জলবায়ু পরিবর্তনে বন্যার চেয়ে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় শঙ্কা বেশি: ইনসা থিলে আইখ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৭:৫২ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার আপডেট: ০২:২৯ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২১ বুধবার
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে অতি বন্যার পরিমাণ যেমন বাড়ছে একই সাথে কমছে পানির স্তর। গবেষণায় দেখা গেছে অতি বন্যার চেয়ে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় দেশে মানুষের মৃত্যু বেশি হচ্ছে ।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ বিষয়ক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন জার্মান আবহাওয়াবিশারদ ও গবেষক ড. ইনাসা থিলে আইখ। আলোচনাটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ডয়েচে ভেলে বাংলার ফেসবুক পেজে। এবং একই সঙ্গে তা দেখা যায় দ্য ডেইলি স্টারের সাউট, চ্যানেল আই, রেডিও ভূমি ও অপরাজেয়বাংলার ফেসবুক থেকে। ্আলোচনায় ইনসা থিলে ্আইখকে দর্শকের সঙ্গে সংযোগ করান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রোমানা আখতার শান্তা।
ভার্চুয়াল আলোচনায় ড. ইনাসা জানান নিজের “মানব শরীরে জলবায়ু ও আবহাওয়ার প্রভাব, বৈশ্বিক আবহাওয়া ও হাইড্রোলজি এবং তার জন্য দিতে হওয়া চরম মূল্যের বিশ্লেষণ” শীর্ষক পিএইচডি গবেষণার জন্য তিনি দুবার বাংলাদেশে এসেছেন। এসময় তিনি ঢাকাসহ আরও কয়েকটি জায়গায় ভ্রমণ করেন এবং ঢাকার বস্তির মানুষের কথা বলেন।
বাংলাদেশের নদী প্রসঙ্গে ইনাসা জানান, আমাদের জার্মানিতে নদী আছে তবে বাংলাদেশের মতো নয়। এখানের মেঘনা নদী আমার কাছে সাগরের মতো মনে হয়েছে ।
ইনাসা আরও জানান, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এছাড়া ভারত-চীন ও হিমালয়ের অববাহিকা থেকে কয়েকটি নদী আসায় এবং সমৃদ্রপৃষ্ট থেকে কম উচ্চতার হওয়ায় আমাদের অনুমান ছিল বন্যাতে বাংলাদেশের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় পুরো উল্টোচিত্র। ঢাকায় অতি বন্যায় মৃত্যুর চেয়ে পানির স্তর নিচে নামায় এবং পরিস্কার পানির অভাবে মৃত্যু হচ্ছে বেশি।
নিজের গবেষণার সারাংশ তুলে ধরে ইনাসা দেখান কীভাবে ইট-ভাটা, নদীর উপর বাধ এবং পানি নিষ্কাশন সমস্যা পরিবেশ ও মানুষের উপর প্রভাব ফেলছে। নদীর উপর বাধের উদাহরণ দিতে গিয়ে ইনাসা বলেন, ফারাক্কার মতো বাধের কারণে পানি প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, শুষ্ক মৌসুমে পানির সমস্যায় কৃষকরা ভুগছে যাতে শস্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া তা দেশের ইকো সিস্টেম নষ্ট করছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করছে এবং মানুষ শুষ্ক স্থান থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হচ্ছে।
আর ঢাকায় পানির স্তর কমা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে সরাসরি মৃত্যু কম থাকলেও তা প্রতিদিনের পানি পেতে মানুষের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। হতাশা তৈরি করছে, শৈশব নষ্ট করছে।
গবেষণায় জলবায়ুর এমন পরিবর্তনের প্রভাব ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে কীভাবে পড়ছে সেটাও দেখানো হয়। ইনাসা বলেন, পানির স্তর কমায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষের জীবন-জীবিকায় প্রভাব ফেলছে, অবস্থার উন্নতি হচ্ছেনা, রোগ বাড়ছে এবং মারা যাচ্ছে। আর জাতীয় পর্যায়ে ইকোসিস্টেম নষ্ট করছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষ স্থানান্তর করছে।
এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত সে প্রসঙ্গে ইনাসা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবকিছু একটি আরেকটির সাথে এতটাই ঘনিষ্ট যে একটি বিষয়ে কাজ করলে হবে না। এক বিষয়ে কাজ করলে অন্যটিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সবদিক বিবেচনায় জাতীয় পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
২০১৭'র এপ্রিলে ড. থিলে আইখ জার্মান বেসরকারি নভো অভিযান প্রকল্প দাই অ্যাস্ট্রোনটিন এর জন্য নির্বাচিত হন ইনাসা। এবছরই তিনি প্রথম জার্মান নারী হিসেবে যাচ্ছেন নভো অভিযানে।