এখনো হয়নি। তাই দেশের কি পরিমাণ মানুষ অনিদ্রায় ভুগছেন এবং তার কারণ কি সে সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

বিজ্ঞানীরা এর আগে ১৫ জন লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন- মাত্র এক রাত ঘুম না হলেই মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় শুরু হয়। ১৭৪১ জন নারী এবং পুরুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যারা ১০ থেকে ১৪ বছর ধরে ছয় ঘণ্টারও কম ঘুমান তাদের মধ্যে মারাত্মক ধরনের মৃত্যুহার বেশি থাকে। তাছাড়া তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ সহ আরো অনেক রোগের হারও বেশি। তাই প্রতিদিন নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যান। আপনার দেহকে একটি রুটিনে বাধার চেষ্টা করুন। আপনার শিশুর জন্যও একটি রুটিন করে দিন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আপনি একই রুটিন মেনে চলুন। এতে আপনার দেহ ঘড়ি ঠিক থাকবে। সর্বোচ্চ এক ঘন্টা এদিক ওদিক হতেই পারে। ঘুমের এক ঘন্টা আগে কৃত্রিম আলো যেমন কম্পিউটার, টিভি কিংবা স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এসব আলো আপনার দেহ ঘড়িকে জেগে থাকার সংকেত দেয়। ঘুমের আগে ভারী খাবার থেকে সাবধান হোন। রাতের খাবার ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগেই সেরে ফেলুন। আসুন নিয়মিত যথা পরিমাণ ঘুমের অভ্যাস করি। করোনাকালে শরীরকে সুস্থ রাখি। 

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Kabir Steel Re-Rolling Mills (KSRM)
Rocket New Cash Out
Rocket New Cash Out
bKash
Community Bank