অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আবারো আলোচনায় মোনালিসা, ক্যামেরায় ধরা পড়ল নতুন তথ্য

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৪২ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার  

মোনালিসা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম কি না, এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে এটি যে সর্বাধিক আলোচিত চিত্রকর্ম, একবাক্যে তা বলা যায়। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ দেখেছেন। 

এই ছবি নিয়ে সবচেয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে, ছবিটি চুরি হয়েছে। আবার উদ্ধারও হয়েছে। মোনালিসা নিয়ে কয়েক শতাব্দী ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিতর্ক চলছে। পৃথিবীর যে কোনো দেশে যে কোনো মানুষকে একটি পেইন্টিংয়ের কথা উল্লেখ করতে বলা হলে, মোনালিসাই হয়ে উঠবে অপ্রতিদ্ব›দ্বী। 

কিন্তু আজ হঠাৎ মোনালিসার কথা কেন? কারণ রেনেসাঁ যুগের কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সেই মাস্টারপিস চিত্রকর্ম 'মোনালিসা'তে গুপ্ত নকশার খোঁজ পেয়েছেন এক বিজ্ঞানী।

গবেষক প্যাসকেল কট ১৫ বছর ধরে চিত্রকর্মটি নিয়ে গবেষণা করছেন। এ নিয়ে ‘জার্নাল অব কালচারাল হেরিটেজে’ একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন তিনি। 

গবেষণার শুরু সেই ২০০৪ সাল। শুরুতে প্যাসকেল  ফ্রান্সের প্যারিসের  লুভর জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি নেন গবেষণার জন্য। আসল মোনালিসা চিত্রকর্মটির ওপর  হাই রেজুলেশল মাল্টিস্পেকট্রাল ক্যামেরার সাহায্যে গবেষণা শুরু করেন। সেই থেকে অন্তহীন কাজ। 

প্যাসকেলের ক্যামেরাটি ছিল লুমিয়ের টেকনোলজির। ১ হাজার ৬৫০টিরও বেশি ফটোগ্রাফিক স্ক্যানের পর, সেগুলোর বিশদ বিশ্লেষণে গুপ্ত নকশার খোঁজ তুলে আনেন প্যাসকেল। অনেকটা হাজারো ঝিনুক খোলার পর একটি মুক্তো পাওয়ার মতো ব্যাপার।

আমরা আগেই জেনেছি, মোনালিসা কিন্তু ক্যানভাসে আঁকা তেলরং ছবি নয়। দা ভিঞ্চি মোনালিসা ৭৭ সেন্টিমিটার ৫৩ সেন্টিমিটার মাপের এই ছবি এঁকেছেন পপলার কাঠের তক্তার ওপর। তখন চিত্রশিল্পে ক্যানভাসের যথেষ্ট ব্যবহার থাকলেও ছোট মাপের কাজের জন্য রেনেসাঁ গুরুদের অনেকেই কাঠের আশ্রয় নিতেন। 
ফটোগ্রাফিক স্ক্যানে প্যাসকেলের কাছে মোনালিসার হেয়ারলাইন ও হাতে কাঠকয়লার সূক্ষ্ম রেখা ধরা পড়ে। ড্রইংয়ের মাধ্যমে একটা সারফেস (স্তর) থেকে আরেক সারফেসে পরিণত করতে এই টেকনিক সাধারণত ব্যবহার করা হয়।

এ থেকে বোঝা যায় ভিঞ্চি সম্ভবত প্রথমে কাঠকয়লা দিয়ে মোনালিসার একটি অবয়ব এঁকেছিলেন। পরে এটি ফুটিয়ে তোলা হয় রঙে। কাঠকয়লার ওই রেখা থেকে গবেষকরা আরেকটি তথ্য নতুন ভাবনার দিশা পেয়েছেন। তারা মনে করছেন মোনালিসার হয়তো একাধিক কপিও তৈরি করেছিলেন ভিঞ্চি।

আরেকটি চমকপ্রদ আবিষ্কার হলো মোনালিসার ডান কপালে একটি হেয়ারপিন রয়েছে। সেই সময়ের ফ্লোরেন্সে এই হেয়ারপিন ফ্যাশনেবল ছিল না। সেক্ষেত্রে এটিও কোনো রূপক অর্থ বহন করতে পারে। 

মোনালিসা আঁকার সময়কাল ১৫০৩ থেকে ১৫০৬। আঁকার শুরুতে ভিঞ্চি ছিলেন ইতালির ফ্লোরেন্সে। তিনি যখন ফ্রান্সে যান, ছবির কাজ থামিয়ে দেননি, চলতে থাকে। শিল্পী প্রয়াত হওয়ার পর রাজা ফ্রাঁসোয়া ছবিটি কেনেন। চতুর্দশ লুই মোনালিসাকে ভার্সাই রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসেন মোনালিসাকে। ফরাসি বিপ্লবের সময় মোনালিসাকে ল্যুভর মিউজিয়ামে আনা হয়। ইতিহাস বলে,এটি কিছু সময় নেপোলিয়নের শোয়ার ঘরেও ছিল।

মোনালিসার পরিচয় নিয়েও নানা তথ্য, নানা মত। অনেক গবেষকের মতে,এটি লেওনার্দোর নিজের মহিলা সংস্করণ। আবার অনেকের মতে, ছবির এই নারীর নাম লিসা ঘিরারদিনি। তিনি ২৪ বছর বয়সী এবং দুই সন্তানের জননী ছিলেন।
মোনালিসার কোনো ভ্রু নেই। গুজব আছে, চিত্রকর্মটি সংরক্ষণের সময় কোনোভাবে ভ্রু মুছে যায়। এছাড়া অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, ভিঞ্চি চিত্রকর্মটির আঁকা শেষ করেননি।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো মোনালিসার রহস্যময় হাসি। আবার কেউ বলেন বিষাদের হাসি, কেউ বলেন আনন্দের। মোনালিসার হাসি নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। নেই মতভেদের অন্তও। তবে এই হাসিতে দ্ব্যর্থহীনভাবে সুখ অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে।