ভাই-বোনদের সম্পর্ক উন্নয়নে অভিভাবকের করণীয়
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২১ শনিবার আপডেট: ০৫:৫৮ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২১ শনিবার
কিছু কৌশল অবলম্বনে ভাই-বোনদের সম্পর্ক আরও উন্নত করা সম্ভব।
ভাই-বোনদের মাঝে ঝগড়া বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পারিবারিক জীবনে নিত্যদিনের বিষয়। প্রতিদিনই হয়তো কোন না কোন বিষয়ে অভিভাবককে হস্তক্ষেপ করেতে হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে ভাই-বোনের সম্পর্ক আরও উন্নত করা সম্ভব।
করোনায় এখন অনেকেই ঘরে অবস্থান করে সন্তানের সাথে অনেক বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আর এটাই হতে পারে ভাই-বোনদের সম্পর্ক উন্নয়নে অভিভাবকের যত্নবান হওয়ার সেরা সময়।
এ প্রসঙ্গে বোস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনস্তত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক লরি ক্রেমার বলেন, ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া হওয়া সব দেশেরেই সংস্কৃতির অংশ। সেটা অভিভাবকদের খুব স্বাভাবিক হিসেবে নিতে হবে।
এদিকে করোনায় সামাজিক জীবন যাবন এখন অনেকটাই বন্ধ। তাই সন্তানদের উৎসাহ দিতে হবে তার যেনো একে অপরের বন্ধু ও খেলার সাথী হয়। আমাদের অন্যান্য অনেক সম্পর্কের মতো আমরা ভাই-বোন বেছে নেই না।
ক্রেমার বলেন, এমন অবস্থান শিশুরা যদি ভাই-বোনের সাথে চলমান দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে শেখে তাহলে তা বড় হয়ে ওটার পথে অন্যান্য সম্পর্ক রক্ষাতেও কাজে দিবে। দ্বন্দ্ব খুব সহায়ক হতে পারে শিশুর জন্য।
তাহলে দ্বন্দ্ব অবসান করে ভাই-বোনদের সম্পর্ক উন্নয়নে অভিভাবকের করণীয় কী? এ প্রশ্নের উত্তরে মনক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির পারিবারিক বিজ্ঞান ও মানব উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক জোনাথন ক্যাসপি বলেন-
আলাদা করে সময় কাটানো
অভিভাবকদের প্রাথমিক কাজ হবে প্রতি সন্তানের সাথে পৃথক পৃথক সময় কাটানো। এটি বিপরীতমুখী মনে হতে পারে তবে এটাই প্রথম পদক্ষেপ। জেনাথন ক্যাসপি বলেন, যখন আপনি একজনের সাথে আলাদা আলাদা সময় কাটাবেন তখন অন্য কারও সাথে সে সন্তানের প্রতিযোগিতা থাকে না। এ ক্ষেত্রে অন্য কারও সাথে কোন বিষয়ে হেরে যাওয়া বা বিজয়ী হওয়া অনুভূত হয় না।
তিনি আরও বলেন, অভিভাবকের সাথে সন্তানের আলাপকালে ভিন্ন শ্রোতা না থাকায় শিশু মনে মনে অনেক কিছু সংশোধন করতে পারে। তাই তখন তার সাথে সবার একসঙ্গে খেলাধুলো করার প্রশংসা করুন এবং কোন সমস্যা থাকলে সেটাও জানান।
হস্তক্ষেপ না উপেক্ষা?
সন্তানরা ঝগড়া করলে সেখানে হস্তক্ষেপ করবেন নাকি উপেক্ষা করবেন সে বিষয়ে চিন্তিত থাকেন অভিভাবক। কিন্তু ক্যাসপি বলেন, ছোটখাটো ঝগড়া হলে উপেক্ষা করাই ভালো। তবে শারিরীক সহিংস পর্যায়ে যাওয়া উপক্রম হলে তা আগেই থামিয়ে দেয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, ঝগড়ার সময় কেউ কাউকে নেতিবাচক শব্দ যেমন বোকা, মোটা বলে সম্বোধন করলে সাথে সাথে তারজন্য ক্ষমা চাইতে বলুন।
সাধারণত ৮ বছর বয়সের কম শিশুদের মধ্যে বিরোধ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা থাকে না। এমন সময় সমস্য সমাধানের সুবিধার্তে মা-বাবা মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করবেন। অন্যথা শিশুরা হাতাহাতিকে সঠিক কাজ হিসেবে ধরে নিবে।
কী করা যাবে না?
বাচ্চাদের মতবিরোধে অনেক সময় মা-বাবারা আরও বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। তাদের মাঝে সম্পর্ক আরও নষ্ট হয়।
ক্যাসপি বলেন, অভিভাবকরা অনেক সময় ছোট সন্তানের প্রতি নমনীয় হন যা বড়দের আরও রাগিয়ে দেয়। এবং ছোটদের উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। সে জন্য তিনি কখনই ‘তুমি বড়, ভালো আচরণ করো’, ‘তুমি এমন করলেন কীভাবে হবে’ কিংবা ‘সে ছোট, তাকে খেলনাটা দাও’ এমন বাক্য ব্যবহারে নিষেধ করেন।
তিনি আর বলেন, কখনই একজনের সাথে অপরজনের তুলনা করা যাবে না। অন্যজনের সাথে তুলনা করলে সন্তানদের মাঝে প্রতিযোগিতা বাড়ে এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সন্তানদের যে কোন অভিযোগকে গুরুত্বের সাথে নেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। যখন সন্তানরা অভিভাবকের কাছে ন্যায্যতার বিষয়ে কোন অভিযোগ করেন, অনেক সময় মা-বাবা তাতে মনযোগ দেন না। ফলে অভিভাবক-সন্তান সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হয়। পরে অভিভাবকের কথা সন্তান শুনতে চায় না।
ঝগড়া থামাতে কখনই একপাক্ষিক হতেও নিষেধ করেন এই পরিবার বিজ্ঞান ও মানব উন্নয়ন অধ্যাপক।