অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

স্মরণশক্তি কখন কমতে থাকে?

শেখ আনোয়ার

প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ১২ মার্চ ২০২১ শুক্রবার   আপডেট: ১১:১৭ এএম, ১২ মার্চ ২০২১ শুক্রবার

স্মরণশক্তি কখন কমতে থাকে?

স্মরণশক্তি কখন কমতে থাকে?

মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানান সমস্যা বাসা বাঁধে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্মরণশক্তি কমে যাওয়া। প্রশ্ন উঠে, স্মরণশক্তি কমতে থাকে মোটামুটি কতো বছর থেকে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞানীরা ইতোপূর্বে যেসব তথ্য দিয়েছিলেন, ডিজিটাল যুগে এসে তা পরিবর্তিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন মোটামুটি একচল্লিশ বছর থেকে স্মরণশক্তি কমতে থাকে। আর পঞ্চাশের কাছাকাছি এসে মানুষ যখন প্রিয়জনের নাম মনে করতে পারে না তখন স্মৃতিভ্রম বা আলঝেইমারস নামক সমস্যা হয়।

অবশ্য ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্বদ্যিালয়ের গবেষণায় প্রমাণ হয়েছিলো, মানুষের (পুরুষ বা মহিলা) বয়স যখন পঁয়তাল্লিশ বছর পার হয়ে যায় তখন ওয়ার্কিং মেমোরি বা কর্মক্ষম স্মৃতি শক্তি কমতে শুরু করে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বিস্তৃত ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছিলেন, বয়স পঁয়তাল্লিশ বছরের বেশি হলে মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা এতোটাই কমতে শুরু করে যে, ওই বয়সে এসেই মানুষ নানা কিছু ভুলতে থাকে। যেমন কোনো স্মরণ সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে পঞ্চাশোর্ধ বক্তারা বারবার ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন। ঠিক সময়ে ঠিক কথাটি মনে করতে পারেন না। হারিয়ে ফেলেন অনেক স্মৃতিকথা। 

কিন্তু অতি সম্প্রতি এ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানী টিমোথি। এই বিজ্ঞানীর ভাষায় বাইশ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের স্মরণশক্তি অটুট অবস্থায় থাকে। বাইশ এর কোটায় সর্বোচ্চ মাত্রায় স্মরণশক্তি থাকলেও এরপরই ধীরে ধীরে স্মরণশক্তির প্রখরতা কমতে থাকে। সাতাশ বছরে এর মাত্রা আরও বাড়তে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর টিমোথি সালথাউস আঠেরো থেকে ষাট বছর বয়সী দু’হাজার লোকের ওপর সাত বছর সমীক্ষা চালান। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে নিউরোবায়োলজি অব অ্যাজিং নামক এক জার্নালে একটি নিবন্ধ রচনা করেন। তাতে তিনি বাইশ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের স্মরণশক্তি অটুট থাকার কথা উল্লেখ করেন। অবশ্য এর আগে স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন বয়সের মানুষকে তিনি পাজল গেম খেলতে দেন। কাউকে কাউকে তিনি গল্প শুনিয়ে গল্পের বিষয়বস্তুর ভেতর থেকে তাৎক্ষণিক কিছু প্রশ্ন করেন। তাতে দেখা যায়, বাইশ বছর বয়সী স্বেচ্চাসেবীদের প্রতি বারোজনের মধ্যে গড়ে নয় জন স্মরণশক্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। সাতাশ বছর বয়সীরা হঠাৎ করেই তুলনামূলক খারাপ করেছেন পরীক্ষায়। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, বিশ বছর বয়সের পরেই ধীরে ধীরে মানুষের স্মরণশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। যুক্তরাজ্যের আলঝেইমারস রিসার্চ ট্রাস্টের বিশেষজ্ঞ রেবেকাউড স্বীকার করেন যে, বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মাঝামাঝি বয়সেই মানসিক অবস্থার সবচেয়ে ভাল অবস্থান। অবশ্য আলঝেইমারস এর মতো মতিভ্রম রোগও কারো কারো হতে পারে এ সময়ে। তার ভাষায় আলঝেইমারস শুধু বৃদ্ধ বয়সের রোগই নয়। এটি একটি শারীরিক সমস্যা। ব্রেইন বা মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হলেই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। যুক্তরাজ্যে পঁয়ষট্রি বছরের নীচে বয়স এমন হাজার হাজার লোক আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত। মতিভ্রম রোগাক্রান্ত লোকের সংখা সাত লাখ।

তবে বিজ্ঞানীরা এটাও বলেছেন, মস্তিষ্ককে সজিব রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, মন প্রফুল্ল রাখার জন্য প্রার্থনা, কর্মক্ষেত্রে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুর মতো সম্পর্ক এবং নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কাজ না করে মস্তিষ্ককে প্রয়োজন মতো বিশ্রাম দিলে বয়স বাড়লেও স্মরণশক্তি অটুট রাখা সম্ভব।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।