জো বাইডেন আয়োজিত `ভার্চুয়াল লিডার্স সামিট`
১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল নিশ্চিতের তাগিদসহ প্রধানমন্ত্রীর চার প্রস্তাব
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার আপডেট: ০৮:৫৮ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার
১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল নিশ্চিতের তাগিদ প্রধানমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির মুখে থাকা রাষ্ট্রগুলোর জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল নিশ্চিত করাসহ চার দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে কার্বন নিঃসরণ কমাতে অবিলম্বে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (২২ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে আয়োজিত জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন 'ভার্চুয়াল লিডার্স সামিটে' যোগ দিয়ে এসব প্রস্তাব দেন তিনি।
বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে এই জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন বাইডেন। ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দুদিনব্যাপী জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন। ৪০ জন বিশ্বনেতা এতে অংশ নিচ্ছেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার পর এই আয়োজন অন্যরকম বার্তা বহন করছে।
জলবায়ু ইস্যুগুলো সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা তিনি বলেছেন,'কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের শিখিয়ে গেল যে, শুধুমাত্র শক্তিশালী সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব।'
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম- সিভিএফ এবং ভি-২০ (ভালনারেবল টুয়েন্টি) এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা।
তিনি আরও বলেন, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস বাংলাদেশে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসইভাবে খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি প্রচার করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর এ ব্যাপারে সিওপি এর দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র ও সিভিএফ’র চেয়ার হিসেবে আরও কিছু প্রস্তাব দিতে চাই'।
- প্রস্তাবগুলো-
- ১. বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে তাৎক্ষণিক ও উচ্চাকাঙ্ক্ষি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই প্রশমন প্রক্রিয়ায় দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
- ২. ক্ষতিগ্রস্ত জাতিগুলোর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ নজর দিয়ে বৈশ্বিক তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার নিশ্চিত করতে হবে এবং সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
- ৩. জলবায়ু বিষয়ক অর্থায়নে প্রণোদনা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে মুখ্য অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
- ৪. সবুজ অর্থনীতি এবং কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তিতে দৃষ্টি দেয়ার পাশাপাশি তা জাতিগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বল্প সম্পদের জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হওয়ার পরেও বাংলাদেশ অভিযোজন ও প্রশমনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রতিবছর আমরা জলবায়ু অভিযোজন এবং সহনশীলতা তৈরিতে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যা আমাদের জিডিপির ২.৫ শতাংশ, খরচ করে আসছি।
‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা, যাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি, এতে আমাদের অবস্থা আরও সঙ্গীন করে তুলেছে। বাংলাদেশ এখন কম কার্বন উৎপাদনের পথে হাঁটছে।’
এ সময় জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে মুজিব বর্ষ পালন করছে। সারা দেশে আমরা ৩ কোটি গাছের চারা রোপণ করছি এবং কম কার্বন উৎপাদন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান গ্রহণ করেছি।
যে ৩৯ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের শীর্ষ সম্মেলনে আছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েব এরদোয়ান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। এছাড়াও ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলের ভার্চুয়ালি যোগদানের কথা রয়েছে।