কিটো ডায়েটে মৃত্যু ঝুঁকি, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার আপডেট: ০৪:০২ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার
ছবি: সংগৃহিত
বর্তমানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডায়েট বেশ প্রচলিত একটি বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি কিটো ডায়েটের (ডায়েটের একটি ধরণ) কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে ভারতীয় এক অভিনেত্রীর মৃত্যুতে এই ডায়েটের পদ্ধতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
কিটো ডায়েটের কারণে মারা যাওয়া অভিনেত্রীর নাম মিষ্টি মুখার্জি। কলকাতার মেয়ে হলেও অভিনয় করতেন বলিউডে। ‘ম্যায় কৃষ্ণা হুঁ’, ‘লাইফ কি তো লগ গ্যয়ি’-এর মতো ছবিগুলিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন মিষ্টি। কাজ করেছেন তেলুগু ছবিতেও। ছবিতে ‘আইটেম গার্ল’ হিসেবে কাজ করে জনপ্রিয়তাও পান তিনি।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) রাতে দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরুতে তার মৃত্যু হয়। সেখানে বাবা-মা ও এক ভাইয়ের সাথে বাস করতেন এই অভিনেত্রী । তার মৃত্যু প্রসঙ্গে পরিবারের তরফে একটি শোক বার্তায় বলা হয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন অভিনেত্রী। একটানা কিটো ডায়েটের ফলেই কিডনির সমস্যা দেখা গিয়েছিল তার।
মিষ্টির মৃত্যু কিটো ডায়েটিংয়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন সামনে এনেছে। সামনে এসেছে কেনো মানুষকে ডায়েট প্রসঙ্গে সতর্ক হতে হবে সে বিষয়টিও।
কিটো ডায়েট কী?
এটা মূলত খাবারের একটা রুটিন যার সাহায্যে কার্বোহাইড্রেটকে এড়িয়ে চলা হয়। কিটো ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্বোহাইড্রেটকে পুড়িয়ে ফেলা এবং প্রোটিন খাওয়া। চর্বি পোড়ানো শেষ হয়ে গেলে শরীর জমানো কার্বোহাইড্রেট পোড়ানো শুরু করে, ফলে ওজন কমে যায়। ওজন কমাতেই এই ধরণের ডায়েট গ্রহণ করেন মানুষজন।
সহজ করে এটাকে অনেকে কেডি-ও বলে থাকেন। রক্তে শর্করার এবং ইনসুলিনের মাত্রা ব্যাপক হ্রাস পায় বলে বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়েটটি গ্রহণ করেন।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ রুচি শর্মা অবশ্য উল্লেখ করেছেন, ‘ডায়েটটি প্রাথমিকভাবে বাচ্চাদের মৃগি রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ওজন কমাতে সহায়তা করায় অন্যরাও তা গ্রহণ করা শুরু করেন।’
কিটো ডায়েট কীভাবে কিডনি নষ্ট করতে পারে?
ভারতের বিখ্যাত ফরটিস হামপাতালের পুষ্টিবিদ ডা. প্রদীপ শাহ জানান, মিষ্টি মূখার্জীর ঘটনাটি খুবই দুর্লভ। আগে থেকে কোনো রোগ থাকার পরও কিটো ডায়েট চালিয়ে যাওয়ায় তার কিডনি নষ্ট হয়েছে। কেনোনা কিটো ডায়েটে প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে হয়। যখন কোনও ব্যক্তি এটি করতে থাকে, তখন তা কিডনিতে প্রভাব ফেলে।
আমরা দেখি লোকেরা পনির এবং মাখন দিয়ে কিটো করছে। এটি দীর্ঘ সময় চললে উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়তে পারে; এছাড়াও উচ্চ প্রোটিন কিডনিতে চাপ ফেলতে পারে বলে জানান ড. শাহ।
কিটো ডায়েট বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এই ডায়েট করা উচিত নয়। যদি কেউ তারপরও চালিয়ে যেতে চান তবে অন্তত এক বা দুই মাসের বিরতি নিয়ে তারপর শুরু করা উচিত।
আর কোনো ডায়েট কি অঙ্গহানি ঘটাতে পারে?
ডাঃ শাহ বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা যে কোনও ডায়েট ব্যর্থতার কারণ হতে পারে। এছাড়া এরিটেড ড্রিঙ্কস বা সফট ড্রিঙ্কসের মতো চিনিযুক্ত পানীয়গুলি ঘন ঘন কিডনির ক্ষতি করতে পারে’। শুধু তাই নয়, খাবারের আইটেমগুলি যেভাবে ফ্রিজিং বা মেডিসিনের সাহায্যে সংরক্ষণ করা হয় তাতে ফসফরাস এবং সোডিয়াম থাকে, যা কিডনিতে বাজে প্রভাব ফেলে।
তাই কেটো ডায়েট অনুসরণ না করে, একটি ভাল রুটিনের সাহায্যে কম কার্ব ডায়েট বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থের জন্য ভালো এমন তাজা ফল, শাক-সবজি এবং কম ফ্যাটের দুগ্ধজাত পণ্য গ্রহণ করারও পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।