যে অফিসে বেতন নির্ধারণ করে সহকর্মীরা
আতিক উল্লাহ
প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ৫ মে ২০২১ বুধবার আপডেট: ০২:৫২ পিএম, ৫ মে ২০২১ বুধবার
১০পাইন্স নামক আর্জেন্টাইন সফটওয়্যার ফার্মে বেতন নির্ধারণ করে সহকর্মীরা।
কর্মচারীদের সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক তৈরিতে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে সফটওয়্যার ফার্ম ১০পাইন্স। আর্জেন্টাইন কোম্পানিটি স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কোন কর্মীর বেতন নির্ধারণে সহকর্মীদের ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে।
বেতন নির্ধারণের জন্য বছরে তিনবার মিটিংয়ে বসে ১০পাইন্স। সেখানে নবিশ কর্মী ছাড়া মালিকপক্ষ ও অন্যান্য কর্মীরা অংশ নেন। বৈঠকে কেউ চাইলে নিজের বেতন বাড়ানোর দাবি উত্থাপন করতে পারেন। তখন প্রকাশ্য বিতর্কের মাধ্যমে বেতনের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়।
বর্তমানে ৮৫ জন কর্মী নিয়ে কাজ করা ১০ পাইন্স আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেসে ২০১০ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্টারবাকস ও বার্গার কিং এর মতো নামকরা কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের জন্য অনলাইন লয়েলটি কার্ড, অ্যাপলিকেশন ও ই-কমার্স প্লাটফর্মও বানায়।
শুধুমাত্র বেতন নির্ধারণ বিষয়টিই নয়, মুনাফার ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি কর্মীবান্ধব। ১০পাইন্সের বাৎসরিক মুনাফার ৫০ শতাংশ কর্মীদের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়।
শুধু বেতনের বিষয়টিই নয়, অন্যান্য বিষয়গুলোতেও কর্মীদের সামনে স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করে ১০পাইন্স। তিন মাসের ট্রায়ালের পর ত্রিমাসিক বৈঠকে বসতে পারেন নতুন কর্মীরাও। সেখানে সম্ভাব্য নতুন ক্লায়েন্ট, ব্যয়, সংস্থার আর্থিক অবস্থা তুলে ধরা হয়। বৈঠকে সবার সুযোগ থাকে মতামত তুলে ধরার।
প্রতিষ্ঠানটিতে সে অর্থে কোন নির্বাহী কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপক নেই। ১০পাইন্সের সিনিয়র কিছু কর্মী আছেন যারা কোম্পানির পার্টনার হয়েছেন তাদেরকে ‘মাস্টার’ বলে ডাকা হয়।
সেরকম এক ‘মাস্টার’ ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা জর্জ সিলভা বলেন, অফিসে কোন বস নেই। বেতন কীভাবে বাড়বে তা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবে আমরা সবার কাছেই ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মতো কর্মীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য দেখতে চাইনা।
তবে অফিসে নতুন যোগদানকারীরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজের বেতন নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এ বিষয়ে আবার একই রকম পারদর্শী কর্মী থেকে মতামত নিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। পুরো প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে তা দেখানোর জন্য নতুনদের শেষ সাক্ষাৎকারে অফিসের সব কর্মীর সাথে দেখা করতে বলা হয়।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ আছে। তবে সিলভা জানান, মানুষটি যত বেশিই দক্ষ ও বুদ্ধিমান হোক দলের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবেনা মনে হলে তাকে নিয়োগ দেয়া হয় না।
সফটওয়্যার ডেভেলপার অ্যাঞ্জেলা টেরা অ্যারেনা বলেন, আমরা ১২ বছর ধরে প্রক্রিয়াটি বিকশিত করেছি। বেতন নির্ধারণের বিষয়টি ৩০ জন কর্মী থাকতে আমরা শুরু করি। ভয় ছিল যে কর্মী ৫০ জন হলে তা কাজ করবে না। তবে আমরা ঠিকই খাপ খাইয়েছি। কর্মীদের বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য কিছু প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে হয়েছে কেবল।
তিনি আরও বলেন, যদি সামনে সংস্থাটি আরও বড় পরিসরে কাজ করে এবং নতুন অফিস নিতে হয় তবে সেখানেও একই প্রক্রিয়া বহাল থাকবে।
নিজেদের এই কর্মপদ্ধতিকে ‘সমাজতন্ত্র’ বলে দাবি করে ১০পাইন্স। ব্রাজিলিয়ান ব্যবসায়ী রিকার্ডো সেমেলার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় তারা। রিকার্ডো তার ‘সেমকো’ নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এভাবে পরিচালনা করতেন। ‘মাভেরিক’ নামক এক বইতে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন রিকার্ডো ।