মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা জলবায়ু পরিবর্তন! আর দেরি নয়
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ১৬ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার আপডেট: ১০:৫৬ এএম, ১৬ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার
জলবায়ূ পরিবর্তন
এমনকি কখনো হয়েছে- আপনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা রাখেন নি? সেটা কি এই জন্য যে আপনি রাখতেই চান নি? নাকি রাখতে ভুলে গিয়েছিলেন? নাকি সে প্রতিশ্রুতি শুধুই ছি দেওয়ার জন্য দেওয়া। রাখার ব্যাপারে আপনি থোরাই পাত্তা দিয়েছেন? বস্তুত আমরা যখন কোনো প্রতিশ্রুতি দেই- কখনো কখনো তা স্রেফ দেওয়ার জন্যই দেই। এমনটাই আকছার ঘটছে। বিষয়টা হতাশার বটে। কিন্তু এখন আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে না রাখাটা আহামরি কিছু বিষয় নয়। রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গিকারকে তো বড় একটা গুরুত্বি দেওয়া হয় না। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে এই প্রতিশ্রুতির খেলাটি খেলা উচিত নয়। কারণ এই খেলা বর্তমানকেই শুধু নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে যখন বলা হয়- ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি, তখন তা মানুষকে স্রেফ বিপন্নতার মুখে ঠেলে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার নামান্তর।
এতকথা আমরা বলছি জলবায়ূ পরিবর্তন নিয়ে। এ বিষয়ে গোটা বিশ্বে এখনও মানুষ, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। এই সঙ্কটের ভয়াবহতার দিকগুলো সম্পর্কে তাদের ধারনা স্পষ্ট করতে পেরেছেন এমন বৈশ্বিক নেতা খুব কমই রয়েছেন। ক্লাইমেট এমার্জেন্সি ডিক্লারেশন অ্যান্ড মোবিলাইজেশন ইন অ্যাকশন (সিইডিএএমআইএ) এর মতে, ১৮৯০ সালে বিশ্ব নেতারা জলবায়ূ নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। তাতে বিভিন্ন নগর শহরের কর্তাব্যক্তিরাও ছিলেন। জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বের ১৪টি দেশ একটি জলবায়ূ জরুরি দশা ঘোষণা করলো। কিন্তু সে তালিকায় নাম উঠলো না জিবাষ্ম জালানি পুড়িয়ে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃস্বরনকারী দুই দেশ- চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের প্রতি এ ছিলো এক চরম প্রতারণা। আর কেবল যে তরুণরাই এমনটা মনে করে তা নয়। এক সাম্প্রতিক মতামত জরিপে বিশ্বের ৫০টি দেশের ১২ লাখ মানুষের মধ্যে ৬৪ শতাংশই মনে করেন, জলবায়ূ পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক জরুরি সঙ্কট। আর মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বিশ্বের বড় বড় নেতারা এ নিয়ে পর্যাপ্তই কাজ করছেন। কিন্তু সাধারণের এই মতামতের কোনো প্রতিফলন কেনো আমরা দেখতে পাইনা আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিগুলোতে?
অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লাইভ হ্যামিলটনের এ বিষয়ক একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার নামে জলবায়ূ সংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক আন্দোলন প্ল্যাটফর্মে এ সংক্রান্ত রচনায় তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এই জলবায়ূ জরুরিদশা ঘোষণা করে সরকারসমূহ তাদের নিজেদের জন্যই ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছেন। কারণ এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্রেফ প্রতীকী হিসেবে জরুরি ঘোষণা দিলেই চলবে না, এর সাথে থাকে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগও থাকা চাই। কিন্তু তা সামান্যই রয়েছে।
করোনা ভাইরাস অতিমারি আমাদের বুঝিয়ে দিলো, আমরা যা কিছু করছি তা এভাবে করে যেতে পারি না। বিশেষ করে আমরা যদি এই জলবায়ূ পরিবর্তনকে সফলভাবে কমিয়ে আনতে না পারি তাহলে বৃহত্তর বিপর্যয়ই আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। সুতরাং এই অতিমারি কাটিয়ে উঠলে আমাদের অগ্রাধিকারে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। মুনাফার চেয়ে ধরিত্রীর মানুষগুলোকে নিয়েই আমাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভাবতে হবে। আমাদের অর্থনীতি ও সামাজির প্রক্রিয়া গুলোকে ফিরিয়ে আনতে প্রক্রিয়াগত পরিবর্তনই দরকার হয়ে পড়বে। আর গোটা ক'বছর দেখবো সে সময় আর আমাদের হাতে নেই। আজ আমরা যে ব্যবস্থা নিচ্ছি, তাই হবে আগামী দশকগুলো আমাদের সিদ্ধান্ত কি হবে তার ভিত্তি। একটি সবুজ পুনরুদ্ধারের সুযোগকে আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারিনা। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এখনকার বিশ্ব নেতাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের উচিত হবে না, তাদের অকর্মন্যতাগুলোকে অবিরত ন্যায়নুগ বলে চালিয়ে দেওয়া। হ্যামিলটন যাকে বলছিলেন- মানব ইতিহাসে এর চেয়ে বড় নৈতিক ব্যর্থতা আর নেই। সুতরাং জলবায়ূ সঙ্কটের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে এই অতিমারির মধ্যেই নিতে হবে জরুরি উদ্যোগগুলো।
এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতে #আরনয়ফাঁকাবুলি #NoMoreEmptyPromises ক্যাম্পেইন হাতে নিয়েছে ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার। আগামী ১৯ মার্চ এই কর্মসূচি পালন করা হবে। গোটা বিশ্বের তরুণ-যুবারা দ্রুত ক্লাইকেট অ্যাকশনের দাবিতে দাঁড়াবে। তাদের দাবিসমূহের মধ্যে থাকবে-
- নতুন জীবাষ্ম জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করা
- জীবাষ্ম জ্বালানি শিল্পে সকল বিনিয়োগ বন্ধ করা
- জলবায়ূ খাতে বার্ষিক বাধ্যতামূলক বাজেট নিশ্চিত করা
- জলবায়ূ নীতিতে অর্থনৈতিক, বর্ণ ও লিঙ্গগত সুবিচার নিশ্চিত করা এবং
- জেনেবুঝে পরিবেশ দুষণকে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা
সরকারগুলো জীবাষ্ম জ্বালানি কমিয়ে আনার স্রেফ প্রতিশ্রুতিই দিয়ে চলেছে কিন্তু আজও আমরা তা অর্জনে কোন বিস্তারিত, সমন্বিত উদ্যোগ দেখতে পাইনি। সুতরাং আমরা আর বসে থাকতে পারি না। বিশ্ব নেতারা যখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের বলছেন, তারাও উদ্বিগ্ন, কিন্তু তারা এমন কিছু জলবায়ূ লক্ষমাত্রার সঙ্গে আপোস করছে যা বস্তুত তাদের সেই সব প্রতিশ্রুতির ধারে কাছেও নেই। আর যতটুকু লক্ষ্য নির্ধারণ করছেন সেটুকুও তারা পূরণ করছেন না।
কিন্তু আমরা যদি এবারও বড় কোনো অগ্রগতি নিশ্চিত করতে না পারি, আমরা গভীরতর সঙ্কটেই পড়বো। তাতে আমরা এমন দশায় গিয়ে পৌঁছুবো যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো পথ থাকবে না, যদি কিনা এরই মধ্যে আমরা সে দশায় পৌঁছে যেয়ে না থাকি।