বেঁচে আছে নিউটনের সেই আপেল গাছ!
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ৪ মে ২০২১ মঙ্গলবার আপডেট: ০১:১২ পিএম, ৪ মে ২০২১ মঙ্গলবার
বাগানে এক আপেল গাছের নিচে বসেছিলেন এক বিজ্ঞানী। হঠাৎ কি হলো! একটা আপেল টুপ করে ঝরে পড়লো বিজ্ঞানীর পায়ের কাছে। স্কুল পড়ুয়া যে কোনো ছাত্র-ছাত্রীর সামনে এটুকু গল্প বললেই হয়েছে। তারা চেঁচিয়ে উঠবে- নিউটন, নিউটন। গল্পটা সবার জানা। বিখ্যাত সেই আবিষ্কার। বিখ্যাত সেই বিজ্ঞানী নিউটন এবং বিখ্যাত নিউটনের সেই আপেল গাছ।
এবার সত্যিই পাওয়া গেছে নিউটনের সেই আপেল গাছ। জানা গেছে গাছটার বেঁচে থাকা ও আপেল ধরার কাহিনী। নতুন করে পাওয়া তথ্য প্রমাণাদি এবং তিন’শ বছরের পুরোনো স্কেচ বলছে, এটাই নিউটনের সেই আপেল গাছ। আজো বেঁচে রয়েছে নিউটনের সেই আপেল গাছ। এখন তার বয়স চার’শ বছর।
বিশ্বাস না হলে চলুন ইংল্যান্ডের লিংকন শায়ারের উইলসথ্রোপ গ্রানথাম ম্যানরে। বিশাল এই চত্বরে দেখতে পাবেন নিউটনের সেই আপেল গাছ। যেখান থেকেই সবকিছুর শুরু। এখানে বসেই নিউটন প্রথম ভেবেছিলেন ম্যাধ্যাকর্ষণ বিষয়ে। টেন্ডিংটন, ইংল্যান্ডের উইলসথ্রোপ গ্রানথাম ম্যানর আঠার’শ থেকে উনিশ’শ তেতালিশ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকাল ছিলো টার্নার পরিবারের সম্পত্তি। এরপর ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি নামে একটা ট্রাস্ট ওই ম্যানরের মালিকানা অধিগ্রহণ করে। এই টার্নার পরিবারের এক প্রবীন সদস্য মেজর হারবার্ট। তিনি ম্যানরের বেশ কিছু দলিলপত্র এবং একটা স্কেচ দেখান ড. কিসিংকে। ১৮৪০ সালে আঁকা স্কেচটা বিখ্যাত সেই আপেল গাছের। ৪০০ বছর আগেকার আপেল গাছের সে পেন্সিল স্কেচ অনুসারে ড. কিসিং খুঁজতে শুরু করেন ঠিক যেখানকার ছবি আঁকা হয়েছে স্কেচে। বিজ্ঞানের এক ইতিহাস সেই আপেল গাছকে ইংরেজি এস বর্ণমালার আকৃতি দিয়েছে। আঠার’শ বিশ সালে প্রচণ্ড এক ঝড়ে প্রায় ধ্বংস হয় গাছটা। গাছের অধিকাংশ ডাল ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যায়। তাও সেই মাধ্যাকর্ষণ বলের কারনেই। কিন্তু ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া গাছের কান্ডটা এস অক্ষরের মত আঁকাবাকা হয়ে যায়। জীবন্ত গাছের এমন এস আকৃতি দেয়া অতো সহজ কাজ নয়। চারপাশের সব দৃৃশ্য মিলিয়ে তিনি নির্ধারণ করেন, ঠিক কোন অংশের ছবি ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে স্কেচে। এভাবেই তিনি গাছটার শনাক্ত স্থানটা চিহ্নিত করেন।
বাস্তবিকই দেখা যায়, সেখানে রয়েছে একটা যথেষ্ট পুরোনো আপেল গাছ। মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায়, সত্যি-সত্যিই নিচে রয়েছে পুরোনো আপেল গাছের একটা কান্ড। দেখা যায়, আপেল গাছের কান্ডের পেন্সিল স্কেচটাও হুবহু এস অক্ষরের মতো বাঁকা। গাছটাও ঠিক তাই। স্কেচের সঙ্গে গাছটা হুবহু মিলে যায়। পরে সেসব অংশবিশেষ পাঠানো হয় বিশ্বের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাটির নিচের সেই কান্ডের অংশ বিশেষের কার্বন পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে আবার গঁজানো হয় আপেল গাছ। আর গাছের গোড়াটা থেকে যায় যথাস্থানেই। তারপর থেকেই পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় নিউটনের আপেল গাছটার ব্যাপারে। যেখানে ছিলো সেই আপেল গাছ। যে গাছটা নিউটনের পায়ের কাছে টুপ করে ফেলে দিয়েছিলো একটা আপেল। আর আপেলটা পড়ার অদৃশ্য রেখা ধরে বিজ্ঞানী নিউটন পৌঁছে গিয়েছিলেন মাধ্যাকর্ষণ তত্তে¡। সেখান থেকেই আবার গঁজিয়েছে গাছটা। সেখান থেকেই জন্মেছে নতুন পাতা, নতুন ডাল, নতুন কুঁড়ি ও আপেল ফুল। নিউটনের আপেল গাছে এখনো প্রচুর আপেল ধরে।
উল্লেখ্য, আপেল গাছ সাধারনত এক’শ বছর কিংবা এর চেয়ে কিছু বেশি দিন বাঁচে। সে হিসেবে চার’শ বছর এ গাছের জন্য দীর্ঘ সময়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক প্রফেসর জন পার্কার এ ব্যাপারে জানান, ‘যদিও গাছটা যথেষ্ট লম্বা সময় ধরে বেঁচে রয়েছে। তবু এটা একেবারে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
নিউটনের আপেল গাছের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মিসেস মনিহান। তিনি বলেন, ‘গত বছর পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উইলসথ্রোপ গ্রানথাম ম্যানরে নিউটনের আপেল গাছ উম্মুক্ত ছিলো। এখন করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে। আপেল গাছটা দেখতে দলে দলে দর্শক আসেন। দর্শকরা অবাক চোখে তাঁকিয়ে থাকেন গাছটার দিকে। বছরে তেত্রিশ হাজার দর্শক হয়। দিন দিন দর্শক বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে যতো মানুষ নিউটনের আপেল গাছ দেখতে আসছে, ততো মানুষের পায়ের শক্ত চাপ গাছের চরিদিকে পড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে গাছের শিকরেও। তাই এখন আপেল গাছের চারিদিকে বেড়া দেয়া হয়েছে। এতে গাছের স্বাস্থ্য যথাযথ সুরক্ষিত থাকতে সহায়ক হয়।’ তিনি জানান, ‘আপেল গাছটা ভবিষ্যতে আরও ৪০০ বছর পর্যন্ত যেনো টিকে থাকে, আগামী প্রজন্ম যেনো নিউটনের আপেল গাছ দেখার সুযোগ পায়, আমরা সবাই মিলে এখন সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।